স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পের প্রায় পাঁচ হাজার রোগীকে বেসরকারি হাসপাতাল-নার্সিংহোমে চিকিৎসা করে স্বাস্থ্য দফতরের তদন্তের মুখে ৯৮ জন চিকিৎসক। তাঁদের অধিকাংশই সরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিযুক্ত। তার পরেও ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পে তাঁরা সরকারি হাসপাতালে এক জনেরও চিকিৎসা করেননি। ২০১৭ সালে এই ৯৮ জন চিকিৎসক বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে ৪ কোটি ২৬ লক্ষ টাকার ‘ব্যবসা’ পাইয়ে দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছে চিকিৎসকদের নিজস্ব মোটা ফি-ও। স্বাস্থ্য দফতর পুরো বিষয়টি নিয়ে অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে বলে জানা গিয়েছে।
স্বাস্থ্য ভবনের মূল অভিযোগ, এক বছরে প্রায় আড়াইশো বেসরকারি হাসপাতাল-নার্সিংহোমে ওই ৯৮ জন চিকিৎসক ৪৯৯৮ জন রোগীর চিকিৎসা করেছেন। এ ভাবে সরকারি হাসপাতালে আসা রোগীদের বেসরকারি হাসপাতালে ওই চিকিৎসকরা পাঠিয়ে দিচ্ছেন কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
এক শীর্ষ স্বাস্থ্যকর্তার দাবি, রাজ্যে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে আড়াই কোটি মানুষ বিমার সুবিধা পান। সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করালেও বিমার সুযোগ পান রোগীরা। এ ক্ষেত্রে বিমা কোম্পানির থেকে চিকিৎসা খরচ জমা পড়ে হাসপাতালের তহবিলে। সরকারি চিকিৎসকেরা তার জন্য কোনও আলাদা ফি পান না।
সম্প্রতি বিমা প্রকল্পে সরকারি চিকিৎসকদের মূল্যায়ন করতে গিয়েই বেরিয়ে আসে বিস্ফোরক তথ্য। স্বাস্থ্য ভবন জানতে পারে, ৯৮ জন চিকিৎসক বেসরকারি নার্সিংহোমে চিকিৎসা করলেও সরকারি হাসপাতালে বিমা প্রকল্পে এক জনেরও চিকিৎসা করেননি। আরও কয়েকশো চিকিৎসক সরকারি হাসপাতালে দু’-চার জনের চিকিৎসা করে বাকিদের বেসরকারি নার্সিংহোমে দেখেছেন। তবে প্রায় ১০০ জন এমন চিকিৎসকও আছেন, যাঁরা অধিকাংশ রোগীকে বিমা প্রকল্পে সরকারি হাসপাতালেই দেখেছেন।
এক কর্তা জানান, বহরমপুরের এক চোখের ডাক্তার বেসরকারি হাসপাতালে বছরে ১১৮০ জনের চিকিৎসা করে ৭৩ লাখ টাকার বিল করেছেন। বর্ধমানের এক সরকারি চিকিৎসক বিমা প্রকল্পে ৮১ জন রোগীকে দেখে ২৩ লাখ ৮৩ হাজার টাকার বিল করেছেন। কিন্তু তাঁরা যে সরকারি হাসপাতালে কর্মরত, সেখানে এক জনকেও দেখেননি।
স্বাস্থ্য ভবন জানিয়েছে, প্রথম পর্যায়ে যে ৯৮ জন চিকিৎসক এক জনকেও সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করেননি, তাঁদের ভূমিকা দেখা হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের দাবি, বিমা প্রকল্পের নথি অনুযায়ী এমন অনেক রোগীও রয়েছেন, যাঁরা প্রাক-অপারেশন পরীক্ষা-নিরীক্ষা সরকারি হাসপাতালে করিয়েছেন। কিন্তু তাঁদের অপারেশন হয়েছে বেসরকারি হাসপাতালে। ঘটনাচক্রে যে চিকিৎসক সরকারি হাসপাতালে তাঁকে পরীক্ষা করার কথা লিখেছেন, তিনিই আবার বেসরকারি নার্সিংহোমে অপারেশন করেছেন। এ ছাড়া বেশ কয়েক জন চিকিৎসক আবার তাঁর কর্মস্থল থেকে কয়েকশো কিলোমিটার দূরের নার্সিংহোমেও নিয়মিত চিকিৎসা করছেন বলে জানা যাচ্ছে। ফলে তাঁরা কর্মস্থলে ঠিক মতো থাকছেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য কর্তারা জানাচ্ছেন। যদিও অন্য একটি মহলের মতে, রোগীরাই অধিকাংশ ক্ষেত্রে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে চান। সরকারি হাসপাতালে সময় মতো অপারেশন করানোটাও আসাধ্য সাধনের মতো। তাই বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করেছেন মানেই ওই চিকিৎসকরা কর্তব্যে অবহেলা করেছেন এমন ধারণা সঠিক নয়।