সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও শোভন চট্টোপাধ্যায়
পঞ্চায়েত ভোট মিটতেই রদবদল হল রাজ্য মন্ত্রিসভায়। সাত জন মন্ত্রীর দফতর বদলেছে। ২০১৬ সালে দ্বিতীয় বারের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার গঠনের পর এটিই মন্ত্রিসভার সব চেয়ে বড় অদলবদল।
প্রশাসনের অন্দরে বলা হচ্ছে, পঞ্চায়েত ভোটে নেতা-মন্ত্রীদের সাফল্যের বিচার করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, দলের ভিতরের সাংগঠনিক সমীকরণের বদলের ছাপও এই পরিবর্তনে রয়েছে বলে আবার শাসক দলের কেউ কেউ মনে করছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবার রদবদলের পর বলেন, ‘‘কয়েক জনের বাড়তি দায়িত্ব ছিল। চাপ হালকা করা হয়েছে।’’
এই রদবদলে সব থেকে উল্লেখযোগ্য হল সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দফতর ছাঁটাই। গ্রামীণ ভোটে পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে খুব বেশি সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। পঞ্চায়েত সংক্রান্ত মামলা বা রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দর কষাকষিতেও নবান্নের আমলারাই মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। ভোট পর্বের পর থেকেই কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল, বদলাতে পারে সুব্রতবাবুর দফতর। এরই মাঝে বরিষ্ঠ এই মন্ত্রীকে তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে যুবনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধর্না মঞ্চেও বসে থাকতে দেখা যায়। বুধবার অবশ্য রদবদলের তালিকায় তাঁর নামই সর্বাগ্রে। সুব্রতবাবুর হাতে থাকা জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর কেড়ে নিয়ে জলসম্পদ ও ক্ষুদ্র সেচ দফতর দেওয়া হয়েছে। নবান্নের এক কর্তার কথায়, ‘‘সুব্রতবাবু এ বার জল ধরো-জল ভরো’র কাজ করবেন। এত দিন গ্রামে পানীয় জল জোগাতেন। এ বার চাষের জল দেবেন।’’
তবে কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের দায়িত্ব কিঞ্চিৎ কমিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর হাত থেকে পরিবেশ দফতর নিয়ে দেওয়া হয়েছে শুভেন্দু অধিকারীকে। পঞ্চায়েতে শুভেন্দুর দায়িত্ব ছিল একদা কংগ্রেসের গড় মালদহ, মুর্শিদাবাদ, উত্তর দিনাজপুরের। ছিল তাঁর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরও। বিরোধীরা কোথাও টিকতেই পারেনি। প্রশাসনের অনেকেই মনে করছেন, শুভেন্দুকে ‘পঞ্চায়েত-পুরস্কার’ দেওয়া হয়েছে।
শোভনবাবু তাঁর রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ইদানীং অনেকটাই গুটিয়ে নিয়েছেন। ইডি-সিবিআইয়ের ঝামেলা বা তাঁর পারিবারিক বিবাদ নিয়ে দলের অনেকেই বিব্রত। মুখ্যমন্ত্রী সেই কারণেই শোভনের ডানা ছেঁটেছেন বলে মনে করা হচ্ছে। দল অবশ্য বলছে, মেয়র এবং তিনটি দফতরের মন্ত্রী হিসাবে তাঁর চাপ বেড়ে যাচ্ছিল।
দায়িত্ব বেড়েছে মলয় ঘটকের। তাঁর হাতেই মুখ্যমন্ত্রী গ্রামে পানীয় জল সরবরাহের ভার দিয়েছেন। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে সেচের মতো গুরুত্বপূর্ণ দফতর কেড়ে নিয়ে কম গুরুত্বের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতর দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত ভোটে হাওড়ার একটি জেলা পরিষদ আসনে জিতেছেন নির্দল প্রার্থী। ফলে এই সিদ্ধান্ত ‘রাজনৈতিক’ কি না, তা নিয়েও দলে গুঞ্জন। প়ঞ্চায়েতে আদিবাসী এলাকায় দলের ফল ভাল হয়নি। আদিবাসী উন্নয়ন দফতর মুখ্যমন্ত্রী নিজের হাতেই রেখেছেন। প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।