ছবি-বিভ্রাটের বইয়ের হদিস, প্রকাশকেরও

পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃতীয় শ্রেণিতে এটা পড়ানো হত। প্রকাশকের দাবি, বইটি বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৮ ০৪:৪২
Share:

এই ছবি ঘিরেই বিতর্ক।

রুপোলি পর্দার অভিনেতা ফারহান আখতারের ছবিকে কারা দৌড়বিদ মিলখা সিংহের ছবি হিসেবে চালানোর চেষ্টা করছিল, অবশেষে সেই রহস্যের কিনারা হল। যে-বইয়ে এই ছবি-বিভ্রাট ঘটেছে, খোঁজ পাওয়া গেল তার বেসরকারি প্রকাশনা সংস্থার। সোমবার মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তৎপরতায় কলেজ স্ট্রিটে ওই বই এবং সংস্থার হদিস মেলে। পর্ষদ সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃতীয় শ্রেণিতে এটা পড়ানো হত। প্রকাশকের দাবি, বইটি বাজার থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে।

Advertisement

বেসরকারি প্রকাশন সংস্থার ওই বইকে যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারি বই বলে তুলে ধরেছে এবং সরকারের দায় না-থাকা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে যারা অপপ্রচার চালিয়েছে, তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে বলে জানিয়ে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ওই বেসরকারি প্রকাশনা সংস্থার বিরুদ্ধেও কড়া আইনি পদক্ষেপ করা হচ্ছে।

প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি মত প্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে কণ্ঠরোধের চেষ্টা করছে সরকার?

Advertisement

‘‘মত প্রকাশের স্বাধীনতার অর্থ অসত্য কথা বলা নয়,’’ বলেন মন্ত্রী।

বেশ কয়েক দিন আগেই একটি বইয়ের অংশবিশেষ সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, পর্দায় মিলখার চরিত্রাভিনেতা ফারহানকে স্কুলপাঠ্য বইয়ে মিলখা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষা দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘বেশ কিছু হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এটা ছড়িয়েছে এবং সেখানে এটা সরকারের বই বলে দাবি করা হয়েছে। কিন্তু এটা সরকারের কোনও বই-ই নয়।’’ বইটি বাজার থেকে তুলে বদল করে নেওয়ার জন্য রবিবার শিক্ষামন্ত্রীকে টুইট করেন ফারহান। শোরগোল পড়ে যায়। শুরু হয় সরকার-বিরোধী টুইটের বন্যা।

আরও পড়ুন: স্কুলপাঠ্যে ফারহানই মিলখা, সরব অভিনেতা

টুইটে ‘দিদি’ অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন অনেকে। প্রশ্ন ওঠে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়েও। স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তা জানান, এক জন টুইটে লেখেন, ‘‘আমি এতে আশ্চর্য হচ্ছি না। কারণ এ রাজ্যে এ-রকম প্রায়ই হয়।’’ বিশ্ব বাংলা নিয়েও খোঁচা নিতে ছাড়েননি অনেকে। আর এখানেই আপত্তি সরকারের। বইটি সরকারের নয়। তা সত্ত্বেও যে-ভাবে সরকারকে আক্রমণ করা হচ্ছে, সেটা আপত্তিকর বলে মনে করছে প্রশাসন। বিশেষ উদ্দেশ্যে বিষয়টি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হয়েছে বলে সন্দেহ শিক্ষা দফতরের একাংশের। এ দিন বইয়ের সন্ধান পাওয়ার পরে দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ বার সকলে দেখুন, কী ভাবে অপপ্রচার করা হয়েছে!’’

পার্থবাবু বলেন, ‘‘যাঁরা এগুলো করছেন, তাঁরা না-জেনেই করছেন। সরকারকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা চলছে। এই বই যারা প্রকাশ করেছে, সরকার তাদের ধরার চেষ্টা করছে। যারা সরকার-বিরোধী প্রচার করছে, তথ্যপ্রযুক্তি আইনে তাদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’ সরকারের বক্তব্য, তাদের ভুল হলে সমালোচনা করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে মিথ্যাচার চলতে পারে না কখনওই।

কয়েক বছর আগে ফেসবুকে একটি কার্টুন শেয়ার করার অভিযোগে অম্বিকেশ মহাপাত্র নামে এক শিক্ষককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। এ ক্ষেত্রেও কি তা-ই হবে? সরকারের বক্তব্য, আইন মেনে কাজ হবে। বিষয়টিকে মত প্রকাশের অধিকারের পরিপন্থী হিসেবেই দেখছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। ওই সংগঠনের তরফে রণজিৎ শূর বলেন, ‘‘সরকার-বিরোধী অভিমতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সংবিধানের ১৯ ও ২১ নম্বর ধারার পরিপন্থী। বিরোধীদের খুঁজে বার করাটা মানবাধিকার রক্ষা আইন ১৯৯৩–এর বিরোধী। সরকার এটা করতে পারে না।’’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘ভুল তথ্য দেওয়া আর মত প্রকাশের স্বাধীনতা এক জিনিস নয়। মত প্রকাশের মাত্রা নেই? মত প্রকাশের স্বাধীনতা আর অসত্য কথা এক জিনিস নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement