নয়াচরের জমি ফেরত নিচ্ছে সরকার

ভোটের মুখে আবার নয়া নাটক নয়াচরে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট-২০১৬’-র মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছেন— ‘‘সরকার নয়াচরের জমি নিজেদের হাতে নিয়ে নেবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:২৪
Share:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়। শনিবার ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট-২০১৬’-র মঞ্চে। — নিজস্ব চিত্র।

ভোটের মুখে আবার নয়া নাটক নয়াচরে।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার ‘বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট-২০১৬’-র মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছেন— ‘‘সরকার নয়াচরের জমি নিজেদের হাতে নিয়ে নেবে। পরিবর্তে বারুইপুরে ১০০ একর জমি দেওয়া হবে ওই জমির লিজগ্রহীতা প্রসূন মুখোপাধ্যায়কে।’’ নবান্ন সূত্রে খবর, পরিবেশ দফতরের কড়া আপত্তির পরে নয়াচরে এখন পরিবেশ বান্ধব কোনও উদ্যোগের জন্য বিনিয়োগ টানতে উদ্যোগী হয়েছেন মমতা।

মুখ্যমন্ত্রীর শনিবারের ঘোষণায় নয়াচরে শিল্পায়ন বিতর্ক ফের সামনে চলে এল। ২০০৬ সালে ভোটে জেতার পর ওই দ্বীপেই শিল্প গড়তে এগিয়েছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু নয়াচর-নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব গড়ার তুমুল বিরোধিতা করেই ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসেছিলেন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে চার বছর কেটে গিয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক শর্ত বেঁধে দেওয়ায় নয়াচরে এক ঝুড়ি মাটিও পড়েনি।

Advertisement

শনিবারের ঘোষণার আগে বৃহস্পতিবার নয়াচরের জমির মালিক প্রসূন মুখোপাধ্যায়কে নবান্নে ডেকে পাঠিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই তিনি প্রসূনবাবুকে জানিয়ে দেন— এত দিন ফেলে রাখার পরও নয়াচরে তিনি কিছু করতে না-পারায় ওই জমি তাঁকে ছেড়ে দিতে হবে। পরিবর্তে বারুইপুরের যে ১০০ একর জমির লিজ প্রসূনবাবু পাননি, তা সরকার দিয়ে দেবে। তিনি সেই জমিতে আবাসন প্রকল্প গড়বেন। সরকারি সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব মেনে জমি ফেরত দিতে রাজি হয়ে যান এই সিঙ্গাপুর প্রবাসী ব্যবসায়ী। শুধু সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার জন্য নয়াচরে কিছু জমি চেয়েছেন প্রসূনবাবু। এ জন্য কমপক্ষে হাজার তিনেক একর জমি প্রয়োজন। নবান্ন সূত্রে খবর, প্রসূনবাবুর থেকে জমি ফেরতের খুঁটিনাটি বিষয়গুলি এখনও চূড়ান্ত হওয়া বাকি।

এ দিন সম্মেলন শেষে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা নয়াচরের জমি ফিরিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘জমিটা হাতে আসার পর সরকার নিজেরা পরিকল্পনা করবে। নয়াচরে পরিবেশ বান্ধব শিল্পই গড়া হবে। ১২ হাজার একর জমি কাজে লাগালে অনেক কর্মংস্থান হবে।’’

মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাবে আপত্তি নেই প্রসূনবাবুরও। তিনি বলেন, ‘‘আর্থিক ক্ষতি হলেও এই প্রস্তাবে আশাবাদী। নয়াচরে শিল্প হলে আমার থেকে বেশি খুশি কেউ হবে না। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনেই আমি চলব।’’

কিন্তু তার পরেও নয়াচরের ভবিষ্যৎ নিয়ে বণিক মহলে প্রশ্নের শেষ নেই। কারণটা আর কিছুই নয়, নয়াচরের ইতিহাস।

২০০৬-এ ক্ষমতায় আসার পর প্রথমে নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব করার কথা ঘোষণা করেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমি আন্দোলন এবং ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে গুলি চালনার ঘটনার পরে রাজ্যের সব মহলে সরকার-বিরোধিতা তীব্র হয়ে ওঠে। তার ফলে বাম সরকার সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে আসে। ২০০৮-০৯ সালে হলদিয়ার পাশাপাশি নয়াচরে কেমিক্যাল হাব নির্মাণের কথা ঘোষণা করে বাম সরকার। ৩০ কোটি টাকায় নয়াচরের ১২ হাজার একর জমি প্রসূনবাবুকে দেওয়া হয়। পাশাপাশি নয়াচরের পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য তাঁকে যে বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করতে হবে, তা পুষিয়ে দিতে বারুইপুরে ৮ কোটি টাকার বিনিময়ে দেওয়া হয় আরও ১০০ একর জমি। কিন্তু কেমিক্যাল হাবের কাজ না-এগোনোয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সরকার ২০১০ সালে প্রসূনবাবুর সঙ্গে এ সংক্রান্ত সমস্ত চুক্তি বাতিল করে দেয়। তার বিরুদ্ধে মামলা করেন প্রসূনবাবু।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরে ফের উঠে আসে নয়াচরের প্রসঙ্গ। এ বার প্রসূনবাবুকেই ওই দ্বীপে পর্যটন, শিল্প পার্ক এবং তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কথা বলেন মমতা। প্রসূনবাবুও মামলা তুলে নেন। এর পর চার বছর কেটে গেলেও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র মেলেনি। ওই দ্বীপে কোনও ধরনের নির্মাণ কাজই করা যাবে না বলে জানিয়ে দেন মন্ত্রকের বিশেষজ্ঞরা। সেই থেকেই অচলাবস্থা চলছিল।

নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘সরকার জমি ফিরিয়ে নেওয়ায় প্রসূনবাবুরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। কারণ, পরিবেশের শর্ত মেনে নয়াচরে কার্যত কিছুই করা সম্ভব নয়। তবু দ্বীপের উন্নয়নের কথা ভেবেই মুখ্যমন্ত্রী উদ্যোগী হচ্ছেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement