মদন মিত্র ও অর্জুন সিংহ।
এমন ভোটের পরিবেশ আগে দেখেনি ভাটপাড়া। বাসিন্দারাই বলছেন সে কথা। মাত্র ক’দিনের ব্যবধানে লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটও আগে এখানে হয়নি। ভোটের আগে এমন হিংসাও অভূতপূর্ব।
ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের প্রচার শেষ হল শুক্রবার বিকেলে। কিন্তু তৃণমূল এবং বিজেপির দ্বৈরথে ক্রমশ চড়ছে এলাকার পারদ। প্রতিদিন দুই দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে গোলমাল, সংঘর্ষ বাধছে। এই অবস্থায় রবিবার শান্তিতে ভোট করানোই চ্যালেঞ্জ নির্বাচন কমিশনের।
পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, গোলমাল ঠেকাতে তারা বেশ কিছু ব্যবস্থা নিয়েছে। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে শনিবার সন্ধ্যা থেকে কয়েকজন দাগিকে থানায় এনে বসিয়ে রাখা হবে। এর আগে ভোটের সময়ে তারা গোলমাল পাকিয়েছিল বা প্ররোচনা দিয়েছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। গত আঠারো বছর ধরে ভাটপাড়ার বিধায়ক অর্জুন সিংহ। তার আগের দশ বছর বিধায়ক ছিলেন অর্জুনের বাবা সত্যপাল সিংহ। ফলে বাম আমলেও অক্ষত ছিল ‘সিংহ-গড়’। পুরো ভাটপাড়া জুড়ে বামেদের শক্তি তেমন না থাকায় সরাসরি বড় কোনও সংঘাত বাধেনি দুই দলে। তবে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ভোটের সময়ে দু’দলে ছোটখাটো সংঘর্ষ হয়েছে। তবে সে সব নিজের কৃতিত্বে সামলে নিয়েছেন ‘বাহুবলী’ অর্জুন। সেই ভাটপাড়ায় এমন অশান্তির আবহ কেন? এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, এক সময়ে অর্জুন ছিলেন এলাকার বেতাজ বাদশা। সেই অর্জুন ভোটের মুখে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরে গোলমাল শুরু হয়। সঙ্গীদের অনেকেই অর্জুনের সঙ্গে যাননি। ফলে তূল্যমূল্য শক্তিতে দু’দলই একে অন্যকে টক্কর দিতে তৈরি। পবন হলেও বকলমে তাঁর বাবা যে অর্জুনই আসল মাথা, তা জানেন ভাটপাড়ার বাসিন্দারা। অন্য দিকে, তৃণমূলের প্রার্থী পোড়খাওয়া রাজনীতিবিদ মদন মিত্র। লোকসভা ভোটের আগে থেকে রোজই কোনও না কোনও এলাকায় গোলমাল হয়েছে। পার্টি অফিস ভাঙা থেকে শুরু করে, ব্যানার, পোস্টার ছেঁড়াকে কেন্দ্র করে লোকসভা ভোটের পরে গত ১০ দিনে আটটি সংঘর্ষ হয়েছে। খুন হয়েছেন তৃণমূলের এক কর্মী। অন্য দিকে, বিজেপির দাবি, তাঁদের চার কর্মী জখম। তারা অভিযোগ করলেও গ্রেফতার করা হচ্ছে তাদের কর্মীদেরই।
একই সঙ্গে বিরক্ত ও সন্ত্রস্ত ভাটপাড়ার মানুষ জানাচ্ছেন, পরিস্থিতি এমন, একদল কোনও সভায় ৫০টি মাইক লাগালে অন্য দল পাল্টা সভা করে ৬০টি মাইক বাঁধছে। পুলিশ জানিয়েছে, দিন দু’য়েক আগেই অস্ত্র-সহ গ্রেফতার করা হয়েছে তিন যুবককে। ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জোন-১) কে কান্নন বলেন, ‘‘ভাটপাড়ার সব সীমান্ত সিল করে তল্লাশি চলছে। সব হোটেলে-লজ-গেস্টহাউসে তল্লাশি চলবে। যাদের বিরুদ্ধে আগে ভোটে গোলমাল পাকানোর অভিযোগ রয়েছে, তাদের শনিবার সন্ধ্যা থেকে থানায় বসিয়ে রাখা হচ্ছে। গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করলে কড়া পদক্ষেপ হবে।’’
শনিবার ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার এবং রিটার্নিং অফিসারের কাছে দায়ের করা অভিযোগে মদন মিত্রের দাবি, বিজেপি প্রচুর বাইরের লোক এনে পোলিং এজেন্ট করছে। অর্জুন সিংহের বাড়িতে প্রচুর ভুয়ো ভোটার কার্ড তৈরি করা হচ্ছে। বাইরে থেকে প্রচুর লোক এনে গোলমাল পাকানোর চেষ্টা হচ্ছে। তাঁর উপরেও হামলা হতে পারে। অর্জুনের বক্তব্য, ‘‘পাগলের প্রলাপ। এ সব নিয়ে উত্তর দেওয়ার কিছু নেই।’’
এই আবহেই আজ ভোট ভাটপাড়ায়।