এ বার শবরপল্লির বাসিন্দাদের ‘বাড়তি’ কাজ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হল।
চাল বিলি, স্বাস্থ্য শিবির থেকে শিশুদের জন্য ক্রেশ। শবর সম্প্রদায়ের উন্নয়নে সম্প্রতি নানা পরিকল্পনা করেছে প্রশাসন। এ বার শবরপল্লির বাসিন্দাদের ‘বাড়তি’ কাজ দেওয়ারও সিদ্ধান্ত হল।
জঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুর সম্প্রতি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে দেড়শো দিন কাজ দেওয়া হবে শবরদের। এ জন্য ব্লক থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য তলব করা হয়েছে। সেই তথ্য খতিয়ে দেখে জেলাস্তরে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা হবে। জেলাশাসক পি মোহনগাঁধীর কথায়, ‘‘একশো দিনের প্রকল্পে শবররা যাতে আরও বেশি কাজ পেতে পারেন, সেই ব্যবস্থা হচ্ছে।’’
‘মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্প’-ই একশো দিনের কাজের প্রকল্প নামে পরিচিত। কেন্দ্রীয় এই প্রকল্পে দিনে মজুরি মেলে ১৯১ টাকা। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রকল্পে বছরে একশো দিন পর্যন্ত কাজের টাকা দেয় কেন্দ্র। তবে পরিস্থিতি সাপেক্ষে বাড়তি দিন কাজ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। আর সেই সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট জেলাই নিতে পারে।
আরও পড়ুন: মরে গেলে সন্তানকে দেখবে কে? অটিজ়ম উপনগরী গড়ছেন ব্যবসায়ী দম্পতি
তবে বিরোধীদের বক্তব্য, একশো দিনের কাজের প্রকল্পে তো এখনই বছরে পুরো একশো দিন কাজ দেওয়া যায় না। তা হলে লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে লাভ কী? বস্তুত, পশ্চিম মেদিনীপুরেই এই প্রকল্পে কাজ দেওয়ার গড় বছরে ৬৬ দিন। শবরেরা এর থেকে বেশি দিন কাজ পান, এমন তথ্যও সরকারের কাছে নেই। বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশের অভিযোগ, ‘‘শবরেরা যদি বছরে ১০০ দিন কাজ পান, তা হলেও তাঁদের ভাতের অভাব হয় না। আসলে মজুরির টাকা তৃণমূলের লোকেরা মেরে দেয়। সমস্যা সেখানেই। ’’ তাঁর মতে, ১৫০ দিন কাজ দেওয়ার ঘোষণা চমক ছাড়া আর কিছুই নয়।
শমিতবাবুর অভিযোগ অস্বীকার করেছে তৃণমূল। জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি তথা তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘এক সময় আদিবাসী-জনজাতিরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। আমাদের সরকার ওঁদের বিভিন্ন প্রকল্পে যুক্ত করেছে। ওঁরা কী ভাবে আরও বেশি সুযোগ-সুবিধা পেতে পারেন, তা দেখা হচ্ছে।’’ আর জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের যুক্তি, ‘‘এই জেলায় একশো দিন প্রকল্পের কাজ আগের থেকে এখন অনেক ভাল হচ্ছে। যেখানে বাড়তি কাজের চাহিদা থাকবে, সেখানেই যাতে কাজ দেওয়া যায় তাই এই বন্দোবস্ত করে রাখা হল।’’
‘বাড়তি’ ৫০ দিন কাজের টাকা কে দেবে, সেই প্রশ্নও উঠেছে।
একশো দিনের প্রকল্পের জেলা আধিকারিক মনমোহন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই টাকা রাজ্য দেবে। সরকারি নিয়মে সেই সংস্থান রয়েছে।’’ তা হলে তা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সঙ্গে জোড়া হচ্ছে কেন? জেলা প্রশাসনের ব্যাখ্যা, দৈনিক মজুরিভিত্তিক এই একটি কর্মসংস্থান প্রকল্পই রয়েছে। তাই এই বন্দোবস্ত। বাড়তি কাজের সিদ্ধান্তে খুশি লোধা-শবর কল্যাণ সমিতি। সংগঠনের জেলা সম্পাদক বলাই নায়েক বলেন, ‘‘প্রশাসনের এই উদ্যোগ ভাল। তবে মজুরির টাকা যাতে দ্রুত মেলে, সেটাও দেখা হোক।’’