রাজ্যের ভাঁড়ারে যে-সব ক্ষেত্র থেকে রাজস্ব আসে, বৃত্তিকর তার অন্যতম। কিন্তু বাণিজ্যিক গাড়ি থেকে শুরু করে বিভিন্ন পেশায় সেই কর ফাঁকির বহর বাড়ছে। তার মোকাবিলায় কিছু দাওয়াইয়ের কথা ভাবছে রাজ্যের অর্থ দফতর। সেই সঙ্গে বৃত্তিকর সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে চায় রাজ্য।
বৃত্তিকর না-দিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার অধিকার রয়েছে সরকারের। অর্থ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বৃত্তিকর রাজ্যের নিজস্ব কর ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। রাজ্যে বছরে প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা বৃত্তিকর আদায় হয়।’’ অর্থ দফতরের আধিকারিকদের বক্তব্য, যে-কোনও ধরনের লাইসেন্স অথবা পারমিট নবীকরণের সময় আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছে বৃত্তিকর প্রদানের শংসাপত্র জমা দিতে হয়। কিন্তু অনেক দফতরই এই বিষয়ে সচেতন নয়। ওই দফতরগুলির সহায়তা পেলে বৃত্তিকর আদায়ের পরিমাণ অনেক বাড়বে।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এ ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক গাড়ির ক্ষেত্রেই দাওয়াই প্রয়োগ শুরু হচ্ছে। এই ধরনের গাড়ির মালিকদের অনেকেই বৃত্তিকর দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ। বেশ কিছু দিন ধরেই এই প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছিল। সম্প্রতি তা বেড়েছে বলে জানতে পেরেছে অর্থ দফতর। পারমিট নবীকরণের সময় গাড়ি-মালিকেরা যাতে বৃত্তিকর প্রদান সংক্রান্ত শংসাপত্র জমা দেন, তা নিশ্চিত করার জন্য তৎপর হতে পরিবহণ দফতরকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছে তারা।
অর্থ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বৃত্তিকরের পরিমাণ খুবই কম। এর সর্বাধিক পরিমাণ বছরে আড়াই হাজার টাকা। তা-ও অনেকে দিতে চান না! এই প্রবণতা দেখা গিয়েছে
বাণিজ্যিক গাড়ি-মালিকদের একাংশের মধ্যেও।’’ ওই অর্থকর্তা জানান, বৃত্তিকর দেওয়ার দায়বদ্ধতা রয়েছে, এমন অনেকেই এই কর দেন না। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন পেশায় যুক্ত ব্যক্তি, রয়েছেন কয়েক লক্ষ বাণিজ্যিক গাড়ির মালিক। গাড়ি-মালিকদের অনেকেই এখনও বৃত্তিকর প্রদানের জন্য নাম নথিভুক্ত করার আবেদনই করেননি। ‘‘এর ফলে রাজ্য সরকারের আয়ে ঘাটতি পড়ছে। সেই সঙ্গে করখেলাপিদের আইনি জটিলতার মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ছে,’’ সতর্ক করে দেন ওই কর্তা।
আওতায় কারা
রাজ্যে যে-কোনও পেশা, সরকারি ও বেসরকারি চাকরি এবং ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির আয় নির্দিষ্ট সীমার
(বেতনভুকদের ক্ষেত্রে মাসিক ১০ হাজার টাকা এবং অন্য পেশা-ব্যবসায় যুক্তদের ক্ষেত্রে বছরে ৬০ হাজার টাকা) ঊর্ধ্বে হলে তিনি বৃত্তিকরের আওতায় পড়বেন।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, গত ২৩ জুলাই পরিবহণ দফতরের কমিশনার একটি চিঠি (৩৩৭০- ডব্লিউটি/৩এম/১০/০৭) লিখেছিলেন ট্রান্সপোর্ট ডিরেক্টরেটের ডিরেক্টরকে। সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছিল অর্থ দফতরের পাঠানো চিঠিটিও। তার পরে এই বিষয়ে পরিবহণ দফতর কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা জানাতে পারেননি অর্থ দফতরের ওই আধিকারিক। পরিবহণ দফতরের তরফেও ওই চিঠি সম্পর্কে নির্দিষ্ট করে কিছু জানানো হয়নি।
অর্থ দফতরের চিঠি প্রসঙ্গে ট্রান্সপোর্ট ডিরেক্টরেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘এই বিষয়ে খোঁজ নিতে বলেছি আধিকারিকদের।’’
বাণিজ্যিক পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত ট্রাক-মালিকদের একাংশ যে বৃত্তিকর দেন না, তা স্বীকার করেছেন ট্রাক-মালিক সংগঠন ফেডারেশন অব ওয়েস্টবেঙ্গল ট্রাক অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক প্রবীর চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘পারমিট বা লাইসেন্স নবীকরণের সময় বৃত্তিকরের শংসাপত্র জমা দেওয়ার ব্যাপারে আগে সরকারের সঙ্গে এক বার আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু ওই শংসাপত্র দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়নি। ফলে অনেকেই বৃত্তিকর দেন না।’’