এ বার প্রশান্ত মহাসাগরে জলতলের তাপমাত্রা কম (‘লা নিনা’) আছে। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, বর্ষাকালে সেই পরিস্থিতিই বজায় থাকবে। তার ফলে সামগ্রিক ভাবে বর্ষার মরসুমে বর্ষণের উপরে কুপ্রভাব পড়ার আশঙ্কা কম।
ফাইল চিত্র।
চাঁদিফাটা রোদ আর প্রচণ্ড গরম দিয়ে ১৪২৮ শেষ এবং ১৪২৯ শুরু হচ্ছে। গ্রীষ্মের তীব্রতার উপরে বর্ষা বহুলাংশে নির্ভরশীল, এমন ধারণা ও বিশ্বাস আছে গ্রামবাংলায়। কিন্তু এ বার গাঙ্গেয় বঙ্গের বর্ষাভাগ্য মন্দ কি না, বর্ষশেষে হাওয়া অফিসের পূর্বাভাসের জেরে সেই বিষয়ে আশঙ্কা ও জল্পনা প্রবল হয়েছে। বৃহস্পতিবার দিল্লির মৌসম ভবনের প্রথম পূর্বাভাসে হিমালয়ের পাদদেশ সংলগ্ন অঞ্চলে স্বাভাবিক বা তার বেশি বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণবঙ্গে সেই সম্ভাবনা নেই। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া বিভাগের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল (পূর্বাঞ্চল) সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি হতে পারে। তবে আগামী বর্ষায় দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে স্বাভাবিকের থেকে কম বৃষ্টির সম্ভাবনাই বেশি।’’ এতেই গাঙ্গেয় বঙ্গের বর্ষণ নিয়ে দুশ্চিন্তা ঘনাচ্ছে।
স্বাভাবিক নিয়ম ও পরিমাণের বিচারে বর্ষাকালে দক্ষিণবঙ্গের তুলনায় বেশি বৃষ্টি হয় উত্তরে। কিন্তু গত বছর গাঙ্গেয় বঙ্গে উদ্বৃত্ত বর্ষণ হলেও উত্তরবঙ্গে যে-বৃষ্টি হয়েছিল, সেটাকে ‘টেনেটুনে স্বাভাবিক’ বলা চলে। এ বার ঠিক তার উল্টো হতে পারে বলে মনে করছেন আবহবিদেরা। মৌসম ভবনের পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, বাংলার উপকূলবর্তী জেলাগুলিতেই এ বার বর্ষণ-ঘাটতির পরিমাণ বেশি হতে পারে। যদিও এত ছোট জায়গায় চার মাসের হিসেবে কী ভাবে নিখুঁত পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে আবহবিদদের একাংশের।
বর্ষার খামখেয়ালি চরিত্র নিয়ে নানান জল্পনা রয়েছে। তবে সামগ্রি ভাবে দেশে বৃষ্টিপাতের হার কমছে বলে মৌসম ভবনের হিসেবে ধরা পড়েছে। ১৯৬১-২০১০ সময়কালে দেশে বর্ষায় গড় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৮৮০.৬ মিলিমিটার এবং বার্ষিক গড় বৃষ্টির পরিমাণ ছিল ১১৭৬.৯ মিলিমিটার। মৌসম ভবন এ দিন জানিয়েছে, ১৯৭১-২০২০ সময় পর্বের হিসেবে দেশে বর্ষায় গড় বৃষ্টির পরিমাণ ১২ মিলিমিটার কমে দাঁড়িয়েছে ৮৬৮.৬ মিলিমিটারে। আর বার্ষিক গড় বৃষ্টির পরিমাণ কমে হয়েছে ১১৬০.১ মিলিমিটার।
এ দিন প্রথম পূর্বাভাসে মৌসম ভবন জানিয়েছে, এ বার বর্ষায় দেশে সার্বিক ভাবে স্বাভাবিক বৃষ্টি হতে পারে। স্বাভাবিক বা তার থেকে বেশি বৃষ্টি হতে পারে মহারাষ্ট্র, বিদর্ভ, মধ্য ভারত, হিমালয়ের পাদদেশ সংলগ্ন অঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের কিছু এলাকায়। উত্তর-পূর্ব ভারত (মৌসম ভবনের বিচারে পশ্চিমবঙ্গ পড়ে এই অঞ্চলের মধ্যেই) এবং দক্ষিণ ভারতে স্বাভাবিকের থেকে কম বৃষ্টি হতে পারে। আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, ভারতে বর্ষা-পরিস্থিতি অনুকূল না প্রতিকূল হবে, তার অনেকটাই নির্ভর করে প্রশান্ত মহাসাগরের জলতলের উষ্ণতার উপরে। সেখানে উষ্ণতা স্বাভাবিকের থেকে বেশি (‘এল নিনো’) হলে ভারতে বর্ষা দুর্বল হয়। এ বার প্রশান্ত মহাসাগরে জলতলের তাপমাত্রা কম (‘লা নিনা’) আছে। মৌসম ভবনের পূর্বাভাস, বর্ষাকালে সেই পরিস্থিতিই বজায় থাকবে। তার ফলে সামগ্রিক ভাবে বর্ষার মরসুমে বর্ষণের উপরে কুপ্রভাব পড়ার আশঙ্কা কম।