—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
আদালতে নিজেদের মামলা শক্তপোক্ত করতে ২৩ জন নতুন ল-অফিসার বা আইন আধিকারিককে নিয়োগ করছে সরকার।
কলকাতা হাই কোর্ট কিংবা সুপ্রিম কোর্টে একের পর এক মামলায় ধাক্কা খাচ্ছে রাজ্য সরকার। নিয়োগ দুর্নীতি থেকে একের পর এক জনস্বার্থ মামলায় কলকাতা হাই কোর্টের রায় গিয়েছে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। পুলিশ সংক্রান্ত বহু মামলাতেও মুখ পুড়েছে রাজ্য সরকারের।
ঘটনাচক্রে, এমন পরিস্থিতিতে কলকাতা হাই কোর্টে রাজ্যের সরকারি আইনজীবী বদল হয়েছেন। পদত্যাগ করেছেন রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেলারেলও। এখন রাজ্য সরকারের বিভিন্ন দফতরে ‘ল অফিসার’ বা আইন আধিকারিক নিয়োগ করছে নবান্ন।
নবান্ন সূত্রের খবর, গত ১২ অক্টোবর হওয়া রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকেই ওই ২৩ জন ল-অফিসারকে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এগুলি সব নতুন পদ। ঠিক হয়েছে, এখন সরকারের অন্য দফতরে থাকা আইন-আধিকারিকদের মধ্যে থেকে বদলি এবং ডেপুটেশনের ভিত্তিতে ওই ২৩ জনকে নিয়োগ করা হবে।
নবান্ন সূত্রের খবর, এই ২৩ জনকে নিয়োগ করা হচ্ছে কৃষি বিপণন, ভুমি ও ভূমি রাজস্ব, কারিগরি শিক্ষা, পাবলিক সার্ভিস কমিশন, পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের অধীনস্থ ডাইরেক্টরেট, জলপাইগুড়ি-বর্ধমান-মেদিনীপুর ডিভিশনাল কমিশনারের কার্যালয়, রাজ্য পুলিশের ডিজি, কলকাতা পুলিশ কমিশনার, আসানসোল দুর্গাপুর-হাওড়া-বিধাননগর-শিলিগুড়ি-চন্দননগর পুলিশ কমিশনারেট এবং আলিপুরদুয়ার, ঝাড়গ্রাম, হুগলি, নদিয়া, পশ্চিম বর্ধমান ও পুরুলিয়া জেলাশাসকের কার্যালয়ে।
অভিজ্ঞ আধিকারিকদের একাংশের বক্তব্য, নজর রাখা হয়েছে ফৌজদারি আইনে পারদর্শী আইনি পরামর্শদাতা নিয়োগে। কারণ, পুলিশের যে মামলাগুলিতে রাজ্য ধাক্কা খাচ্ছে, সেগুলি প্রধানত ফৌজদারি। আবার বিভিন্ন দফতরের যে প্রয়োজন, তাতেও ফৌজদারি আইন জানা পরামর্শদাতাদের চাহিদা বাড়ছে। তা ছাড়া জমি আইন, পুর আইনে পারদর্শী আইনি পরামর্শদাতাদের নিয়োগে নজর রাখা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই প্রশাসনের শীর্ষমহলে আইনমন্ত্রীর উপস্থিতিতে একটি বৈঠক হয়। তার পরেই সরকারি আইনজীবী পদে কর্মরত শাশ্বতগোপাল মুখোপাধ্যায়ের জায়গায় আনা হয়েছিল দেবাশিস রায়কে। আবার গত সপ্তাহেই রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় রাজ্যপালের কাছে তাঁর পদত্যাগ পত্র পাঠিয়েছেন। শোনা যাচ্ছে, নতুন অ্যাডভোকেট জেনারেল পদে কিশোর দত্তের নাম নবান্নের শীর্ষমহলের পছন্দ। তিনি আগেও অবশ্য রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল ছিলেন। অনেকেই মনে করছেন, এর সঙ্গে ল-অফিসারদের দ্রুত নিয়োগ কার্যকর করা সঙ্গতিপূর্ণ।
এমনিতেই সরকারের বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতির অভিযোগে জেরবার রাজ্যের শাসকদল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আদালতের নির্দেশে ওই সব মামলার তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। রাজ্য প্রশাসনের একাংশের মতে বিভিন্ন দফতরের সঙ্গে আইনজীবীদের সমন্বয়ের অভাবেই ওই ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের মতে, মামলা চলাকালীন আদালতে সঠিক সময়ে সঠিক তথ্য তুলে ধরার ক্ষেত্রেও সমন্বয়ের অভাবে ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। তার ফলেই আদালতে ধাক্কা খাচ্ছে রাজ্য।
দীর্ঘদিন ধরেই সিআইডিতে একজন আইনি পরমার্শদাতা রয়েছেন। তিনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিআইডিকে আইনি পরমার্শ দিয়ে থাকেন। রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, আদালতে পুলিশের ভূমিকা সব সঠিক ভাবে তুলে ধরার জন্য এডিজি পদমর্যাদার একটি পদও তৈরিকরা হয়েছে।