মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
এ রাজ্যে লোকসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেস যে একাই লড়বে, তা কার্যত স্পষ্টই করে দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’কে অটুট রাখার আহ্বান জানালেও সেই ভাবনা যে অন্য রাজ্যের জন্যই, তিনি তা-ও নির্দিষ্ট করে দিলেন। তিনি সোমবার বলেন, ‘‘এ রাজ্যে জোট বেঁধে এক একটা ভোট তৃণমূল কংগ্রেসকে দিন। অন্য রাজ্যে ‘ইন্ডিয়া’র অন্য শরিকদের।” তবে এ বারের নির্বাচনে বিজেপি যে ক্ষমতাচ্যুত হবে, সেই বিশ্বাস ব্যক্ত করে তৃণমূল নেত্রী বলেন, ‘‘প্রার্থনা করি, লালকেল্লায় শ্রদ্ধেয় মোদীবাবুর (প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী) যেন শেষ ভাষণ হয়! আগামী বছর ইন্ডিয়া পতাকা তুলবে।’’
স্বাধীনতা দিবসের আগে বেহালায় একটি অনুষ্ঠান-মঞ্চ থেকে এ দিন ফের কেন্দ্রীয় সরকারকেই আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের প্রতি বঞ্চনা আর কেন্দ্রীয় সংস্থার রাজনৈতিক ব্যবহার নিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘‘বুলডোজ়ার দিয়ে মানুষের স্বাধীনতা লুট করে নিয়েছে। আমরা এখন বিজেপির শাসনে আছি। আমরা স্বাধীন নই। আমরা পরাধীন!’’ মণিপুর ও কাশ্মীরের নাম করে তিনি বলেন, ‘‘মণিপুরের মানুষ কি স্বাধীন? মণিপুরে গির্জা, মন্দির জ্বালিয়ে দিয়েছে। মণিপুর, হরিয়ানা, কাশ্মীর যদি কাঁদে, তা হলে আমরা স্বাধীন দেশের জন্য কী গর্ব করব? আমরা কি বলব স্বাধীনতা আছে? গান্ধীজির কথা বলে না। গান্ধীর হত্যাকারীর কথা বলে।’’
আগামী বছরের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যের জবাবে রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘উনি ঠিকই বলেছেন। ফুটকি ইন্ডিয়া নয়, আসল ইন্ডিয়াই পতাকা তুলবে। কালের দেওয়ালে লেখা হয়ে গিয়েছে, ২০২৪ সালের ১৫ অগস্ট দিল্লির লালকেল্লা থেকে পতাকা তুলবেন নরেন্দ্র ভাই দামোদর দাস মোদী। আর দর্শকাসনে থাকবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়!’’
বিরোধী রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার ব্যবহার নিয়ে এ দিনও অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘চালন (চালুনি) সুচের দোষ ধরছে! বিরোধী মুখ্যমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআই লাগিয়ে দিয়েছে। এখন তো ওয়াশিং পাউডার ভাজপা এসেছে।’’ তিনি বলেন, ‘‘বাংলা দুর্নীতি করে না। সরকারের হাতে দু’একটা কেস ভুল হতে পারে। মায়ের হাতের রান্নাতেও এক দিন নুন বেশি হয়ে যায়!’’ তার পরেই নোটবন্দি, পিএম কেয়ার তহবিলের কথা টেনে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন, ‘‘তোমরা কত করেছ?’’
জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কেন্দ্র বেহালায় এ দিন সভা করলেও তাঁর কথা উল্লেখ করেননি মমতা। তবে এক বছরের বেশি কারাবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি যে অভিযোগ করেছিলেন, তাতে সায় দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপিকে বিঁধে সোমবার বলেছেন, ‘‘অন্যায় করলে মামলা করো। সময়ে তা শেষ করে আইন মেনে সাজা দাও। কিন্তু বিনা বিচারে দিনের পর দিন আটকে রাখছে। এটা হয় না।’’
বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আইনমন্ত্রীর (কেন্দ্রীয়) কাছ থেকে নির্দেশ আসছে, এই রায় দিতে হবে।’’ রাজ্যের আমলাদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিনা বিচারে আটকে রাখার অভিযোগ সম্পর্কে বিজেপির শমীকের পাল্টা বক্তব্য, ‘‘উনি এক দিকে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। আর ওঁর দলের মুখপাত্রেরা তাঁকে বেলাগাম আক্রমণ করছেন। উনি যা-ই বলুন বেহালার মানুষ আর বিভ্রান্ত হবেন না। তাই জনসভায় না বলে ওঁর যদি বিচার প্রক্রিয়া বা তদন্তকারী সংস্থার তদন্ত নিয়ে কিছু বলার থাকে, আদালতে গিয়ে বলুন।’’
অন্য দিকে, চুঁচুড়ার পিপুলপাতি মোড়ে একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে এ দিনই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর প্রশ্ন, ইডি-সিবিআই কেন মুখ্যমন্ত্রীকে ছেড়ে রেখেছে? সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহাকরণে থাকাকালীন সারদার অ্যাম্বুল্যান্স উদ্বোধনের জন্য পতাকা নেড়েছিলেন। আজ ওঁকে কেন ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে?’’