দুমড়েমুচড়ে: কালবৈশাখীর তাণ্ডবের পরে। বুধবার সল্টলেকে। ছবি: শৌভিক দে
সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১৬ কিলোমিটার! ২০১৩ সালের ১৭ এপ্রিল সেই কালবৈশাখী কার্যত লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল কলকাতাকে।
পাঁচ বছর পরে মঙ্গলবার ফিরে এল সেই ঝড়ের দিন। এবং সেই ১৭ এপ্রিলেই! গতিবেগ একটু কম। ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৯৮ কিলোমিটার।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তথ্য বলছে, গত সাত বছরে চৈতালি আর বৈশাখী ঝড়ের ইতিবৃত্তে মঙ্গলবারের রাত দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
মঙ্গলবার এমন জোড়া বাউন্সারের সামনে প়ড়ল কেন কলকাতা?
রে়ডার-চিত্র বিশ্লেষণ করে আলিপুর হাওয়া অফিসের বিজ্ঞানীরা জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টা নাগাদ দু’প্রান্ত থেকে ধেয়ে আসা দু’টি বজ্রগর্ভ মেঘপুঞ্জ জুড়ে গিয়েছিল হুগলির আকাশে। প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ১০ কিলোমিটার উচ্চতার সেই মেঘই ছুটে আসে কলকাতার দিকে। সন্ধ্যা ৭টা ২০ মিনিটে শুরু হয় ঝোড়ো হাওয়া। ৭টা ৪২ মিনিটে ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ দাঁড়ায় ঘণ্টায় ৮৪ কিলোমিটার। প্রথম বাউন্সারের
এটাই সর্বোচ্চ প্রতাপ। ‘‘প্রথম দফার ঝড় কমতে না-কমতেই ফের হামলে পড়ে দ্বিতীয় দফার ঝড়। এই দফায় ঘণ্টায় ৯৮ কিলোমিটার ছুঁয়ে ফেলে হাওয়ার বেগ,’’ বলেন আলিপুর হাওয়া অফিসের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস।
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, বজ্রগর্ভ মেঘ একা ছিল না। তার পিছু পিছু তৈরি হয়েছিল আরও ছোট মাপের মেঘ। প্রথম ধাক্কার পরে বাতাস গড়ে ৬০ কিলোমিটার বেগে বইছিল। সেই সময়েই পিছনে আসা মেঘ হানা দেয়। সেই মেঘসম্মিলনের জেরে এক ঝটকায় ঝড়ের গতিবেগ বেড়ে গিয়েছিল অনেকটাই। প্রশ্ন উঠেছে, এমন জোরালো ঝ়ড়বৃষ্টি যে ধেয়ে আসছে, তা আগেভাগে কেন জানাতে পারল না হাওয়া অফিস?
আবহবিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, গ্রীষ্মে এই ধরনের ঝ়ড়বৃষ্টির আভাস অনেক আগে থেকে দেওয়া সম্ভব নয়। রেডারে বজ্রগর্ভ মেঘ দানা বাঁধতে দেখলে তবেই তার সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। অনেক সময় বায়ুপ্রবাহের আচমকা হেরফেরে বদলে যায় ঝ়ড়ের অভিমুখ। আলিপুর হাওয়া অফিসের এক পদস্থ বিজ্ঞানী বলেন, ‘‘মঙ্গলবারেও বায়ুপ্রবাহের আচমকা হেরফেরে হুগলির উপরে দু’টি মেঘ জু়ড়ে তৈরি হয় বড় মাপের মেঘ। এই মেঘ-মিলন য়েখানে ঘটেছে, সেটা কলকাতা থেকে বেশি দূরে নয়। তাই রুদ্রমূর্তির ঝড় দ্রুত আছড়ে পড়েছে মহানগরে। এমনটা যে ঘটতে পারে, তা আগাম আঁচ করা যায়নি।’’ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বেশি থাকায় কলকাতার দিকে আসার পথে মেঘের শক্তিও বাড়ছিল, জানান গণেশবাবু।
সেই ঝ়ড়বৃষ্টির ধাক্কায় মঙ্গলবার রাত থেকেই তাপমাত্রা কমছিল। বুধবার কলকাতায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের থেকে এক ডিগ্রি কম। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২০.৭ ডিগ্রি, স্বাভাবিকের থেকে পাঁচ ডিগ্রি কম। তবে ঝড়বৃষ্টির দাক্ষিণ্য বিশেষ স্বস্তিকর হবে না বলেই মনে করছেন আবহবিদেরা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা জানান, বাতাসে অতিরিক্ত আর্দ্রতা রয়েছে। এ দিনই কলকাতার সর্বাধিক আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৯৮ শতাংশ। বাড়তি আর্দ্রতার জন্য অস্বস্তিকর আবহাওয়া চলবে। দিন দুয়েকের মধ্যে কলকাতার তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি পেরোতে পারে। পশ্চিমের জেলাগুলিতে তাপমাত্রা ছুঁতে পারে ৪০ ডিগ্রির কোঠা।