নিজস্ব চিত্র
লোকায়ুক্তের আওতা থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে ছাড় দিয়েই বিধানসভায় পাশ হয়ে গেল বিল। জনজীবনে সুস্থিতি বজায় রাখার লক্ষ্যে (পাবলিক অর্ডার) মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত লোকায়ুক্ত করতে পারবে না, এই কথা বিলেই বলা ছিল। মুখ্যমন্ত্রী বৃহস্পতিবার বিধানসভায় জানিয়ে দিলেন, মূলত পুলিশ সংক্রান্ত বিষয় থাকবে পাবলিক অর্ডারের আওতায়। তার সঙ্গে থাকছে আরও ৫৭টি ক্ষেত্র।
পাশাপাশি, বিধানসভার কক্ষে বিলের সঙ্গে সংশোধনী এনে জুড়ে দেওয়া হল পাবলিক অর্ডারের বাইরের যে সব ক্ষেত্র, সেখানে যদি কোনও দুর্নীতির অভিযোগ আসে তা হলে সেই তদন্ত করতে গেলে বিধানসভার দুই তৃতীয়াংশের সমর্থন লাগবে। বিরোধীদের মতে, এর ফলে লোকায়ুক্তের আওতা থেকে প্রায় পুরোপুরি বেরিয়ে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী।
বিরোধীরা এ দিন বিধানসভার আলোচনায় প্রশ্ন তোলে, মুখ্যমন্ত্রী এবং সরকার যদি সৎ হয়, তা হলে তাদের এত আইনের ঢাল লাগছে কেন? বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বাম আমলের পুরনো আইনের ত্রুটি খুঁজে সেটাকে আরও শক্তিশালী করা যেত। তা না করে, এই সরকার পুরনো আইনকে আরও দুর্বল করল।’’ বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, ‘‘নিজেকে দিয়ে বিচার করে মনমোহন সিংহ লোকপাল আইনের ক্ষেত্রে যে ভুল করেছিলেন, এই সরকার তা থেকে শিক্ষা নিল না। উল্টে সেই ভুলটাকেই ব্যবহার করল।’’
আর বিজেপি-র দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘বিধানসভায় এমন আইন পাশ করলে সাধারণ মানুষ মনে করবে, রাজনীতিকেরা নিজেদের অন্যায় আড়াল করার জন্য সব রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী, মন্ত্রী বা আমলা— কাউকেই যদি ধরা না যায়, সব মাছ যদি জাল কেটে বেরিয়ে যায়, তা হলে আর কিসের তদন্ত হবে?’’
আরও পড়ুন: রাজ্যের নাম ‘বাংলা’, সর্বসম্মত প্রস্তাব পাশ বিধানসভায়
সরকার পক্ষের তরফে অবশ্য বার বার বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে, কোনও মন্ত্রী বা আমলার বিরুদ্ধে যাতে অকারণ অভিযোগ করে হেনস্থা করা না হয়, তার জন্যই এমন সংশোধনী আনা হল। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজ্যপাল এই বিলে সম্মতি দেওয়ার ১০ দিনের মধ্যে রাজ্যে লোকায়ুক্ত নিয়োগ করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, ‘‘আমার বিশ্বাসযোগ্যতা আমি জনগণের কাছে বন্ধক রেখেছি। দু’চারটে নেতা, যাঁদের পিছনে অনেক ছিদ্র, তারা কী বলল তাতে কিছু যায় আসে না। জনগণের কাছে যে দিন বিশ্বাসযোগ্যতা থাকবে না, সে দিন রাজনীতিতেই থাকব না।’’