দশ হাজার কোটির রেকর্ড রাজস্ব মদে

‘‘নিজেরই নিয়মে এই রোজগার হয়েছে। সরকারের নীতিই হল, মদ বিক্রিতে তেমন ভাবে উৎসাহ না-দেওয়া,’’ বলছেন নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা।

Advertisement

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৯ ০৩:১১
Share:

প্রতীকী ছবি।

পশ্চিমবঙ্গে আবগারি আইন চালু হয়েছিল ১৯০৯ সালে। ১০০ বছর বছর পরে এই প্রথম বাংলার আবগারি রাজস্ব ১০ হাজার কোটি টাকা ছুঁয়েছে।

Advertisement

রাজ্যের আবগারি দফতরের খবর, জানুয়ারির মাঝামাঝি মদ বিক্রি বাবদ সরকার ১০ হাজার কোটি ঘরে তুলেছে। ২০১১-১২ সালে তৃণমূল সরকার যখন ক্ষমতায় আসে, সেই সময় মদ বেচে কোষাগারে আসত ২১১৭ কোটি টাকা। আট বছরে সেটাকে ১০ হাজার কোটিতে পৌঁছে দিয়েও সরকারের তরফে অবশ্য কেউ কৃতিত্ব নিতে চাইছেন না। ভোটের বাজারে পরিস্থিতি এমনই যে, মদ বিক্রিতে সরকারি সাফল্য নিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না কেউই।

‘‘নিজেরই নিয়মে এই রোজগার হয়েছে। সরকারের নীতিই হল, মদ বিক্রিতে তেমন ভাবে উৎসাহ না-দেওয়া,’’ বলছেন নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা। যদিও ওই দফতরের তরফে কিছু কর্তা এই বিষয়ে জেলার অফিসারদের বাহবা দিয়েছেন। মদের থেকে রোজগার আরও বাড়ানোর জন্য অফিসারদের কাছে নির্দেশও গিয়েছে নবান্ন থেকে।

Advertisement

কী ভাবে বাড়ল এই আয়?

কর্তাদের ব্যাখ্যা, সরকারি মদের বিক্রি বেড়েছে বলেই রাজস্ব বেড়েছে। বেআইনি মদের কারবারের ক্ষেত্রে তৃণমূল সরকার কঠোর অবস্থান নেওয়ায় চোলাই, পচাই, ধেনোর বিক্রিতে রাশ টানা গিয়েছে। পরিবর্তে সরকারি মদের বিক্রি বেড়েছে। ফলে রোজগারও বেড়েছে।

কর্তাদের একাংশ জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরে আবগারি ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার হয়েছে। এখন দিশি বা বিলিতে বলে আলাদা আর কোনও মদের দোকান নেই। যে-কোনও দোকানে এখন সব ধরনের মদ পাওয়া যায়। যেমন ধর্মতলার বিলিতি মদের দোকানেও এখন সরকারি ‘বাংলা’ মদ পাওয়া যায়। আবার প্রত্যন্ত এলাকার ‘দেশি মদের দোকান’-এ পাওয়া যায় ‘বিলিতি’। এ ছাড়া সরকার সমস্ত বার, রেস্তরাঁতেও বোতলে মদ বিক্রির অনুমতি দিয়ে দিয়েছে। সম্প্রতি পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রায় ৫০টি পচাইয়ের দোকানে বিলিতি মদ বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সরকারি সূত্রের দাবি, গত ১০০ বছরে সব মিলিয়ে সাড়ে চার হাজার দোকান ছিল। নতুন মদের দোকান খোলার জন্য হাজার তিনেক আবেদন পড়ে রয়েছে। প্রায় ১০০০ নতুন দোকানের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে চলতি বছরে। ভোটের জন্য আপাতত তা স্থগিত রাখা হয়েছে।

আবগারি-কর্তারা জানান, জিএসটি-পরবর্তী সময়ে রাজ্যের নিজস্ব রোজগারের অন্যতম পথ মদ বিক্রি। আগে মদের উপরে আবগারি শুল্ক ছাড়াও অতিরিক্ত বিক্রয়কর আদায় করত সরকার। এখন সেই বিক্রয়কর তুলে দিয়ে আবগারি শুল্কের পরিমাণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। গড়ে ১০০ টাকায় ৬৫ থেকে ৭০ টাকা শুল্ক নেয় আবগারি দফতর। বিক্রি বেড়েছে, দোকান বেড়েছে আর শুল্ক বেড়েছে। ফলে মদ বেচে রাজকোষ উপচে পড়াই স্বাভাবিক বলে মনে করছেন আবগারি কর্তাদের একাংশ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement