নোবেলজয়ীর বাবা আশুতোষ সেনের বিরুদ্ধেই ‘চালাকি করে’ জমি দখলের অভিযোগ তুলল বিশ্বভারতী। ফাইল চিত্র।
মীমাংসা হল না দ্বিতীয় শুনানিতেও। বিশ্বভারতীর কাছ থেকে পাওয়া লিজ়ের জমি নিজের নামে মিউটেশন করাতে চেয়ে অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন যে আবেদন করেছিলেন ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক (বিএলআরও)-এর দফতরে, তা ঝুলেই থাকল। এ বার আর অমর্ত্য নন, নোবেলজয়ীর বাবা আশুতোষ সেনের বিরুদ্ধেই ‘চালাকি করে’ জমি দখলের অভিযোগ তুলল বিশ্বভারতী।
বুধবার বিএলআরও দফতরে অমর্ত্যের আবেদনের ভিত্তিতে দ্বিতীয় শুনানি ছিল। সেখানে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের প্রবল আপত্তিতে কোনও সমাধানসূত্রে পৌঁছনো গেল না। পরে অমর্ত্যের আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তী সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘বিশ্বভারতীর কাছ থেকে এই জমি লিজ়ে নিয়েছিলেন অমর্ত্য সেনের বাবা আশুতোষ সেন।। অমর্ত্য সেন জমি দখল করে রেখেছেন বলে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ যে দাবি করছেন, তা সম্পূর্ণ ভুল। যে হেতু আশুতোষ সেন প্রয়াত হয়েছেন, আমরা শুধুমাত্র লিজ় হোল্ডার নাম পরিবর্তনের জন্য আবেদন করেছিলাম। কিন্তু আজও দীর্ঘ আলোচনার পর তা অমীমাংসিত থেকে গেল।’’
শুনানি চলাকালীন বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের পক্ষে আইনজীবী সুচরিতা বিশ্বাস বিভিন্ন কাগজপত্র তুলে ধরে অমর্ত্যের আবেদনের বিরোধিতা করেছেন। শুনানির পর বাইরে বেরিয়ে সুচরিতা বলেন, ‘‘অমর্ত্য সেনের বাবা ১.২৫ একর জমির লিজ নিয়েছিলেন। সে ক্ষেত্রে তিনি এই জমির মিউটেশন করতে পারেন না। এ নিয়ে আমরা আপত্তি জানিয়েছি। পরে শুনানির তারিখ জানানো হবে।’’ অমর্ত্যের বাবার বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ তুলেছেন বিশ্বভারতীর আইনজীবী। সুচরিতা বলেন, ‘‘আশুতোষ সেনকে ১.২৫ একর লিজ় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উনি চালাকি করে ১.৩৮ একর জমি লিখিয়েছেন। অমর্ত্য সেন এখন মিথ্যা কথা বলে আবেদন করেছেন। বাবা জমি দখল করেছেন, বাবার উত্তরসূরি হিসাবে উনিও (অমর্ত্য) জমি দখল করে আছেন।’’
বিশ্বভারতী প্রথম থেকেই দাবি করে আসছে, ১৯৪৩ সালে অমর্ত্যের বাবা আশুতোষকে কখনই ১.৩৮ একর জমি লিজ় দেওয়া হয়নি। ১.২৫ একর জমি লিজ় দেওয়া হয়েছিল। তার ভিত্তিতে বিশ্বভারতী অমর্ত্যের বিরুদ্ধে ১৩ ডেসিমেল জমি দখলের অভিযোগ করেছে। সেই জমি ফেরতের দাবি তুলেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাঁদের আরও বক্তব্য, ’৪৩ সালে বিশ্বভারতী এবং আশুতোষের মধ্যে স্বাক্ষরিত লিজ়ের নিবন্ধিত দলিল ও ২০০৬ সালে কর্মসমিতিতে পাশ হওয়া প্রস্তাব থেকে স্পষ্ট, আশুতোষ বা অমর্ত্যকে ১.৩৮ একর জমি তো দূরের কথা, বিশ্বভারতীর কোনও জমিরই মালিকানা দেওয়া হয়নি। শান্তিনিকেতনে ‘প্রতীচী’ নামের প্রাঙ্গণে অমর্ত্যের বাসভবনটিও বিশ্বভারতীর মালিকানাধীন জমিতে তৈরি।
এই জমি বিতর্কের মধ্যেই অমর্ত্যের বাড়ি গিয়ে কিছু সরকারি নথিপত্র তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সূত্রের দাবি, ১.২৫ একর নয়, আদতে ১.৩৮ একরই অমর্ত্যের পৈতৃক জমি হিসাবে সরকারি খাতায় নথিভুক্ত রয়েছে। জমি বিতর্কের মধ্যেই একটি সরকারি নথি প্রকাশ্যে এলে দেখা যায়, অমর্ত্যের বাবাকে বিশ্বভারতীর তরফে ১.৩৮ একর জমিই লিজ় দেওয়া হয়েছিল। যদিও বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার অশোক মাহাতোও বলেন, ‘‘২০০৫ সালে যে আবেদন করেছিলেন অমর্ত্যবাবু, তার সঙ্গে থাকা কাগজপত্রে ১.২৫ একর জমির কথাই লেখা ছিল। ১.৩৮ একর জমি নয়। সেই অনুযায়ী ১.২৫ একরের মিউটেশনের বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।’’