ধর্মতলায় যুব কংগ্রেসের সমাবেশে পুলিশের গুলিতে মারা গিয়েছিলেন ১৩ জন। সে সময় যুব কংগ্রেসের সভানেত্রী ছিলেন আজকের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাম জমানায় ১৯৯৩ সালের সেই ঘটনা নিয়ে ক্ষমতায় এসেই বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠন করেছিলেন তিনি। শুক্রবার ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ থেকে বিচারবিভাগীয় কমিশনের সুপারিশ মেনে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি জানিয়ে দেন, গুলিচালনার ঘটনায় মূল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করবে সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, কমিশনের তদন্তে জানা গিয়েছে, সে দিন বড় চক্রান্ত হয়েছিল। চক্রান্ত করে যুব কংগ্রেস কর্মীদের হত্যা করা হয়েছিল। মমতা কথায়, ‘‘সে দিন ১৩ জন গুলিতে মারা গিয়েছিলেন। এক হাজার জন আহত হয়েছিলেন। তার মধ্যে ১০০ জনের বুলেটের আঘাত ছিল। এই ঘটনার ধিক্কার জানাই।’’ তিনি এ-ও বলেন, ‘‘প্রতিহিংসায় বিশ্বাস করি না। জ্যোতিবাবু, বুদ্ধবাবুকে ছোঁব না। তবে অন্যদের ছাড়া হবে না।’’
মমতা বলেন, ‘‘ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যাঁদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করে নিতে বলেছে কমিশন। অভিযুক্তদের শাস্তি এবং শহিদদের ক্ষতিপূরণ দিতে বলেছে।’’ কমিশনের সুপারিশ মেনেই মুখ্যমন্ত্রী ১৩ জন মৃতের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানান। পাশাপাশি ওই পরিবারগুলির জন্য যে চাকরির ব্যবস্থা করেছেন, তা-ও জানান মুখ্যমন্ত্রী।
২১ জুলাই তদন্ত কমিশনের রিপোর্ট বিচারপতি সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় জমা দিয়েছিলেন ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। এ সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী তদন্ত রিপোর্ট জমা পড়ার ছ’মাসের মধ্যে ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’-সহ তা বিধানসভায় পেশ করতে হয়। স্বরাষ্ট্র দফতর সূত্রের খবর, এখনও সেই রিপোর্ট বিধানসভায় পেশ হয়নি। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, কমিশনের রিপোর্ট পেশ হওয়ার আগেই তার সুপারিশ মেনে পদক্ষেপের কথা বাইরে ঘোষণা করায় মুখ্যমন্ত্রী কি আইন ভাঙলেন?
আরও পড়ুন: মমতা নিজে ক্ষমতায় থাকতে পারবেন তো? পাল্টা কটাক্ষে দিলীপ ঘোষ
স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী রিপোর্টের কোনও অংশ তো বলেননি। যা আইনত বলা যায়, তাই বলেছেন।’’
বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে এত বড় সমাবেশ সামলানোর ক্ষেত্রে সমন্বয়ের অভাবের কথা বলা হয়েছে। ঘটনার পর স্বরাষ্ট্র দফতরের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ঘটনাচক্রে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রসচিব মণীশ গুপ্ত এখন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ। কমিশনের রিপোর্টে, ম়ৃতদের শহিদ হিসাবে ঘোষণা করা হলেও গুলি চালনার জন্য নির্দিষ্ট ভাবে কাউকে দায়ী করা যায়নি। তবে স্বরাষ্ট্র দফতরকে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের ভূমিকা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে রিপোর্টে। সরকার অবশ্য মনে করছে, আইন অনুযায়ী কাউকে ‘শহিদ’ ঘোষণা করার ব্যবস্থা নেই। ক্ষতিপূরণ দেওয়া যেতে পারে। তা ছাড়া, গুলি চালনার ঘটনায় স্বরাষ্ট্রসচিব বা পুলিশ কমিশনারের কোনও ভূমিকা থাকে না। অকুস্থলে কাজ করা পুলিশ অফিসারেরাই এর জন্য দায়িত্বশীল থাকেন। এ কথা জানিয়ে ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’-সহ কমিশনের রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে পড়ে রয়েছে প্রায় এক বছর। এত দিন উচ্চবাচ্য না করে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন এফআইআর করার কথা ঘোষণা করায় সরকারি মহলে প্রশ্ন, কার বিরুদ্ধে এফআইআর হবে? কারণ, ২৪ বছর আগের ২১ জুলাইয়ের ঘটনার মূল ফাইলটিই তো উধাও!
এ প্রসঙ্গে সিপিএম রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘‘আমরা তো এখনও রিপোর্টই দেখলাম না। সবই তো মুখ্যমন্ত্রীর মুখ থেকে শুনলাম।’’