POCSO Case

ধর্ষণ ও পকসো মামলার নিষ্পত্তি: সব শেষে বঙ্গ

আর জি কর কাণ্ড নিয়ে এমনিতেই বিরোধী তথা নাগরিক সমাজের নিশানায় থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে এই রিপোর্ট জানিয়েছে, ধর্ষণের এবং শিশুদের উপরে যৌন নির্যাতনের বা পকসো-র মামলা ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে হওয়ার কথা।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:২২
Share:

—প্রতীকী ছবি।

ধর্ষণের ও শিশুদের উপরে যৌন নির্যাতনের মামলা নিষ্পত্তির হারে গোটা দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সব থেকে পিছিয়ে রয়েছে। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের অভাবে রাজ্যে এই ধরনের অপরাধের মোট মামলার মাত্র ২ শতাংশ নিষ্পত্তি হচ্ছে। আজ অসরকারি সংগঠন ‘ইন্ডিয়া চাইল্ড প্রোটেকশন’ সরকারি পরিসংখ্যান খতিয়ে দেখেই একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতেই উঠে এসেছে এই তথ্য।

Advertisement

আর জি কর কাণ্ড নিয়ে এমনিতেই বিরোধী তথা নাগরিক সমাজের নিশানায় থাকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলে এই রিপোর্ট জানিয়েছে, ধর্ষণের এবং শিশুদের উপরে যৌন নির্যাতনের বা পকসো-র মামলা ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে হওয়ার কথা। কিন্তু ২০২৩-এর ডিসেম্বরের হিসাব অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের জন্য ১২৩টি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট বরাদ্দ হলেও মাত্র ৩টি চালু ছিল। ফলে পশ্চিমবঙ্গে এই সব মামলার নিষ্পত্তির হারও সব থেকে কম। মহারাষ্ট্র ও পঞ্জাবের মতো রাজ্যে ধর্ষণ, পকসো-র মামলার নিষ্পত্তির হার ৭০ শতাংশের বেশি। জাতীয় গড় ৫২ শতাংশ। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে এই হার মাত্র ২ শতাংশ। রাজ্যের তিনটি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালু হওয়ার পরে মাত্র ৪৮টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। শুধু এই তিনটি কোর্টেই ২৯৪৮টি মামলা ঝুলে রয়েছে। অর্থাৎ রাজ্যের এক-একটি ফাস্ট ট্র্যাক
কোর্টে গড়ে ৯৮৩টি করে মামলা ঝুলে রয়েছে। কোর্ট-প্রতি গড়ে বকেয়া মামলার সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গেই সব থেকে বেশি।

সম্প্রতি মোদী সরকারের নারী ও শিশু কল্যাণমন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবী পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেও একই অভিযোগ তুলেছিলেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, পশ্চিমবঙ্গে ৪৮,৬০০টি ধর্ষণ ও পকসো-র মামলা ঝুলে রয়েছে। ২০১৯-এ ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরির প্রকল্প চালু হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের জন্য ১২৩টি কোর্ট চিহ্নিত হলেও ২০২৩-এর জুন মাস পর্যন্ত তার একটিও চালু হয়নি। তার পরে রাজ্য সরকার এই প্রকল্পে সম্মতি দিয়েছে। ধর্ষণের ঘটনা রুখতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আরও কঠোর ব্যবস্থা দাবি করে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখার পরে তার জবাবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এই চিঠি লিখেছিলেন।

Advertisement

ইন্ডিয়া চাইল্ড প্রোটেকশন-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালু হওয়ার পরে ধর্ষণ-পকসো মামলার নিষ্পত্তির হার বেড়েছে। কিন্তু তার পরেও গোটা দেশে এখন ২ লক্ষ ২ হাজার ১৭৫টি ধর্ষণ-পকসোর মামলা ঝুলে রয়েছে। নতুন কোনও মামলা দায়ের না হলে শুধু বকেয়া মামলার নিষ্পত্তি হতে ৩ বছর সময় লেগে যাবে। যদি এক বছরের মধ্যে সব মামলার নিষ্পত্তি করতে হয়, তা হলে প্রতি তিন মিনিটে একটি করে মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে, যা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়। নারী ও শিশু অধিকারের পক্ষে আন্দোলনকারী সমাজকর্মী ভুবন ঋভুর মতে, ‘‘আগামী তিন বছরের মধ্যে ধর্ষণ, পকসো-র বকেয়া মামলার নিষ্পত্তি করতে হলে এক হাজার নতুন ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট প্রয়োজন।’’

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, নির্ভয়া কাণ্ডের পরে ধর্ষণ, পকসো-র মামলা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ২০১৯-এর অগস্টে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরির প্রকল্প চালু হয়েছিল। তার পর থেকে প্রায় ৪ লক্ষ ১৬ হাজারের মধ্যে ২ লক্ষ ১২ হাজার মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এখন গোটা দেশে ১০২৩টি চিহ্নিত ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের মধ্যে ৭৫৫টি কাজ করছে। আরও এক হাজার ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট প্রয়োজন। ইন্ডিয়া চাইল্ড প্রোটেকশন-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, মহিলা সুরক্ষায় যে নির্ভয়া তহবিল তৈরি হয়েছিল, তাতে ১৭০০ কোটি টাকা খরচ না হয়ে পড়ে রয়েছে। অতিরিক্ত ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরি করতে ১৩০০ কোটি টাকার মতো অর্থ প্রয়োজন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement