তিস্তা নিয়ে জলে পড়েছে রাজ্য বিজেপি!
পশ্চিমবঙ্গের ভাগ থেকে কেটে তিস্তার জল বাংলাদেশকে না দেওয়ার দাবি নিয়ে চার বছর আগে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের আমলে রাজ্য বিজেপি আন্দোলনে নেমেছিল। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে তাদের যুক্তি ছিল, পশ্চিমবঙ্গে দল এমনিতেই দুর্বল। তার উপরে রাজ্যবাসীর স্বার্থ না দেখে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে গেলে রাজ্যে দলের অস্তিত্বই বিপন্ন হবে। যে কারণে বিজেপি-র তৎকালীন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বাংলাদেশের সঙ্গে প্রস্তাবিত তিস্তা চুক্তির বিরুদ্ধে উত্তরবঙ্গে আন্দোলন করেছিলেন। দলীয় বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তিস্তা চুক্তি মেনে নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়ায় তাঁদের সঙ্গে রাহুলবাবুর মতান্তরও হয়েছিল। লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ, রাজনাথ সিংহকে রাহুলবাবু সাফ বলে দিয়েছিলেন, তাঁরা ওই চুক্তি মানবেন না।
কিন্তু এখন কেন্দ্রে বিজেপি-রই সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশকে তিস্তার জল দিতে বদ্ধপরিকর। তাই এখন আর রাজ্য বিজেপি-র পক্ষে প্রকাশ্যে তিস্তা চুক্তির বিরোধিতা করা সম্ভব নয়। আবার তারা যদি তিস্তার জলের উপরে এ রাজ্যের দাবি ছেড়ে দেওয়ার যুক্তি দিতে চায়, তাতে উত্তরবঙ্গের মানুষের ভাবাবেগ তাদের বিরুদ্ধে যাবে। তখন উত্তরে প্রভাব বিস্তারও কঠিন হবে বিজেপি-র পক্ষে। তাই তিস্তার জলবণ্টন মোদীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পরেও ওই প্রসঙ্গ এড়িয়েই থাকার চেষ্টা করছেন রাজ্য বিজেপি নেতারা।
আরও পড়ুন:হুঙ্কারেও খাঁ-খাঁ পরিষদের সভা
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এখনকার বক্তব্য রাহুলবাবুদের পুরনো যুক্তির সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। মোদী-হাসিনার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী তিস্তার বদলে তোর্সার জল বাংলাদেশকে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে এসেছেন। রাজ্য বিজেপি তা নিয়ে নিজে থেকে মুখ খোলেনি। মঙ্গলবার প্রশ্ন করা হলে অধুনা দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুলবাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর তিস্তা নিয়ে নিজের মত জানানো উচিত ছিল। তা না করে উনি অন্য নদীর কথা বললেন! অন্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের সামনে এটা শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরণ এবং তাঁকে অপমান করার সামিল। এই ছেলেখেলা করা যায় না!’’
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ অবশ্য আর একটু সরাসরি বলেছেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী যখন চাইছেন, তখন তিস্তা চুক্তি হবেই। কিন্তু যে সমীক্ষার উপরে নির্ভর করে চুক্তি হবে, সেটা বহু পুরনো। ফলে সেটা আর এক বার করা যেতে পারে। আর রাজ্যের স্বার্থ হানি না হয়, সেটা দেখতে হবে। কিন্তু প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করা যায় না।’’ মুখ্যমন্ত্রীর প্রস্তাব নিয়ে দিলীপবাবুর কটাক্ষ, ‘‘তোর্সায় তো জলই নেই! দেবেন কী করে? দায়িত্বশীল মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ওঁর সহযোগিতা করা উচিত ছিল। তা না করে উনি হাল্কা রাজনীতির কথা বলেছেন।’’