ভিভিপ্যাট।
অনেকেই ভেবেছিলেন রাজনীতির খেলা। আসলে নেপথ্যে রয়েছে নিতান্তই প্রশাসনিক প্রস্তুতির অভাব। তাতেই এখন উপনির্বাচন হল না উলুবেড়িয়া লোকসভা এবং নোয়াপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রে।
নির্বাচন কমিশন ভোট ঘোষণা করেছে কেবলমাত্র সবংয়ে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, কেন বাকি দুই কেন্দ্রে এখনই ভোট হল না? তৃণমূল কংগ্রেস তো সরাসরি এর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ‘খেলা’র অভিযোগও এনেছে। নির্বাচন কমিশনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, কোনও নেপথ্য ‘রাজনীতি’ নয়, উলুবেড়িয়া, নোয়াপাড়ার ভোট আপাতত হচ্ছে না নিতান্তই প্রশাসনিক কারণে। বলা ভাল, প্রশাসনিক প্রস্তুতির অভাবেই তিন কেন্দ্রে ভোট করাতে পারেনি কমিশন।
কমিশনের এক মুখপাত্র জানান, ‘সম্পূর্ণ সুরক্ষিত’ ভোটযন্ত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা আরও বাড়াতে ‘ভোটার ভেরিফায়েবেল পেপার অডিট ট্রেল’ বা ভিভিপ্যাট ব্যবহার ওখন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ২০১৬ সালে পশ্চিমবঙ্গেও প্রতি বিধানসভার একটি করে বুথে তা বসানো হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টও সমস্ত বুথে এই ব্যবস্থা কার্যকর করতে বলেছে। হিমাচল প্রদেশ-গুজরাতেও সব বুথে ভিভিপ্যাট ব্যবহৃত হচ্ছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের তিন কেন্দ্রের জন্য ভিভিপ্যাটের ব্যবস্থা করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। সেই কারণেই একসঙ্গে ভোটও হচ্ছে না। যা কমিশনের প্রশাসনিক গাফিলতি বলেই মনে করা হচ্ছে।
কেন কমিশন একটি লোকসভা ও দুটি বিধানসভার জন্য প্রয়োজনীয় মাত্র ৩২০০ ভিভিপ্যাট দিতে পারল না কমিশন? এক কর্তা জানান, সবং বিধানসভার জন্য চারশোর কিছু বেশি ভিভিপ্যাট দেওয়া হয়েছে। বাকি সব যন্ত্র পাঠানো হয়েছে গুজরাত ও হিমাচলে। দুটি কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থা এই যন্ত্র বানানোর কাজ করছে। তারা সরবরাহ করতে পারেনি বলেই রাজ্যের তিন কেন্দ্রে একসঙ্গে ভোট হল না। ভিভিপ্যাট এলেই বাকি দুই কেন্দ্রে ভোট ঘোষণা হবে।
কী ভাবে কাজ করে এই ভিভিপ্যাট?
ভিভিপ্যাট হল ভোটযন্ত্রের সঙ্গে লাগানো একটি কাচের বাক্স। কোনও ভোটার ভোটযন্ত্রের বোতাম টিপলেই
তিনি যাকে ভোট দিলেন তা একটি কাগজের স্লিপে ছেপে বেরিয়ে আসে। সাত সেকেন্ড তা ভোটারের সামনে জ্বলজ্বল করে। ভোটার বুঝে নিতে পারেন তিনি যাঁকে ভোট দিয়েছেন তিনিই ভোট পেলেন কি না। এর পর সেটি কাচের বাক্সে জমা হয়ে যায়। যদি ভোটারের মনে হয়, তিনি যাকে ভোট দিলেন সেই দল ওই ভোট পেল না, তখন তিনি প্রতিবাদ জানাতে পারেন। অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে প্রিসাইডিং অফিসার একটি ‘টেস্ট ভোট’ দেওয়ার ব্যবস্থা করান। যদি সত্যিই গোলমাল ধরা পড়ে তা হলে ওই মেশিন বাতিল করা হয়। আর তা না হলে ভুয়ো অভিযোগ করার জন্য কমিশন সংশ্লিষ্ট ভোটারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। এ ভাবেই ভোটযন্ত্রের বিশ্বাসযোগ্যতা অক্ষুন্ন রাখতে ভিভিপ্যাটের ব্যবহার হয়। যদি কখনও যন্ত্র নিয়ে অভিযোগ ওঠে তখন ভিভিপ্যাটের ভোট মিলিয়ে দেখার ব্যবস্থাও রয়েছে।
কমিশন এ বার সমস্ত বুথেই এই যন্ত্র লাগাবে। কিন্তু তা এখনও পর্যাপ্ত নয়। কমিশনের এক মুখপাত্র জানান, উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভোটযন্ত্রের বিশ্বাযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিল। সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের পুরভোটের পরেও সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজপার্টি ফের ব্যালটে ভোট করানোর দাবি জানিয়েছে। ফলে ভিভিপ্যাট ছাড়া আর কোনও ভোট নেবে না কমিশন। সবংয়েও সেই নীতি অনুসৃত হচ্ছে।