মেয়াদ ফুরনো ১৭টি পুরবোর্ডের মাথার উপরে প্রশাসক বসিয়ে রেখেছে রাজ্য সরকার। শাসক দলের অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে বোর্ড ভেঙে দেওয়ার পরে একই পরিণতি হয়েছে চন্দননগর পুর নিগমের। এ বার ‘দখল হয়ে যাওয়া’ দুই পুরসভাতেও প্রশাসক বসাতে চেয়েছিল রাজ্য। কিন্তু রাজনৈতিক স্তরে নেওয়া সেই সিদ্ধান্ত আপাতত থমকে গেল আমলা মহলের আপত্তিতে। লোকসভা ভোটে ধাক্কা খাওয়ার পরে যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানায় নতুন ‘ট্রেন্ড’ হিসেবেই দেখছে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মহল।
ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে এ বার বিজেপি জেতার পরে ওই এলাকার অন্তর্গত চার পুরসভা ভাটপাড়া, নৈহাটি, হালিশহর ও কাঁচরাপাড়া তৃণমূলের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে থাবা বাড়িয়েছে গেরুয়া শিবির। তার মধ্যে বিতর্ক এবং সংঘাত বেশি ভাটপাড়া ও নৈহাটি নিয়ে। ওই দুই পুরসভাতেই আপাতত প্রশাসক বসাতে চেয়েছিল রাজ্য সরকার। নৈহাটিতে প্রশাসক বসানোর সিদ্ধান্ত চূড়ান্তও হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এমন পদক্ষেপ নিলে আইনি জটিলতা এবং পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় সরকারকেই প্যাঁচে পড়তে হবে, এই যুক্তি দেখিয়ে প্রশাসক বসানোর উদ্যোগ আপাতত রদ করে দিয়েছেন পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের আধিকারিকেরা।
ভাটপাড়ার ৩৫ ওয়ার্ডের মধ্যে ১৯টির কাউন্সিলর এখন বিজেপির দিকে। নৈহাটির ৩১-এর মধ্যে ২৯ জন কাউন্সিলর গেরুয়া শিবিরে যোগ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। উত্তর ২৪ পরগনা তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও কয়েক জন বিধায়কের সঙ্গে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বৈঠকে ঠিক হয়েছিল, নৈহাটিতে প্রশাসক বসানো হবে। ভাটপাড়ার জন্যও একই সংস্থান বিবেচনায় রাখা হবে। কিন্তু পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের আধিকারিকেরা সরকারকে জানিয়েছেন, দুই পুরসভার নির্বাচিত বোর্ডের মেয়াদ এখনও শেষ হয়নি। চাইলেই সেখানে এ ভাবে প্রশাসক বসানো যায় না। পুরবোর্ড ভেঙে দেওয়ার জন্য কাজে অচলাবস্থা বা আর্থিক নয়ছয় সংক্রান্ত যে সব অভিযোগের ভিত্তিতে এগোনো যায়, তার কিছুই এখানে হাতে নেই। এ ভাবে প্রশাসক বসালে আইনি প্রশ্ন উঠলে ব্যাখ্যা দেওয়া দুষ্কর হবে।
সূত্রের খবর, আধিকারিকেরা মন্ত্রীদের বলেছেন, তৃণমূল, বিজেপি বা সিপিএম— কার হাতে কোন বোর্ড থাকল, তা নিয়ে তাঁরা চিন্তিত নন। তাঁরা শুধু নিয়ম-কানুনের কেতাব ধরে এগোনোর কথা বলছেন। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রশাসনিক মহলের অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন, ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বাম জমানার শেষ দিকেও সরকারি আমলারা ‘ওয়ার্ক টু রুল’-এর বাইরে পা ফেলতে চাইতেন না। মমতার জমানায় তাঁর বা মন্ত্রিসভার ইচ্ছাই ‘শেষ কথা’র মর্যাদা পেয়ে এসেছে। দিকে দিকে প্রশাসক বসিয়ে কাজ চালিয়ে গিয়েছে রাজ্য সরকার। এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে প্রশাসনিক কর্তারা মন্ত্রীদের সামনে নিয়মের বই খুলে ধরতে শুরু করেছেন।
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ ও তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয়বাবু এই প্রসঙ্গে মুখ খুলতে চাননি। তবে তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার বক্তব্য, ‘‘আপাতত প্রথম কাজ, দলের কার্যালয় পুনরুদ্ধার ও ঘরছাড়াদের ফেরানো। বাকি কাজ পরিস্থিতি অনুযায়ী হবে।’’ প্রশ্ন করা হলে পুর ও নগরোন্নয়ন সচিব সুব্রত গুপ্ত বলেন, ‘‘প্রশাসক নিয়োগের আগে কিছু ধাপ আছে। সেগুলি খতিয়ে দেখার আগে কোনও কিছুই চূড়ান্ত করে বলা যায় না।’’ সূত্রের খবর, ভাটপাড়ায় পুর পরিষেবার হাল কেমন, তা দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে জেলাশাসককে। পুরবোর্ডে স্পেশ্যাল অডিটের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।