অপেক্ষার উল্টো পিঠে অচেনা ভয়

আটপৌরে সেই সব গ্রামের লোকজনের গলায় স্পষ্ট আক্ষেপ, ‘‘আমাদের ভাগ্যটাও এমনই, কর্তা। শুধু কাঁটা আর কাঁটা।’’

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৪২
Share:

ইলশামারিতে কফিনের কাছে খোকন সিকদারের মা ও ছেলে অভ্র।

গাঁয়ের পাশ দিয়ে এঁকেবেঁকে গিয়েছে কাঁটাতারের বেড়া।

Advertisement

আটপৌরে সেই সব গ্রামের লোকজনের গলায় স্পষ্ট আক্ষেপ, ‘‘আমাদের ভাগ্যটাও এমনই, কর্তা। শুধু কাঁটা আর কাঁটা।’’

তবুও সাদা-কালো সীমান্তে উৎসব আসে। দুর্গাপুজো, ইদ, নবান্নের মতো ঘরে ফেরাটাও একটা বড় উৎসব। সীমান্ত তাই অপেক্ষায় থাকে। কর গুনে গুনে বৃদ্ধা মা হিসেব কষেন, ‘‘চৈত্র, বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ...। ও বৌমা আশ্বিন তো এখনও ঢের দেরি গো।’’

Advertisement

নাচতে নাচতে বাপ ন্যাওটা ছেলে এসে দাঁড়ায় ঠাকুমার পাশে, ‘‘ও ঠাম্মা, আসছে পুজোতে বাবা আসবে তো?’’ উঠোন নিকোনো হাতটাও আচমকা থেমে যায়, ‘‘ঘরে কি ফোন বাজছে? লোকটা তো এই সময়েই ফোন করবে বলেছিল।’’

সীমান্তের মহখোলা, ইলশামারি, দিঘলকান্দি, লালগোলা গ্রামের বহু মানুষ কর্মসূত্রে পড়ে থাকেন বিদেশ-বিভুঁয়ে। ফোনে কথা হয়। কিন্তু অপেক্ষার যেন আর শেষ হয় না।

এ ভাবেই তো অপেক্ষা করেছিলেন দীপালি টিকাদার, নমিতা সিকদার। এ ভাবেই তো অপেক্ষা করছেন হরিহরপাড়ার গুরুদাসপুরের পলি মিস্ত্রি। এ ভাবেই তো অপেক্ষা করছেন মহখোলার নীলিমা বিশ্বাস।

মহখোলার রাস্তায় ভিড় করেছেন লোকজন।

মঙ্গলবার গ্রামে ফিরেছে ইলশামারির খোকন সিকদার ও মহখোলার সমর টিকাদারের কফিনবন্দি দেহাবশেষ। তাঁদের পড়শিরা বলছেন, ‘‘কী হল বলুন তো? ছেলেগুলো গেল দু’পয়সা রোজগারের জন্য। এখন ফিরছে কফিনবন্দি হয়ে। দেশই হোক আর বিদেশ, গরিবের কপাল সব জায়গাতেই খারাপ!’’

‘‘খারাপ না হলে লোকটা এমন বিপদে পড়ে, বলুন তো?’’, চোখের জল মুছছেন গুরুদাসপুরের পলি মিস্ত্রি। বছর তিনেক আগে সৌদি আরবে কাজ করতে গিয়েছিলেন কাঠের কারিগর সঞ্জীব মিস্ত্রি। চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছে এক বছর আগেই। কিন্তু এখনও তিনি ফিরতে পারেননি।

সঞ্জীব যখন গিয়েছিলেন, তাঁর ছেলের বয়স ছিল আট মাস। এখন তার চার বছর হতে চলল। সঞ্জীব টাকা পাঠাতে না পারায় তাঁর পরিবার আতান্তরে পড়েছে। পলির আক্ষেপ, ‘‘আমি এ দিক-সে দিক থেকে ধার করে ৯০ হাজার টাকা পাঠিয়েছি। কিন্তু এ ভাবে আর কত দিন চলবে, জানি না!’’

মাস চারেক আগে দুবাইয়ে রাজমিস্ত্রির কাজ নিয়ে গিয়েছেন মহখোলার যামিনী বর। দিন পনেরোর মাথায় ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর জখম হয়ে এখন কোমায়। আবুধাবির একটি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে।

এ দিন যামিনীর ছেলে মিঠুন বলছেন, ‘‘গ্রামের কিছু লোকজন দুবাইয়ে আছে। তারাই বাবার দেখভাল করছে। সমর কাকার এমন অবস্থা হবে আমরা স্বপ্নেও ভাবিনি। আজকাল বড় ভয় হচ্ছে, জানেন!’’

(চলবে)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement