বাজির ধোঁয়ায় কালীপুজো ও তার পর দিন দেওয়ালিতে বায়ু দূষণ বাড়ে দ্বিগুণ-তিন গুণ। কলকাতা ও আশপাশের বাতাসের অবস্থা নিয়ে খাস পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য এই কথা বলছে। তার পরেও বাতাসের সেই বিষ নিয়ন্ত্রণের কোনও উদ্যোগ রাজ্য সরকারের তরফে নেই।
তবে গত দু’দশক ধরে শুধু শব্দবাজির বিরুদ্ধে প্রচার চালালেও শনিবার, কালীপুজোর চার দিন আগে প্রথম বার আলোর বাজির বিপদের কথা জানিয়ে এর থেকে দূরে থাকতে বলল পর্ষদ। এর পটভূমিকায় রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে দিল্লিতে সব রকম বাজি বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়া।
এ দিন বিভিন্ন কমিশনারেটের পুলিশকর্তা ও আবাসনের পরিচালন কমিটির কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র আবেদন করেন— বাতাস বিষিয়ে দেয়, এমন বাজি ব্যবহার থেকে সবাই দূরে থাকুন ও তা নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলুন। এবং পর্ষদের নথিতেই এর ইঙ্গিত।
বাতাসের গুণমানের দুই প্রধান নির্ধারক ভাসমান সূক্ষ্ম কণা (পিএম ১০) ও অতি সূক্ষ্ম কণার (পিএম ২.৫) মাত্রা। পিএম ১০-এর ক্ষেত্রে সহনশীল মাত্রা প্রতি ঘন মিটারে ১০০ মাইক্রোগ্রাম আর পিএম ২.৫-এর বেলায় ৬০ মাইক্রোগ্রাম।
গত বছর কালীপুজোর পাঁচ দিন আগে, ২৪ অক্টোবর পিএম ১০ ছিল ১৬৬, পিএম ২.৫ ছিল ৮৮ মাইক্রোগ্রাম। আর কালীপুজোর দিন, ২৯ অক্টোবর পিএম ১০ হয় ২০২, পিএম ২.৫ হয় ১৩০। ৩০ অক্টোবর, দেওয়ালিতে ওই দু’টি যথাক্রমে দাঁড়ায় ২৩৯ ও ১৫১ মাইক্রোগ্রামে।
২০১৫-তে অবস্থা ছিল আরও খারাপ। সে বার কালীপুজোর পাঁচ দিন আগে, ৫ নভেম্বর পিএম ১০ ও পিএম ২.৫ যথাক্রমে ছিল ১০৮ ও ৫৭.৫। কালীপুজোর দিন, ১০ নভেম্বর দু’টো উপাদান যথাক্রমে বেড়ে হয় ২০১ ও ১৪৬। পর দিন, দেওয়ালিতে ওই দু’টো বেড়ে যথাক্রমে ৩২০ ও ১৯৩.৫ হয়েছিল। কিন্তু বাজির ধোঁয়া জনিত দূষণ নিয়ন্ত্রণে নির্দেশিকা বা বিজ্ঞপ্তি জারির কথা পর্ষদ ভাবছে না। চেয়ারম্যানের কথায়, ‘‘নয়া নির্দেশিকা জারির আইনি ক্ষমতা পর্ষদের নেই।’’
পর্ষদের অবসরপ্রাপ্ত মুখ্য আইন আধিকারিক বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘যে কোনও বাজি পোড়ালে দূষণ হয়। বাজি পোড়ানোর সময়সীমা সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বেঁধে দেওয়া উচিত ছিল পর্ষদের।’’ তা ছাড়া, দু’দশক ধরে আদালতের সমর্থনপুষ্ট সরকারি নির্দেশে শব্দবাজি এই রাজ্যে নিষিদ্ধ হলেও তার তৈরি, বিক্রি ও ব্যবহার থামেনি। সেখানে শুধু প্রচার ও আবেদন করে অন্য সব বাজি ঠেকানো যাবে কী ভাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
বিশেষজ্ঞদের মত, আলোর বাজি যত রংচঙে হয়েছে, দূষণ তত বেড়েছে। কারণ, তার মধ্যে ধাতব পদার্থ ও রাসায়নিকের পরিমাণ দু’টোই বেড়েছে।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বায়ু গবেষণা ও বায়ুর মান বিভাগের প্রধান দীপঙ্কর সাহা বলেন, ‘‘বাজিতে ধাতব পদার্থ থাকে। যা পোড়ার পরে বাতাসে মিশে শরীরের ভিতর প্রবেশ করে শ্বাসযন্ত্রের ক্ষতি করে। ক্ষতিকর কণাগুলি স্থায়ী ভাবে শরীরে ঢুকে যায়। যে বাজি যত উজ্জ্বল, সেই বাজিতে তত বেশি ক্ষতি।’’
বক্ষরোগ চিকিৎসক পার্থসারথি ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘কালীপুজো ও দেওয়ালিতে বাজি পুড়িয়ে বহু মানুষ হাঁপানির টান, শ্বাসকষ্ট নিয়ে দেখাতে আসেন। এমন নয় যে, তাঁরা শিক্ষিত নন। আসলে তাঁরা সচেতন নন।’’
পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘আদালত নির্দেশ না দিলে কিছু হবে না। দেশে সব ধরনের বাজি নিষিদ্ধ করতে চেয়ে আমার আবেদন মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে জমা পড়ার কথা।’’