গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের অভিযোগের ভিত্তিতে ‘হুমকি-কাণ্ডে’ পাঁচ পদত্যাগী উপচার্যকে আবার চিঠি পাঠাল রাজ্যের উচ্চশিক্ষা দফতর। রাজ্যপালের অভিযোগ নিয়ে ওই পাঁচ জন উচ্চশিক্ষা দফতরের আগের চিঠির কোনও জবাব দেননি। এই প্রেক্ষিতে পুরো বিষয়টি ‘রাজ্য সরকার এবং রাজ্য উচ্চশিক্ষা দফতরের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা’ বলে মঙ্গলবারের চিঠিতে পাল্টা অভিযোগ হয়েছে।
গত ৭ সেপ্টেম্বর রাজ্যপাল বোস অভিযোগ করেছিলেন, ‘হুমকি’ পেয়ে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন রাজ্যের পাঁচ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। ভয় দেখিয়ে তাঁদের উপর চাপ সৃষ্টি করেছিল খোদ শিক্ষা দফতর। ঘটনাটির বিশদ বিবরণ দিলেও ওই উপাচার্যদের নাম বলেননি রাজ্যপাল। যদিও ৭ সেপ্টেম্বর রাতেই এই অভিযোগের ব্যাখ্যা চেয়ে শিক্ষা দফতরের চিঠি গিয়েছিল সংশ্লিষ্ট পাঁচ পদত্যাগী উপাচার্যের কাছে। ওই তালিকায় ছিলেন নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য চন্দন বসু, যাদবপুরের প্রাক্তন অস্থায়ী উপাচার্য অমিতাভ দত্ত, আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ম্যাকাউট)-এর দুই প্রাক্তন উপাচার্য। শিক্ষা দফতর তাঁদের কাছে জানতে চেয়েছিল, কারা পদত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল তাঁদের? হুমকিই বা দিয়েছিল কে?
সোমবারের (১১ সেপ্টেম্বর) মধ্যে ওই পাঁচ প্রাক্তন উপাচার্যকে প্রামাণ্য নথি-সহ প্রশ্নের উত্তর জমা দিতে বলা হয়েছিল শিক্ষা দফতরের কাছে। বিকাশ ভবন চিঠিতে স্পষ্ট জানিয়েছে, তারা ওই শিক্ষকদের অভিযোগে উদ্বিগ্ন। তাঁদের যে অভিজ্ঞতা হয়েছে তা নিয়ে চিন্তিতও। রাজ্যপালের ভিডিয়োবার্তার বিশেষ অংশের উল্লেখ করে ৭ সেপ্টেম্বরের ওই চিঠিতে বলা হয়েছিল, ‘‘রাজ্যপাল বলেছেন, আপনাদের পদত্যাগ করার জন্য শিক্ষা দফতর এবং শিক্ষা দফতরের ভারপ্রাপ্ত আইএএস কর্তারা চাপ সৃষ্টি করেছিলেন।’’ চিঠিতে রাজ্যপালের আরও একটি দাবির উল্লেখ করে বিকাশ ভবন আরও লিখেছিল, ‘‘রাজ্যপাল তথা সম্মাননীয় আচার্য এ-ও দাবি করেছেন যে, তাঁকে বিশ্বাস করে আপনারা জানিয়েছিলেন হুমকির ভয়েই আপনারা পদত্যাগ করছেন।’’ রাজ্যপালের এই দুই দাবির সপক্ষে প্রমাণ দাখিল করতে বলা হয়েছিল প্রাক্তন উপাচার্যদের।
চিঠিতে বিকাশ ভবন জানিয়েছে, যদি ওই প্রাক্তন উপাচার্যেরা অভিযোগের প্রামাণ্য নথি যথাসময়ে জমা দিতে না পারেন, তবে ধরে নেওয়া হবে সম্মাননীয় আচার্যের দাবি অসত্য। তিনি রাজ্য সরকার এবং উচ্চশিক্ষা দফতরের বদনাম করতেই এমন অভিযোগ এনেছেন। পাঁচ প্রাক্তন উপাচার্যের তরফে কোনও জবাব না-মেলায় মঙ্গলবারের চিঠিতে সেই দাবিই করেছে উচ্চশিক্ষা দফতর। লেখা হয়েছে, ‘‘পূর্বনির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে আপনার থেকে কোনও তথ্যপ্রমাণ না-মেলায় বোঝা যাচ্ছে মাননীয় আচার্য (অর্থাৎ, রাজ্যপাল বোস) রাজ্য সরকার এবং রাজ্য উচ্চশিক্ষা দফতরের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করেছেন।’’
প্রসঙ্গত, ৭ সেপ্টেম্বর সকালে রাজভবনের তরফে প্রকাশিত একটি ভিডিয়োবার্তায় রাজ্যপাল বলেছিলেন, ‘‘যে পাঁচ জন উপাচার্য পদত্যাগ করেছিলেন তাঁরা নিজেরা আমাকে বলেছেন, তাঁদের জীবনের হুমকি দেওয়া হয়েছিল। ভয়েই পদত্যাগ করেছেন তাঁরা। কারণ সরকারি অফিসার, মুখ্যমন্ত্রীর আইএএস অফিসার তাঁদের উপর চাপ সৃষ্টি করছিলেন। শিক্ষা দফতরের তরফে তাতে উৎসাহও দেওয়া হয়েছিল।’’ ভিডিয়োবার্তায় রাজ্যপাল এই তথ্য দিয়ে স্পষ্ট বাংলায় বলেছিলেন, ‘‘আমি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং স্বামী বিবেকানন্দের নামে শপথ করে বলেছি, দুর্নীতিমুক্ত ক্যাম্পাস এবং শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য আমি শেষ পর্যন্ত এই লড়াই লড়ে যাব।’’ কিন্তু সেই ‘লড়াই’য়ে কোনও পদত্যাগী উপাচার্যকে পাশে পেলেন না বোস।