যথেচ্ছ ‘ক্রসপ্যাথি’র ধন্দ সরকারি ক্ষেত্রেও

বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল আর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে (বিশেষ করে জেলাস্তরে) কিন্তু আউটডোর, ইন্ডোর এবং জরুরি বিভাগেও অ্যালোপ্যাথি ডাক্তারবাবুদের সঙ্গেই আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা কাজ করছেন এবং মিলিয়ে-মিশিয়ে ওষুধ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ মে ২০১৮ ০২:৪৬
Share:

বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসকদের সঙ্গে আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা কাজ করছেন এবং এই ‘বেআইনি’ প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। অথচ বিভিন্ন সরকারি হাসপাতাল আর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে (বিশেষ করে জেলাস্তরে) কিন্তু আউটডোর, ইন্ডোর এবং জরুরি বিভাগেও অ্যালোপ্যাথি ডাক্তারবাবুদের সঙ্গেই আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা কাজ করছেন এবং মিলিয়ে-মিশিয়ে ওষুধ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

Advertisement

আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, নিজেদের ভুল সংশোধনের বদলে স্বাস্থ্য দফতর বেসরকারি হাসপাতালের খুঁত ধরছে।

গত ৮ মে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুর হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চিকিৎসকের অনুপস্থিতি নিয়ে ভাঙচুর হওয়ার পর সেখানকার সুপার হাসপাতালের আয়ুর্বেদ চিকিৎসক দিলীপ সরকারকে সেখানে ডিউটি দেন। ২০১৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি কোচবিহারের শীতলকুচি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আয়ুর্বেদ চিকিৎসককে আউটডোর ও ইন্ডোর ডিউটি করতে বলে নির্দেশ জারি হয়। ওই নির্দেশে তাঁকে অ্যালোপ্যাথি ওষুধও দিতে বলা হয়। এমন উদাহরণ রয়েছে আরও অনেক। আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের সংগঠন ‘‘অল বেঙ্গল বিএএমএস ডক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে চিকিৎসক কবিসুন্দর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জেলায়-জেলায় অনেক সরকারি হাসপাতালে বিএমওএইচের মৌখিক নির্দেশে আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা জরুরি বিভাগ ও ইন্ডোরে ডিউটি করছেন। তাঁরা কি স্যালাইন বা ইঞ্জেকশন দেবেন না? সরকার কি নিশ্চিত যে, এঁদের কেউ অ্যালোপ্যাথি ওষুধ দিচ্ছেন না? সরকারের সেই নজরদারি রয়েছে?’’

Advertisement

সুন্দরবন এলাকায় কয়েকটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে চুক্তি করে স্বাভাবিক প্রসবের কেন্দ্র খুলেছে সরকার। মাসখানেক আগে জানা যায়, এর মধ্যে কয়েকটি সংস্থা আয়ুর্বেদ চিকিৎসক দিয়েই ওই সরকারি জায়গায় প্রসবের কাজ করাত। সরকার এত দিন তা জানতে পারেনি। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘এ ব্যাপারে আমরা সরকারি হাসপাতালগুলিতে জেলাস্তরে আরও নজরদারি বাড়ানোর চেষ্টা করছি যাতে ক্রশপ্যাথি আটকানো যায়।’’

আয়ুর্বেদ চিকিৎসকেরা কোন-কোন চিকিৎসা করতে পারবেন আর কোনটা করতে পারবেন না, তার একটি তালিকা গত বছর ১ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য দফতর প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়েছিল, তাঁরা রোগীকে ইঞ্জেকশন, স্যালাইন, রক্ত দিতে পারবেন না। সেলাই করতে বা অস্ত্রোপচারও করতে পারবেন না। অথচ, গত ৪ এপ্রিল আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য মেডিক্যাল টিম তৈরি করে হুগলির আরামবাগের বিডিওকে চিঠি পাঠিয়েছেন আরামবাগের নারায়ণপুরের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক। সেই টিমের একমাত্র চিকিৎসকই হচ্ছেন আয়ুর্বেদ ডাক্তার। গত বছর ১৩ নভেম্বর আমতা থানায় একটি বোমা নিষ্ক্রিয়করণ টিম পাঠিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। সেখানেও একমাত্র ডাক্তার ছিলেন আয়ুর্বেদ চিকিৎসক। প্রশ্ন উঠেছে, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় গোলমালে কেউ গুরুতর আহত হলে বা বোমা নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় কেউ আহত হলে সরকারি নিয়ম মেনে মেডিক্যাল টিমের সেই একমাত্র চিকিৎসক কি আহতকে স্যালাইন, ইঞ্জেকশন বা রক্ত দেবেন না? হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন? উত্তর মেলেনি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement