মে দিবসে বিদায় ‘কমিউনিস্ট’ মিত্রের

বয়সজনিত কারণে বেশ কিছু দিন যাবৎ অসুস্থ ছিলেন অশোকবাবু। দক্ষিণ কলকাতার একটি নার্সিংহোমে টানা বেশ কিছু দিন ভর্তি ছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মে ২০১৮ ০১:২৮
Share:

মে দিবসের সকালে প্রয়াত হলেন মার্কসবাদী অর্থনীতিবিদ এবং রাজ্যে বামফ্রন্ট সরকারের প্রথম অর্থমন্ত্রী অশোক মিত্র।

Advertisement

বয়সজনিত কারণে বেশ কিছু দিন যাবৎ অসুস্থ ছিলেন অশোকবাবু। দক্ষিণ কলকাতার একটি নার্সিংহোমে টানা বেশ কিছু দিন ভর্তি ছিলেন। সেখানেই মঙ্গলবার সকাল সওয়া ৯টা নাগাদ তাঁর মৃত্যু হয়। বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। অশোকবাবুর স্ত্রী প্রয়াত হয়েছেন ১০ বছর আগে।

বামফ্রন্ট সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম প্রায় ১০ বছর অর্থ দফতরের ভার সামলে ছিলেন অশোকবাবু। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সঙ্গে তাঁর কিছু মনান্তর হয়েছিল। মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফাও দিয়েছিলেন। তবে কমিউনিস্ট চিন্তার চর্চা এবং ‘বিকল্প অর্থনীতি’র ভাবনা থেকে নিজেকে কখনও বিচ্ছিন্ন করেননি। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বে তৎকালীন বাম সরকারের নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন। কিন্তু তিনি যে কমিউনিস্ট— এই পরিচয় কখনও ভোলেননি, ভুলতেও দেননি। সিপিএমের সদস্যপদ আর না রাখলেও বলে গিয়েছিলেন, দলের প্রতি ‘নিমকহারামি’ করবেন না!

Advertisement

চিরশয্যায় অশোক মিত্র। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

সেই ‘অপরাজেয়’ কমিউনিস্টকেই এ দিন শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সব ধরনের বামপন্থী নেতা এবং বিদ্বজ্জনেরা। আলিপুরের বাড়িতে বিমান বসুর পাশাপাশিই গিয়েছেন শঙ্খ ঘোষ, নবনীতা দেবসেনেরা। কেওড়াতলা মহাশ্মশান পর্যন্ত শেষ যাত্রায় পাশাপাশিই থেকেছেন সিপিএমের অসীম দাশগুপ্ত, মদন ঘোষ, সুজন চক্রবর্তী, রবীন দেব এবং ‘প্রাক্তন’ প্রসেনজিৎ বসু, শুভনীল চৌধুরীরা। সিপিএমের আনুষ্ঠানিকতায় কিছু অসুবিধা থাকলেও রক্তপতাকায় মুড়েই শেষ যাত্রায় এগিয়েছে তাঁর মরদেহ। বিমানবাবু বলেছেন, ‘‘প্রথম বামফ্রন্ট সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন তিনি, এ তো ইতিহাস! তাকে অস্বীকার করা যায় না। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগও ছিল।’’

সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি স্মরণ করেছেন তুখোড় লিখিয়ে অশোকবাবুকে। বলেছেন, তাঁর লেখনী কেবল অর্থনীতি ও রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ ছিল না। ইয়েচুরি মনে করিয়ে দিয়েছেন, অশক্ত শরীর নিয়ে ‘আরেক রকম’ পত্রিকা চালাতে অশোকবাবুর লড়াইয়ের কথাও। বিবৃতি দিয়েছে সিপিএমের পলিটব্যুরো। আবার যাঁর ‘স্বৈরাচারী রাজনীতি’র প্রতি সরাসরিই ‘ঘৃণা’ ব্যক্ত করেছেন অশোকবাবু, সেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও শোকবার্তা দিয়েছেন। সরকারের তরফে বর্ষীয়ান মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় উপস্থিত থেকেছেন বাড়ি এবং শ্মশানে।

জন্ম ঢাকায়, ইন্দিরা গাঁধীর জমানায় কেন্দ্রীয় সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন অশোকবাবু। সত্তর দশকে সে দায়িত্ব ছেড়ে আসার পরে বাংলায় বাম সরকারে তাঁকে অর্থ দফতরের ভার দেন জ্যোতিবাবু। প্রথম বার রাসবিহারী কেন্দ্র থেকে জিতলেও ১৯৮২-তে পরাজয়। সেই সময় বামফ্রন্ট সরকার তাঁকে শিক্ষা কমিশনের দায়িত্ব দেয়। যে কমিশনের সুপারিশ মেনে প্রাথমিক স্কুল থেকে তুলে দেওয়া হয় ইংরেজি। পরে প্রবল বিতর্কের মুখে বাম সরকার ইংরেজি ফিরিয়ে আনলেও অশোকবাবু ছিলেন তাঁর মতে অনড়। যাদবপুর থেকে ১৯৮৩-র উপনির্বাচনে জিতে ফের অর্থমন্ত্রী হয়েছিলেন। পরে নব্বইয়ের দশকে সিপিএম তাঁকে পাঠিয়েছিল রাজ্যসভায়। সংসদীয় রাজনীতির পাট চুকে যাওয়ার পরে অশোকবাবু নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন লেখালিখিতেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement