রক্তাক্ত: মনোনয়নপত্র তুলতে এসে প্রহৃত এক বিজেপি কর্মী। মঙ্গলবার ডোমকলে। ছবি: সফিউল্লা ইসলাম
পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন জমা দেওয়ার দ্বিতীয় দিনে আরও বাড়ল অশান্তি। উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলা থেকেই অভিযোগ, বিরোধীদের ঠেকানোর জন্য শাসক দলের বাহিনী বিডিও দফতরের ভিতরেই মনোনয়নপত্র ছিঁড়ে ফেলে দিচ্ছে! মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়া এবং ফেরার পথে চলছে বেধড়ক মার। কোথাও কলার ধরে বার করে দেওয়া হচ্ছে বিরোধী দলের প্রতিনিধিকে। এমনকী, রেহাই পাচ্ছেন না বিরোধী দলের অন্তঃসত্ত্বা কর্মীও।
কোচবিহার, মালদহ, পশ্চিম মেদিনীপুর, হুগলি, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান বা দক্ষিণ ২৪ পরগনা— একের পর এক জেলায় মঙ্গলবার দিনভর মনোনয়ন-পর্ব ঘিরে হাঙ্গামায় বেশি আক্রান্ত হয়েছেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। সিউড়িতে পুলিশ সুপারের দফতরের অদূরেই ছুরিকাহত হয়েছেন বীরভূম জেলা বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কালোসোনা মণ্ডল। নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের দক্ষিণ রুক্মিণীপুর গ্রামে অন্তঃসত্ত্বা বিজেপি কর্মী ও তাঁর শাশুড়িকে মারধর করার অভিযোগ এসেছে। কোথাও লাঠি, কোথাও কাঁচি নিয়ে খড়গপুর-২, আরামবাগ, ডোমকল, কান্দি, কাটোয়া, মন্তেশ্বর, ভাঙড় বা বজবজের মতো নানা এলাকাতেই বিজেপির উপরে হামলা হয়েছে। সব ক্ষেত্রেই অভিযোগের তির তৃণমূলের দিকে।
তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে! এ বারের ভোট প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রথম প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে কালিয়াচকে এবং তা তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে। শাসক দলের দুই শিবিরের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে মানিকচকে। অন্তর্দ্বন্দ্ব সামলাতে পুলিশের লাঠি চলেছে ভাঙড়-২ ব্লকে।
আরও পড়ুন:
মনোনয়নে অস্ত্রের খোঁচা, জখম বিজেপি নেতা
প্রতিরোধ জোট বেঁধে, সঙ্কেত বিরোধী ঘরে
মার খেয়ে পাল্টা মারের ঘটনাও শুরু হয়েছে। বাঁকু়ড়ার ওন্দা এবং বীরভূমের ময়ূরেশ্বর, মল্লারপুরে মনোনয়ন জমা দিতে গিয়ে তৃণমূলের হাতে আক্রান্ত হয়ে পাল্টা মারমুখী হয়েছেন বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা। সন্ত্রাসের বিররণ দিতে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠীর সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ‘‘আমরা পড়ে পড়ে মার খাব না। পাল্টা মার শুরু হয়েছে। ওটা আরও বাড়বে!’’ সেই সঙ্গেই তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, যে সব বিজেপি প্রার্থী দু’দিন ধরে মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি, তাঁদের আজ, বুধবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দফতরে নিয়ে আসা হবে।
যার রেশ ধরে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বিজেপির সভাপতি বলছেন, আমরাও মারতে শুরু করব! তাঁরা গণতান্ত্রিক উপায়ে বিশ্বাস রাখছেন না।’’ কিন্তু তাঁরা কি গণতন্ত্রে বিশ্বাস রাখছেন? তাঁদের বিরুদ্ধে তো এত অভিযোগ? পার্থবাবুর জবাব, ‘‘অভিযোগ থাকলে রাজ্য নির্বাচন কমিশন দেখবে। বিরোধীদের কোনও কর্মসূচি নেই। তাই দর্শকদের কাছে এ সব বলছে! ’’
কংগ্রেস এবং বামেদের মতো এ দিন বিজেপির নেতারা কমিশন ও রাজভবনের দ্বারস্থ হয়েছেন। কমিশনারের সঙ্গে এ দিনই দেখা করতে গিয়েছিলেন বিজেপির মুকুল রায়, শমীক ভট্টাচার্যেরা। মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সভাপতি আবু তাহের এবং ঋজু ঘোষালও গিয়েছিলেন কমিশনে। সন্ধ্যায় অভিযোগ জানাতে গিয়েছিল বাম প্রতিনিধিদলও।
হামলার মুখে মূলত বিজেপি থাকলেও মুর্শিদাবাদে কংগ্রেস ও বাম কার্যালয় ভাঙচুর হয়েছে। কোচবিহারে এসইউসি-র মহিলা প্রার্থীকে মারধর ও নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে। সিপিআই (এম-এল) লিবারেশন কর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন হুগলিতে।