প্রতীকী ছবি।
নিজস্ব সংবাদদাতা
প্রায় দু’বছর ধরে অতিমারির প্রকোপ চলায় স্কুল থেকে সব স্তরের শিক্ষার ব্যাপক ক্ষতি শিক্ষা শিবিরের চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। তারই মধ্যে গত জুলাইয়ে স্কুলের পঠনপাঠন নিয়ে এক কেন্দ্রীয় সমীক্ষার রিপোর্ট জানায়, পশ্চিমবঙ্গের স্কুলপড়ুয়াদের শিক্ষার মান তুলনায় বেশ ভাল। এতে অকারণ খুশি না-হয়ে শিক্ষক শিবিরের একাংশ প্রশ্ন তোলেন, করোনার জেরে শুধু পড়াশোনাই বেহাল নয়, স্কুলে স্কুলে শিক্ষকেরও অভাব প্রকট। এমন আবহে বঙ্গে স্কুলশিক্ষার মান ভাল, এই তথ্য উঠে আসে কী ভাবে?
সেই প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি। তবে বাংলায় স্কুলশিক্ষার মান ঠিক কেমন, তা জানতে এ বার সমীক্ষা করতে চলেছে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতর। রাজ্য পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার বলেন, “আমাদের রাজ্যের পড়ুয়ারা এখন কোন পর্যায়ে আছে, তা দেখার জন্যই এই পরীক্ষা।’’
প্রশ্ন উঠছে, স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে কেন্দ্রীয় স্তরে একটা সমীক্ষা তো হচ্ছেই। তা হলে আবার আলাদা ভাবে একই ধরনের সমীক্ষা কেন করছে রাজ্য? অভীক বলেন, “চলতি বছরে কেন্দ্রের যে-সমীক্ষা হল, তাতে রাজ্যের পড়ুয়ারা খুব ভাল করেছে। রাজ্যের স্কুলপড়ুয়ারা অনেক ক্ষেত্রেই প্রথম হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রের সমীক্ষায় আমরা সন্তুষ্ট নই। আমাদের সমীক্ষায় যদি দেখা যায় যে, কোনও জেলার বেশ কিছু স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের অঙ্কের ফল খারাপ, তা হলে সেই জেলার সংশ্লিষ্ট স্কুলগুলিতে অঙ্কের উপরে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে।”
স্কুলপড়ুয়াদের নিয়ে কেন্দ্রীয় সমীক্ষার নাম ‘ন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট সার্ভে’ বা ন্যাস। রাজ্যের অনুরূপ সমীক্ষার নাম দেওয়া হয়েছে, ‘স্টেট অ্যাচিভমেন্ট সার্ভে’ বা স্যাস। রাজ্যের শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, “স্যাস হচ্ছে ন্যাসের অনুকরণেই। ন্যাসে তৃতীয়, পঞ্চম, অষ্টম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের পরীক্ষা হয়। পরীক্ষা হয় মাল্টিপ্ল চয়েস কোয়েশ্চেন বা এমসিকিউয়ের ভিত্তিতে। তিন বছর অন্তর ন্যাসের ব্যবস্থা করা হয়।’’
কী ভাবে হবে রাজ্যের সমীক্ষা? শিক্ষা সূত্রের খবর, ওই সমীক্ষায় আগামী ১২ ডিসেম্বর রাজ্য জুড়ে কমবেশি ১০,৮০০ স্কুলের তৃতীয়, পঞ্চম, অষ্টম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের পরীক্ষা নেওয়া হবে। উত্তরবঙ্গ থেকে শুরু করে দক্ষিণবঙ্গ, জঙ্গলমহল— কোনও এলাকার স্কুলই এই সমীক্ষা থেকে বাদ পড়বে না।
শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, তৃতীয় ও পঞ্চম শ্রেণিতে তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা নেওয়া হবে। অষ্টম ও দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের পরীক্ষা দিতে হবে চারটি বিষয়ে। তিনটি বা চারটি বিষয়ের উপরে পরীক্ষা হলেও প্রশ্নপত্র হবে একটাই। কেন্দ্রের সমীক্ষার আদলে পরীক্ষা হবে এমসিকিউয়ের ভিত্তিতে। যে-সব স্কুলকে পরীক্ষার জন্য নির্বাচন করা হয়েছে, সেখানকার তৃতীয়, পঞ্চম, অষ্টম ও দশম শ্রেণির সব ছাত্রছাত্রীই এই পরীক্ষা দেবে। ওই সমীক্ষার ফলাফল দেখে রাজ্যের স্কুলপড়ুয়ারা এখন কোন অবস্থায় আছে, পড়ুয়াদের জন্য আর কী কী করণীয়, স্কুলশিক্ষা দফতর তা ঠিক করবে বলে জানান অভীক।