খয়রাতির জেরে রাজ্যের আর্থিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বলে মনে করছেন অর্থ দফতরের কর্তারাও। ফাইল চিত্র।
রাজকোষের দুর্দশা যখন চরমে, উৎসব-মেলা-খেলায় দেদার অনুদান কেন? এই প্রশ্ন তুলে বিরোধী রাজনৈতিক শিবির তো বটেই, রাজ্যের অন্য নানা মহলও বহু দিন ধরে সরব। পরের পর খয়রাতির জেরে রাজ্যের আর্থিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বলে মনে করছেন অর্থ দফতরের কর্তারাও। গত মরসুম-সহ গত কয়েক বছরে সারা রাজ্যে উৎসব-খয়রাতিতে কয়েক কোটি টাকা খরচ করার পরে এত দিনে খরচে রাশ টানতে মরিয়া হয়ে উঠেছে সরকার। সেই নিয়ন্ত্রণের সূচনা হচ্ছে রাজ্যব্যাপী ‘বিবেক চেতনা’ উৎসব বন্ধ করার মধ্য দিয়ে।
নবান্ন সূত্রের খবর, রাজ্য জুড়ে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন উপলক্ষে এত দিন ‘বিবেক চেতনা’ উৎসব পালনের খরচ জোগানো হত উন্নয়নের টাকা থেকেই। বিরোধীদের অভিযোগ, রাজ্যের ভাঁড়ে মা ভবানী দশার মূলে আছে খেলা-মেলা-উৎসবে অবাধ খরচ। বিপদ বুঝেই সারা রাজ্যে এ বার বিবেক চেতনা উৎসব বন্ধ রাখতে বাধ্য হচ্ছে সরকার। রাজ্যের যুবকল্যাণ দফতরের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বৃহস্পতিবার জানান, ওয়ার্ড বা ব্লক ভিত্তিতে নয়, এ বার স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন উপলক্ষে কেন্দ্রীয় ভাবে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে একটিই অনুষ্ঠান হবে।
২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর থেকে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন উপলক্ষে রাজ্য জুড়ে ‘বিবেক চেতনা উৎসব’ পালন করে আসছে রাজ্য সরকার। ওই উৎসবের জন্য ২০২১ সাল পর্যন্ত কলকাতা পুরসভার ১৪৪টি ওয়ার্ডের প্রতিটির জন্য ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছে যুব কল্যাণ দফতর। একই ভাবে সারা রাজ্যের প্রতিটি পুরসভা ও ব্লকে ওই উৎসবের জন্য টাকা বরাদ্দ করা হত। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, করোনা দাপটের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছর ওয়ার্ড-পিছু বরাদ্দ কমিয়ে ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছিল। ২০২২ সালে ১৪৪টি ওয়ার্ডে বিবেক চেতনা উৎসব করার জন্য রাজ্যের যুব কল্যাণ দফতর ২১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা দিয়েছিল পুরসভাকে।
কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা বাম সাংসদ বিকাশ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এখন আর উৎসবের জন্য খরচ ছাঁটাই করে কাজের কাজ কিছু হবে না। এমনিতেই রাজ্যের আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। খরচ ছাঁটাইয়ের চিন্তাভাবনা আরও আগে করা উচিত ছিল।’’ কলকাতা পুরসভার বিজেপি কাউন্সিলর সজল ঘোষের অভিযোগ, ‘‘এ বার নেতাজি ইন্ডোরে কেন্দ্রীয় ভাবে স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন পালন করতে তৃণমূল সারা রাজ্য থেকে গাড়িতে নিজেদের কর্মী নিয়ে আসবে। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বেশি করে প্রচারে আসবেন। এতে খরচ আরও বেশি হবে।’’
তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দিচ্ছে না। প্রাপ্য মিলছে না। আয় বুঝে ব্যয় করার সিদ্ধান্তে কোনও দোষ নেই। বিরোধীদের এমন নোংরা রাজনীতির খেলা একেবারে মানায় না।’’