মহার্ঘ ভাতা ‘সরকারের দয়ার দান’ নয়, কর্মীদের আইনি অধিকার। এই ভাতা রাজ্য সরকারি কর্মীদের প্রাপ্য। স্যাটের রায় খারিজ করে ডিএ মামলায় শুক্রবার এই রায় দিল কলকাতা হাইকোর্ট। বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত এবং বিচারপতি শেখর ববি শরাফের ডিভিশন বেঞ্চের এই রায়ে কার্যত মুখ পুড়ল রাজ্য সরকারের, মনে করছে আইনজ্ঞ মহল।
ডিএ মামলায় স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল (স্যাট)-এ শুনানির সময় রাজ্য সরকার জানিয়েছিল, মহার্ঘ ভাতা সরকারি কর্মীদের আইনসিদ্ধ অধিকার নয়। সরকার ইচ্ছে করলে দিতে পারে, না-ও দিতে পারে। অর্থাৎ, ডিএ দেওয়া বা না দেওয়া সরকারের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। স্যাট সেই বক্তব্যকেই মান্যতা দেয়।
দীর্ঘ ১৭ মাস ধরে কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলার শুনানির শেষে ডিভিশন বেঞ্চ স্যাটের পূর্ববর্তী রায়কে খারিজ করে ফের স্যাটেই মামলা ফেরত পাঠিয়েছে। সঙ্গে হাইকোর্ট এ দিন পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, আগামী দু’মাসের মধ্যে দ্রুত শুনানি করে স্যাট-কে এই মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে।
স্যাটকে হাইকোর্ট দু’টি বিষয় ফেরত পাঠালো পুনর্বিবেচনার জন্য। মামলাকারী রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের পক্ষে আইনজীবী সর্দার আমজাদ আলি বলেন, “দু’টি বিষয় ছিল হাইকোর্টের কাছে। প্রথমত, রাজ্য সরকারি কর্মীরা কেন্দ্রীয় হারে ডি এ পাবেন কি না। দ্বিতীয়ত, এই রাজ্যের বাইরে দিল্লি বা চেন্নাইয়ে কর্মরত রাজ্য সরকারি কর্মীরা যদি কেন্দ্রীয় হারে মহার্ঘ ভাতা পান তা হলে বাকি কর্মীদের সঙ্গে এই বৈষম্য কেন? ডিভিশন বেঞ্চ এই দু’টি বিষয় স্যাটে ফেরত পাঠিয়েছে। রাজ্য সরকারকে হলফনামা পেশ করতে হবে, তার প্রত্যুত্তর দেবেন মামলাকারীরা। তার পর সিদ্ধান্ত নেবে স্যাট।”
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
সর্দার আমজাদ আলি এই রায়ের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন ডিএ-র অধিকারকে হাইকোর্ট কর্মীদের প্রাপ্য হিসেবে মান্যতা দেওয়ায়। মামলাকারী রাজ্য সরকারি কর্মীরা এই রায়কে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ঐতিহাসিক জয় হিসেবে বর্ণনা করেছেন। কনফেডারেশনের তরফে সুবীর সাহা বলেন, “এ দিন হাইকোর্টের রায়ে প্রমাণিত হল যে ডিএ দয়ার দান নয়। এটা আমাদের অধিকার। আমরা খুশি। এ বার স্যাটে মামলার পর্ব। আমরা আশাবাদী, আমাদের অধিকার আদায় করতে পারব।”
বিজেপির কর্মী সংগঠন সরকারি কর্মচারী পরিষদের আহ্বায়ক দেবাশিস শীল বলেন,“স্যাটে আমরা আগেই এ বিষয়ে মামলা করেছিলাম। হাইকোর্টের এই মামলার জন্য আমাদের মামলা স্থগিত ছিল। ফের মামলা স্যাটে ফেরত যাওয়ায় এখন আমাদের মামলাটিও ওই মামলার সঙ্গে যুক্ত হবে।” তবে রাজ্য কোর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয়শঙ্কর সিংহ হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানালেও খুব একটা আশাবাদী নন। তিনি বলেন, “কোর্ট নতুন কোনও কথা বলেনি। ডিএ কর্মচারীদের আইনি অধিকার এটা আমরা গোড়া থেকে জানি। এটাও জানি আদালত যা-ই রায় দিক না কেন, আমাদের অধিকার আদায় হবে না। আমাদের অধিকার আদায় করতে পথেই নামতে হবে।”
এর আগে স্যাটের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে আইএনটিইউসি অনুমোদিত কর্মী সংগঠন । বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত এবং বিচারপতি শেখর ববি শরাফের ডিভিশন বেঞ্চে মামলার শুনানি হয়।
মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারের তরফে হাইকোর্টে সওয়াল করা হয়েছিল, ডিএ কখনওই কর্মীদের অধিকার নয়। কনফেডারেশনের পক্ষে সওয়াল করেন আইনজীবী আমজাদ আলি। বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও সওয়াল করেন মামলাকারীদের পক্ষে। দুই আইনজীবীই সরকারের এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেন।
আরও পড়ুন: স্বপ্নার মায়ের এই ভিডিয়ো দেখলে আপনার চোখে জল আসবেই
এ দিন মামলা চলাকালীনই রাজ্য সরকার নতুন হারে ডিএ ঘোষণা করে। তবে বর্ধিত মহার্ঘ ভাতা ২০১৯-এর জানুয়ারি থেকে কার্যকরী হবে বলে ঘোষণা করা হয়। সেই বিষয়টিও আদালতে তুলে ধরে রাজ্য সরকার। ডিএ বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ হয়ে যাওয়ায় কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের কর্মীদের মহার্ঘ ভাতায় আর কোনও ফারাক নেই বলেও জানানো হয়। তবে আদালত সে যুক্তি মানেনি। উল্টে আদালত প্রশ্ন তোলে, বাজারমূল্য বৃদ্ধির জন্য যদি ডিএ দেওয়া হয়, তা হলে ২০১৯ সালে গিয়ে সেটা দেওয়ার অর্থ কী? সর্দার আমজাদ আলি এ দিন বলেন, আদালত বলেছে, অল ইন্ডিয়া কনজিউমার্স প্রাইস ইন্ডেক্স অনুযায়ী, মুদ্রাস্ফীতির হার অনুসারে মহার্ঘ ভাতা নির্ধারিত হয়। সে ক্ষেত্রে এ রাজ্যের কর্মচারীদের ডিএ-র হার কেন্দ্র বা অন্য রাজ্যের থেকে আলাদা হবে কেন?
আরও পড়ুন: বোর্ড গঠন নিয়ে সংঘর্ষ, মালদহে একরত্তির মাথা ফুঁড়ে বেরল গুলি
আর সে কারণেই আশাবাদী অধিকাংশ সরকারি কর্মী। তাঁদের একাংশের বক্তব্য, বাজার দর অনুযায়ী ডিএ সম্পর্কে হাইকোর্টের যে পর্যবেক্ষণ, তাতে এ বার কেন্দ্রীয় কর্মীদের সঙ্গে যে ৪৯ শতাংশ পার্থক্য সেটা এ বার দূর হবে।
(দুই বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, পুরুলিয়া, দুই মেদিনীপুর, বাঁকুড়া সহ দক্ষিণবঙ্গের খবর, পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা খবর, 'বাংলার' খবর পড়ুন আমাদের রাজ্য বিভাগে।)