সংগ্রাহক অমিল, জল পরীক্ষা শিকেয় ৫৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতে

গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দারা কতটা বিশুদ্ধ পানীয় জল খান, তা পরীক্ষার জন্য প্রতি পঞ্চায়েতে এক জন করে জল সংগ্রাহক নিয়োগের নির্দেশ রয়েছে কেন্দ্র সরকারের। যাঁদের কাজ গ্রামের নলকূপের জল সংগ্রহ করে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া এবং পরীক্ষার রিপোর্ট পঞ্চায়েতে পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু হাওড়া জেলার ৫৬টি পঞ্চায়েতে সেই সংগ্রাহকই নেই। ফলে, ওই সব পঞ্চায়েতে পানীয় জল পরীক্ষা ব্যবস্থা কার্যত শিকেয় উঠেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন গ্রামবাসীরা।

Advertisement

মনিরুল ইসলাম

উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০০:৫৮
Share:

গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দারা কতটা বিশুদ্ধ পানীয় জল খান, তা পরীক্ষার জন্য প্রতি পঞ্চায়েতে এক জন করে জল সংগ্রাহক নিয়োগের নির্দেশ রয়েছে কেন্দ্র সরকারের। যাঁদের কাজ গ্রামের নলকূপের জল সংগ্রহ করে পরীক্ষাকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া এবং পরীক্ষার রিপোর্ট পঞ্চায়েতে পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু হাওড়া জেলার ৫৬টি পঞ্চায়েতে সেই সংগ্রাহকই নেই। ফলে, ওই সব পঞ্চায়েতে পানীয় জল পরীক্ষা ব্যবস্থা কার্যত শিকেয় উঠেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন গ্রামবাসীরা।

Advertisement

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কেন্দ্র সরকার ২০০৭ সালে জাতীয় গ্রামীণ পানীয় জল প্রকল্পে নলকূপের জল পরীক্ষার পরিকল্পনাটি গ্রহণ করে। ওই বছরেই তা রাজ্যেও চালু হয়। জল সংগ্রহকারী নিয়োগও করে হাওড়া জেলার পঞ্চায়েতগুলি। শরৎ সদনে ওই কর্মীদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা হয়। বলা হয়, বছরে এক বার বা দু’বার জল পরীক্ষার কথা। প্রথম কয়েক বছর প্রকল্পটি ঠিকমতো চললেও তার পরেই নানা পঞ্চায়েতে জল সংগ্রাহকের সঙ্কট দেখা দেয়।

কেন?

Advertisement

এ জন্য নামমাত্র পারিশ্রমিককেই দায়ী করেছেন জেলা প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ এবং বিভিন্ন পঞ্চায়েতে এখনও টিকে থাকা জল সংগ্রাহকেরা। তাঁদের মতে, পঞ্চায়েত ভবন থেকে নলকূপের দূরত্ব অনুযায়ী তাঁদের পারিশ্রমিক ন্যূনতম ৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৫৫ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে ওই টাকায় কাজ করা সম্ভব হচ্ছে না।

সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি অজয় ভট্টাচার্য এবং জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত কর্মাধ্যক্ষ সীতানাথ ঘোষ। তাঁরা বলেন, ‘‘লোক নিয়োগ বা ওই পরিষেবার যাবতীয় দায়িত্ব জেলার তিনটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই খাতে জল সংগ্রাহকদের পারিশ্রমিক বাবদ যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়, তার পরিমাণ এতটাই কম যে অনেকেই কাজ করেন না। আবার অনেক পঞ্চায়েতে কম পারিশ্রমিকের জন্য কেউ রাজিই হননি। আমরা সরকারের কাছে চিঠি দিয়েছি, যাতে এই খাতে বরাদ্দ আরও বাড়ানো হয়।’’ একই সঙ্গে অজয়বাবু জানান, পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। জল পরীক্ষা নিয়ে কোনও আপোস করা যাবে না। তেমন অভিযোগ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলার জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের কার্যনির্বাহী আধিকারিক চম্পক ভট্টাচার্যও জানান, সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। যে সব পঞ্চায়েতে জল সংগ্রাহক নেই, সেই সব পঞ্চায়েতের নলকূপের জল অন্য পঞ্চায়েতের জল সংগ্রাহকদের মাধ্যমে এনে পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বিভিন্ন ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলার ১৪টি ব্লকে মোট পঞ্চায়েতের সংখ্যা ১৫৭। জল পরীক্ষাকেন্দ্র রয়েছে ডোমজুড়, পাঁচলা, আমতা এবং বাগনানে। এর মধ্যে ডোমজুড়ের কেন্দ্রে সাঁকরাইল, ডোমজুড় এবং বালি-জগাছা ব্লকের মোট ৪২টি পঞ্চায়েতের জল পরীক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু জল সংগ্রাহক রয়েছেন মাত্র ৬ জন। পাঁচলার কেন্দ্রে পাঁচলা, জগৎবল্লভপুর এবং উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের ৩৪টি পঞ্চায়েতের জল পরীক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু জল সংগ্রাহক নেই ৫টি পঞ্চায়েতে। একই ভাবে বাগনান কেন্দ্রে ৪৩টি পঞ্চায়েতের জল পরীক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু তার মধ্যে ১০টি পঞ্চায়েতে জল সংগ্রাহক নেই। আমতা জল পরীক্ষা কেন্দ্রের ছবিটাও একই রকম। এখানে আমতা-১, ২ এবং উদয়নারায়ণপুরের ৩৮টি প়ঞ্চায়েতের জল পরীক্ষা হওয়ার কথা। কিন্তু জল সংগ্রাহক নেই ৫টি পঞ্চায়েতে।

আনন্দ প্রামানিক নামে উলুবেড়িয়ার এক জল সংগ্রাহক বলেন, ‘‘আমাদের জল পরীক্ষা করতে যেতে হয় পাঁচলায়। ৫৫ টাকা করে নলকূপপিছু পাই। বছরে হাজার ৬-৭ টাকা হয়। এতে কি আর চলে! তার উপরে অর্ধেক টাকা বাকি। ফলে, অন্য কাজও করতে হয়। এ জন্যই অনেকে এই কাজ ছেড়ে দিয়েছেন।’’ একই সুর পাঁচলার দেউলপুরের জল সংগ্রাহক রোহিতকুমার মালিকের গলাতেও। তিনি বলেন, ‘‘আমি নলকূপপিছু ২৫ টাকা করে পাই। বছরে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা আয়। এতে সংসার চলে নাকি! আমাদের টাকা না বাড়ালে আর কাজ করা যাবে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement