প্রতীকী ছবি।
মেয়েদের বিয়ের জন্য এককালীন ২৫ হাজার টাকা দেবে সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে সেই প্রকল্পের নাম দিয়েছেন ‘রূপশ্রী’। মেয়ের বয়স ১৮ বছর পেরোলেই বাবা-মায়েরা সেই টাকা পেতে পারেন। কিন্তু সেই টাকা পাওয়ার পদ্ধতি কতটা সুরক্ষিত, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়েই। সবে এক মাস হল, প্রকল্পে টাকা দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। তবে যে পদ্ধতিতে তা করা হচ্ছে, তাতে ‘অসাধু’ পথে ওই টাকা বেরিয়ে যাওয়ার মতো নানা ফাঁকও থেকে গিয়েছে বলে ধারণা দফতরের কারও কারও। অর্থ দফতরের এক আধিকারিক জানান, মেয়েদের সামাজিক ও আইনি সুরক্ষা দিতে মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রকল্প অবশ্যই দৃষ্টান্তমূলক। তবে তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও আইনি মোড়ক দরকার।
প্রকল্পে টাকা পাওয়ার যোগ্যতা কী? সরকারের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, যাঁর বিয়ের জন্য টাকা দেওয়া হবে, সেই তরুণীর বয়স অবশ্যই ১৮ বছরের বেশি হতে হবে। দুই, পরিবারের বার্ষিক আয় দেড় লক্ষ টাকার মধ্যে থাকতে হবে। যা লিখে জানিয়ে দেবেন ওই পরিবারেরই অভিভাবক, কোনও সরকারি গেজেটেড অফিসার নন। আবেদনপত্রের সঙ্গে কী লাগবে? তাতে বলা হয়েছে, বিয়ে যে হচ্ছে, তার প্রমাণ হিসেবে বিয়ের ছাপানো কার্ড দিতে হবে। তা সমর্থনে এলাকার পাঁচ জনের স্বাক্ষরও জরুরি। তা পরখ করে দেখে নেবেন এলাকার জনপ্রতিনিধি বা সরকারের প্রতিনিধি। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই তোড়জোর শুরু হয়ে গিয়েছে গ্রাম থেকে শহর, সবর্ত্রই। ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে ওই প্রকল্পের জন্য। কিন্তু মেয়ের বিয়ের জন্য টাকা দেওয়ার এমন ব্যবস্থায় সত্যতা কতটা থাকবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে।
সরকারি অফিসারদের কেউ কেউ মনে করছেন, আবেদনকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকলেই ‘অসাধু’ পথে ওই টাকা পাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যেতে পারে। কী ভাবে?
তাঁদের কথায়, ছাপানো বিয়ের কার্ড এবং পাঁচ জনের স্বাক্ষর তো অনেকেই করতে পারেন। ভোটের রাজনীতিতে এটা তেমন কোনও কঠিন কাজ নয়। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এমনটা যে আকচার হচ্ছে, তা অনেকেই জানেন। ফলে বয়স এবং পারিবারিক আয় সংক্রান্ত অসত্য নথি জমা দিয়ে টাকা তুলে নেওয়া হতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের। কারও কারও বক্তব্য, একটি বিয়ের কার্ড নিয়ে আসা কঠিন কাজ নয়। তা দিয়ে কখনওই প্রমাণ হয় না যে সত্যিই এক জন প্রাপ্তবয়স্কা তরুণীর বিয়ের জন্যই ‘রূপশ্রী’র টাকা ব্যবহার করা হবে। এ নিয়ে রাজ্যের সমাজকল্যাণ, শিশু ও নারী উন্নয়নমন্ত্রী শশী পাঁজাকেও প্রশ্ন করা হয়েছিল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটা একটা ভাল প্রকল্প। মানুষের উপরে ভরসা করেই টাকা পাওয়ার ব্যবস্থা সরল রাখা হয়েছে। দু’-এক জন সুবিধার অপব্যবহার করতে পারেন ভেবে বাকিদের তো আর বঞ্চিত করা যায় না।’’ ওই প্রল্পের কাজে জড়িত অনেকেরই মত, রেজিস্ট্রি বিয়ে করলে তবেই যদি টাকাটা দেওয়া হয়, তবে আরও কিছুটা কাজের হয় ‘রূপশ্রী’। বিয়েটা অন্তত নিশ্চিত হয় সে ভাবে। এ বিষয়ে শশীদেবীর জবাব, ‘‘আমাদের রাজ্যে অনেক ধর্মের, মতের মানুষ বাস করেন। রেজিস্ট্রি বিয়ে নিয়ে কারও নিজস্ব নিয়মকানুন থাকতেই পারে। সব দিক ভেবেই মুখ্যমন্ত্রী ওই প্রকল্প করেছেন।’’ তাই ওই প্রকল্পের সুবিধা পেতে রেজিস্ট্রি বিয়ে বাধ্যতামূলক করা হয়নি। তবে তাঁর বক্তব্য, রেজিস্ট্রি বিয়ে নিয়ে মেয়ের অভিভাবক সজাগ হলে তা মুখ্যমন্ত্রীর গোচরেও যাবে। তিনি জানান, গত ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যে ২২১৪৯টি আবেদন জমা পড়েছে। তার মধ্যে ১৩৩৫৪টি পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭২৭২ জন তরুণীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২৫ হাজার টাকা করে আর্থিক অনুদান জমা দেওয়া হয়েছে। মোট টাকার পরিমাণ ১৮ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা।