আবগারি নীতিতে কিছু বদল আনছে রাজ্য সরকার

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে জাতীয় সড়ক লাগোয়া মদের দোকান ও অন শপগুলি (যেখানে বসে মদ খাওয়া যায়)-র বন্ধ হওয়া ঠেকাতে এ বার আবগারি নীতিতে কিছু বদল আনছে রাজ্য সরকার। বন্ধ দোকানের মালিকরা অন্য জায়গায় দোকান সরাতে চাইলেও, রাজ্য তাঁদের পাশে দাঁড়াচ্ছে।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:৪৬
Share:

বন্ধ: সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ঝাঁপ পড়েছে জাতীয় সড়কের ধারের মদের দোকানে। ছবি: পিটিআই।

সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে জাতীয় সড়ক লাগোয়া মদের দোকান ও অন শপগুলি (যেখানে বসে মদ খাওয়া যায়)-র বন্ধ হওয়া ঠেকাতে এ বার আবগারি নীতিতে কিছু বদল আনছে রাজ্য সরকার। বন্ধ দোকানের মালিকরা অন্য জায়গায় দোকান সরাতে চাইলেও, রাজ্য তাঁদের পাশে দাঁড়াচ্ছে।

Advertisement

জাতীয় ও রাজ্য সড়ক থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে মদের দোকান এবং অন শপ রাখা যাবে না বলে সম্প্রতি নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। নবান্নের কর্তারা জানান, এই অবস্থায় জাতীয় সড়কের ৫০০ মিটারের বাইরে কেউ দোকান খুলতে চাইলে নতুন করে লাইসেন্স লাগবে না। পুরনো লাইসেন্সেই নতুন দোকান খুলতে পারবেন মালিক। বাড়তি সুবিধা হিসাবে সরকারকে কোনও ‘ফি’ বা ক্ষতিপূরণও দিতে হবে না।

আদালতের নির্দেশে রাজ্যের ১৫৩৯টি দোকান ১ এপ্রিল থেকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এর মধ্যে রাজ্য সড়কের ধারে ছিল ৬৪৭টি এবং জাতীয় সড়কের ধারে ৮৯২টি। বিকল্প জায়গা দেখে সরে যাওয়ার জন্য জাতীয় সড়কের পাশের দোকানগুলির মালিকদের ইতিমধ্যেই প্রস্তাব দিয়েছেন জেলাস্তরের আবগারি অফিসারেরা। এক আবগারি কর্তা জানান, নতুন এই পরিকল্পনা কার্যকর করার জন্যই আবগারি নীতি সংশোধন করা হচ্ছে।

Advertisement

• দোকান

• জাতীয় সড়কের ধারে

• রাজ্য সড়কের ধারে

• রাজ্য সড়ক

• বাদ গেল

• চরিত্র বদল

১৫৯৩

৮৯২

৬৪৭

৩৭৫৪.৫৫ কিমি

২৭৭.২৫ কিমি

১৭০ রাস্তা

চলতি নিয়মে নতুন জায়গায় মদের দোকানের লাইসেন্স দিতে গেলে সরকারকে লটারি করতে হয়। এ রাজ্যে ২০০৫ সালে শেষ বারের মতো নতুন মদের দোকানের লাইসেন্স দিয়েছিল রাজ্য। এখন জাতীয় সড়ক লাগোয়া দোকানগুলি অন্যত্র সরাতে হলে সেটা নতুন জায়গা হিসাবেই বিবেচিত হবে। এই জটিলতা কাটাতেই আবগারি নীতি সংশোধন করতে হবে। তাতে বলা হবে, জাতীয় সড়ক লাগোয়া দোকানগুলি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হলে তাদের পুরনো লাইসেন্সপ্রাপক হিসাবেই ধরা হবে। দোকান সরালে লাইসেন্স ফি-এর দেড়গুণ টাকা সরকারকে দিতে হয়। এ ক্ষেত্রে ফি দিতে হবে না দোকান মালিকদের।

আরও পড়ুন: ​তকমা ঘুচল রাজ্য সড়কের

আদালতের নির্দেশের ফলে দার্জিলিং জেলার প্রায় সব মদের দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। শিলিগুড়ি থেকে পাহাড়ে ওঠার পথে জাতীয় সড়কে ১০৫টি এবং রাজ্য সড়কে ৩০টি মদের দোকান রয়েছে। সে সব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাহাড়ে মদের হাহাকার চলছে। সেখানে কালোবাজারি শুরু হয়েছে মদের।

আবার, উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত মহকুমাতেও একই পরিস্থিতি। ৩৪ এবং ৩৫ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং বারাসত রোডের ধারে সমস্ত দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে সেখানে ৬৫ টাকার দেশি মদের বোতল বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়। আবগারি কর্তারা জানাচ্ছেন, একই অবস্থা দক্ষিণ ২৪ পরগনা, খড়গপুর, বর্ধমান ও আসানসোলেও।

অফ এবং অন শপ মিলিয়ে রাজ্যের প্রায় ৫৬০০টি দোকানের মধ্যে ১৫৩৯টিই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকার ধাক্কায় বন্ধ। আবগারি দফতরের হিসেব, এতে বছরে প্রায় ১২০০ কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে হবে। এবং বৈধ মদের জোগান কমে যাওয়ায় চোলাই, নকল ও বিষ মদের রমরমা বাড়বে। তাতে মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়বে বলেই মনে করছেন আবগারি দফতরের কর্তারা।

এক কর্তার কথায়, ‘‘সরকারের প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে যদি অর্ধেক দোকানও সরে যায়, তা হলে অন্তত কিছুটা রাজস্ব ক্ষতি বাঁচানো যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement