উত্তেজনা: পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর বিক্ষোভকারীদের। শনিবার দাসপুরে। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে যাচ্ছেন পুলিশকর্মীরা। মৃতদেহ রাস্তায় ফেলে প্রাণপণে দৌড়চ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। শনিবার এমন দৃশ্য দেখা গেল দাসপুরে।
গুজরাতের আমদাবাদে সোনার কাজ করতে গিয়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছিল দাসপুরের যুবক ভাস্কর রানার (১৭)। এ দিন দেহ গ্রামে ফিরতেই শুরু হয় বিক্ষোভ। পুলিশকর্মীকে মারধর করে তাঁদের গাড়ি উল্টে দেন বিক্ষোভকারীরা। প্রথম দফায় পুলিশ পিছু হটলেও পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় বাহিনী। পুলিশকে দেখেই লাঠি, ইট নিয়ে তেড়ে যান বিক্ষোভকারীরা। এরপরই পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করতেই দেহ রাস্তায় ফেলে চম্পট দেন তাঁরা।
সঠিক তদন্তের দাবিতে শুরু হয় বিক্ষোভ। কিন্তু অভিযোগ ঠিক কী? মৃতের বাবা উত্তমবাবুর অভিযোগ, “ছেলে মালিককে এবার বেতন বাড়ানোর কথা বলেছিল। আমি ছেলের দেহ আনতে আমদাবাদ গিয়েছিলাম। বন্ধুরাই একথা বলাবলি করছিল। মালিক আমাকে টাকা দিয়ে রফা করার কথা জানিয়েছিল। আমি রাজি হয়নি।’’ এ দিন রাত পর্যন্ত অবশ্য মালিক প্রদীপ দাসের বিরুদ্ধে থানায় কোনও অভিযোগ করেনি মৃতের পরিবার। যদিও উত্তমবাবুর কথায়, ‘‘প্রয়োজনে লিখিত অভিযোগ করব। আমরা মালিককে গ্রেফতার এবং ঘটনার সঠিক তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’’ ঘাটালের এসডিপিও কল্যাণ সরকার বলেন, “ঘটনাটি আমদাবাদে ঘটেছে। বিস্তারিত কিছু জানি না। দু’পক্ষের সঙ্গে কথা বলব।” পুলিশ সূত্রের খবর, বিক্ষোভের ঘটনায় এ দিন রাত পর্যন্ত ২০ জনকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, বছর খানেক আগে দাসপুর থানার নহলা-চাঁইপাট গ্রামের ভাস্কর সোনার কাজের জন্য আমদাবাদে যায়। স্থানীয় জোতঘনশ্যাম গ্রামের প্রদীপের আমদাবাদে একটি সোনার দোকান রয়েছে। ভাস্কর এক পরিচিতের মাধ্যমে প্রদীপের দোকানেই কাজ শুরু করে। গত বুধবার সেখানেই ভাস্করের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে আমদাবাদ পুলিশ। ওই দিন দুপুরেই ভাস্কর বাড়িতে ফোন করছিল। বাবা-মায়ের সঙ্গে আঘঘণ্টা কথা হয় তার।
এমাসেই তার বাড়ি ফেরার কথা ছিল। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে ভাস্কর ছোট। বাবা উত্তমবাবু চাষবাস করেন। মা প্রতিমাদেবী একশো দিনের প্রকল্পে মাটি কাটার কাজ করেন। অভাবের সংসার। হাল ধরতে আমদাবাদ গিয়েছিল ভাস্কর। বেতন সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কি কোনও গোলমাল হয়েছিল? আমদাবাদ থেকে ফোনে মালিক প্রদীপবাবু বলেন, ‘‘বেতন নিয়ে কোনও কথা হয়নি।এখানে ময়নাতদন্ত হয়েছে। আমিও চাই পুলিশ তদন্ত করে মৃত্যুর কারণ পরিষ্কার করুক।”
ঠিক কী হয়েছিল বুধবার রাতে? প্রদীপবাবুর কথায়, ‘‘দোকান থেকে খানিক দূরে একটা ভাড়া বাড়িতে ভাস্কর সহ অন্য কর্মচারীরা থাকে। বৃহস্পতিবার সকালে এক কারিগরের মাধ্যমেই খবরটা পাই। তখনই স্থানীয় পুলিশকে খবর দিই।’’ পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনাস্থল থেকে কোনও সুইসাইড নোট উদ্ধার হয়নি।