পুরোটাই গট-আপ, বরখাস্ত হয়ে তোপ সুশান্তের

অপসারণ পর্বের জন্য মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রকের দিকে আঙুল তুললেন বিশ্বভারতীর সদ্য বরখাস্ত হওয়া উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত। দাবি করলেন, বিশ্বভারতীতে ‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙতে চাওয়াতেই এই দশা তাঁর।

Advertisement

আবীর মুখোপাধ্যায় ও রোহন ইসলাম কলকাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:৩৮
Share:

অপসারণ পর্বের জন্য মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রকের দিকে আঙুল তুললেন বিশ্বভারতীর সদ্য বরখাস্ত হওয়া উপাচার্য সুশান্ত দত্তগুপ্ত। দাবি করলেন, বিশ্বভারতীতে ‘ঘুঘুর বাসা’ ভাঙতে চাওয়াতেই এই দশা তাঁর।

Advertisement

মঙ্গলবার কলকাতার বাড়িতে বসে সুশান্তবাবু দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্তে মন্ত্রক নিযুক্ত তথ্য অনুসন্ধান কমিটি সরকারি ভাবে কখনও তাঁর বক্তব্য শোনেনি। তাঁর তোপ, ‘‘পুরোটাই একদম আগে থেকে গট-আপ। একটা শো ছিল কেবল। যেমন ফুটবল ম্যাচ ‘ফিক্সড’ হয়, ঠিক সেই রকম।’’

অভিযোগ মানেনি মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। মন্ত্রক সূত্রের দাবি, সুশান্তবাবু যখন গত সেপ্টেম্বরে ই-মেলে রাষ্ট্রপতির কাছে পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা জানান, তখনও দাবি করেছিলেন, কমিটি তাঁর কথা শোনেনি। সেই প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি ভবন আইনি পরামর্শ নেওয়ার সুপারিশ করে। গত সপ্তাহে অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইন মন্ত্রক চিঠি দিয়ে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানিকে জানায়, অপসারণের সুপারিশ যুক্তিসঙ্গত। সেই সুপারিশেই সিলমোহর দেন রাষ্ট্রপতি।

Advertisement

২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিশ্বভারতীর উপাচার্য পদে যোগ দেওয়ার পর থেকেই একের পরে এক বিতর্কে জড়িয়েছে এই কৃতী বিজ্ঞানীর নাম। তবে তদন্ত হয় একাধিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নেওয়া (জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেনশন, বিশ্বভারতী থেকে বেতন), আর্থিক গরমিল, বিধি ভেঙে নিয়োগ, মদ্যপানের ব্যক্তিগত বিল বিশ্ববিদ্যালয় তহবিল থেকে মেটানোর মতো পাঁচটি অভিযোগের। মন্ত্রক নিযুক্ত কমিটির তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে সোমবার সুশান্তবাবুকে উপাচার্য পদ থেকে সরানোর সুপারিশে সই করেন বিশ্বভারতীর আচার্য রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়।

সুশান্তবাবু এ দিন দাবি করেন, জেএনইউ থেকে তাঁর পেনশন নেওয়া এবং বিশ্বভারতী থেকে বেতন নেওয়ার বিষয়টি সরলরৈখিক নয়। সাধারণ কর্মীদের ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ থাকলেও, উপাচার্যের ক্ষেত্রে এ ধরনের পরিস্থিতি হলে পেনশনের প্রসঙ্গটি বিবেচনা হওয়ার কথা। কিন্তু তাঁর ক্ষেত্রে তা হয়নি।

অবৈধ নিয়োগ প্রশ্নে প্রাক্তন উপাচার্যের বক্তব্য, ‘‘পরীক্ষা নিয়ামকের পদ নতুন নয়। বিশ্বভারতীতে আগে এক জন ছিলেন ওই পদে।’’ তিনি দাবি করেছেন, সঙ্গীত ভবনে কিছু নিয়োগের ক্ষেত্রে (গান বিষয়ক) সরকারি স্তরে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নিয়োগ-নীতি থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। সেই ব্যতিক্রম করা হয়েছে কেবল ‘প্রতিষ্ঠিত’দের ক্ষেত্রে।

মদ্যপানের বিল বিতর্ক নিয়ে সুশান্তবাবুর দাবি, নয়াদিল্লির ‘ইন্ডিয়া ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার’-এর কর্পোরেট-সদস্য বিশ্বভারতী। সেখানে অন্য কেউ মদ্যপান করলেও বিশ্বভারতীর প্রতিনিধি হিসেবে তিনি বিলে সই করেছিলেন। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘অ্যাকাউন্টস বলতে পারত, ওই টাকা দেওয়া যাবে না। আমি তো বলিনি, টাকা দিতে!’’

কিন্তু উপাচার্যের বিরুদ্ধে লাগাতার এত অভিযোগ ওঠা কি অভিপ্রেত? সুশান্তবাবুর জবাব, ‘‘বিশ্বভারতীতে সব মহলে দুর্নীতি ঢুকে পড়েছে। রাষ্ট্রপতিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। এটা ঘুঘুর বাসা। সেটা ঠিক করার চেষ্টা করেছিলাম।’’ তিনি জুড়ছেন, ‘‘যাদের আঁতে ঘা লাগল, তাদের হাত অনেক লম্বা। ফলে, এই গট-আপ।’’

যদিও সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বিশ্বভারতীর কর্মিসভার সভাপতি দেবব্রত হাজারির মন্তব্য, ‘‘দুর্নীতির অভিযোগ কার বিরুদ্ধে প্রমাণ হয়েছে, তা সবাই জানেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement