মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও চন্দ্রবাবু নায়ডু
চলতি মাসের ৮ তারিখে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সিবিআই-কে দেওয়া ‘জেনারেল কনসেন্ট’ বা সাধারণ সম্মতি প্রত্যাহার করেছিলেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নায়়ডু। বৃহস্পতিবার রাতে সে খবর প্রকাশ্যে আসে। শুক্রবার দুপুরে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূলের সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘চন্দ্রবাবু ঠিক করেছেন, সিবিআই-কে ঢুকতে দেব না বলেছেন। নিয়ম তো আছে। আমিও খতিয়ে দেখেছি। আমাদেরও আইনটা দেখে নিতে হবে।’’ সেই কাজ সারা হয় কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। দেখা যায় এ রাজ্যেও ১৯৮৯ সালে এমন ‘সাধারণ সম্মতি’ দেওয়া হয়েছিল। সেই ছাড়পত্র প্রত্যাহারের নির্দেশ জারি হওয়ার পরে নবান্ন ছাড়েন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারের শীর্ষস্তরের অভিমত, এর ফলে রাজ্যে কর্মরত সর্বস্তরের কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা সবাই ‘সুরক্ষিত’ হয়ে গেলেন।
কী এই ‘সাধারণ সম্মতি’?
দিল্লি স্পেশ্যাল পুলিশ এস্ট্যাব্লিশমেন্ট অ্যাক্ট (১৯৪৬) অনুযায়ী সিবিআই গঠিত হয়েছে। যার মূল উদ্দেশ্য, কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা বা তার কর্মীদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করা। তবে সিবিআই-কে কোনও রাজ্যে কর্মরত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গেলে বা রাজ্যে অবস্থিত কেন্দ্রীয় সরকারের কোনও দফতরে তল্লাশি চালাতে গেলে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের অনুমতি নিতে হয়।
(ইতিহাসের পাতায় আজকের তারিখ, দেখতে ক্লিক করুন — ফিরে দেখা এই দিন।)
সিবিআই সূত্র বলছে, প্রায় সব রাজ্যই একটি আগাম সম্মতি দিয়ে রাখে। যার ফলে প্রতিটি ক্ষেত্রে আর আলাদা করে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন হয় না। ক’দিন আগে সেই সম্মতিই প্রত্যাহার করেছে অন্ধ্রপ্রদেশ। শুক্রবার করল পশ্চিমবঙ্গ। ফলে এখন থেকে ওই দুই রাজ্যে কর্মরত কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে তদন্ত করতে গেলে বা কেন্দ্রীয় সরকারি দফতরে তল্লাশি চালাতে গেলে প্রতিটি ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা করে অনুমতি নিতে হবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে। নবান্নের এক শীর্ষকর্তা বলেন, “সিবিআই অযথা হয়রানি করার মনোভাব নিয়ে চলছে। তাই এই সিদ্ধান্ত নিতে হল।” ভবিষ্যতে বিষয় সাপেক্ষে (কেস-টু-কেস) অনুমতি দেওয়ার বিষয়টি রাজ্য বিবেচনা করবে বলে তিনি জানান।
আরও পড়ুন: ‘কার ভাত জোটে না, দেখুন, পাশে বসুন’
সাম্প্রতিক অতীতে সারদা, রোজ ভ্যালি, নারদ তদন্তে এ রাজ্যে কয়েক জন আইপিএস অফিসারকে তলব করেছিল সিবিআই। তাতে বেশ অসন্তুষ্ট হন প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা। দু’পক্ষে চলে চিঠি চালাচালি। সিবিআইয়ের সৌজন্য নিয়েও প্রশ্ন তোলে রাজ্য। নবান্নের এক শীর্ষকর্তা এ দিন বলেন, “অতীতে প্রাক্তন এক সাংসদকে সিবিআই চিঠি পাঠিয়েছিল। কিন্তু তা পাঠানো হয় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির ঠিকানায়! এটা শিষ্টাচার নয়।’’
এ রাজ্যে তৃণমূলের বিভিন্ন নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন সময়ে সিবিআইয়ের জেরার মুখে পড়তে হয়েছে। বিভিন্ন বেসরকারি অর্থলগ্নি সংস্থায় জড়িত থাকার অভিযোগে সিবিআই অনেককে গ্রেফতারও করেছিল। রাজ্যের নানা সংস্থায় বিভিন্ন সময়ে সিবিআই অভিযান চালিয়ে রাজ্য সরকারকে হেনস্থা করছে বলে বারবারই অভিযোগ করেন মমতা। সেই প্রসঙ্গের ইঙ্গিত দিয়ে এ দিন দলীয় সভায় তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘সিবিআই থেকে আরবিআই, যা ইচ্ছে তাই করছে। পুরো বিপর্যস্ত অবস্থা। ক্ষমতার অপব্যবহার করছে কেন্দ্র। ছবি বিক্রি করে, গান গেয়ে দলের জন্য টাকা তুললেও বলবে চুরি করেছি।’’
এর পরিপ্রেক্ষিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক রাহুল সিংহের প্রতিক্রিয়া, ‘‘যে-ই শুনেছেন চন্দ্রবাবু সিবিআই-কে আটকানোর চেষ্টা করেছেন, সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে সমর্থন করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু চোর, ডাকাত ছাড়া পুলিশকে কে ভয় পায়! সিবিআই-কে আটকানো অত সহজ নয়। দেশে আইন রয়েছে।’’
এ দিন দিল্লি থেকে সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে ‘সাধারণ সম্মতি’ প্রত্যাহার সংক্রান্ত কোনও নির্দেশ এখনও তাদের হাতে এসে পৌঁছয়নি। এ রকম কোনও নির্দেশ এলে তা পরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।