করোনা-জয়ীদের পাশে গ্রামের মানুষ। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
এ এক অন্য গ্রামের গল্প। ছোট্ট গ্রামে সাত জন করোনা আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরেছেন। প্রতিবেশী ওঁরা। না, গ্রাম তাঁদের দূরে সরিয়ে দেয়নি। বরং আগলে রেখেছে। কেউ বাজারের দায়িত্ব নিয়েছেন। কেউ সকাল-বিকেল খোঁজ রাখছেন। এক প্রবীণা স্থানীয় রাজবংশী ভাষায় বলেন, ‘‘করোনা হইছে শুনি তো ভয় নাগে খানেক। কিন্তু ওমরা তো হামারে গ্রামের ছাওয়া। ফেলে দেমো না (করোনা হয়েছে শুনে ভয় তো একটু লেগেছে। কিন্তু ওরা গ্রামের সন্তান। ফেলে দেব না)।’’ কোচবিহারে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ওই গ্রাম দীঘলটারির গল্প ঘুরছে মানুষের মুখে মুখে। ওই গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে নাজিরহাট বন্দরে বাড়ি আব্দুর রউফের। ফল-ডিম নিয়ে তিনিও ওই বাড়িতে যান। তিনি বলেন, “গ্রামের মানুষ সবাই ওঁদের পাশে দাঁড়িয়েছে। যা দেখে খুবই ভাল লাগল।”
করোনা-জয়ীরা জানান, শিলিগুড়ির নার্সিংহোম থেকে স্বাস্থ্য দফতরের কর্মীরাই তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন। সেই সময় এলাকা জুড়ে ছিল আতঙ্কের ছায়া। দুই-একজন জানালার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে ছিলেন ওঁদের দিকে। মুখ ঢাকা। শুধু পরিবারের সদস্যরাই তাঁদের স্বাগত জানান। এমন ভাবেই চলে প্রথম কয়েক দিন। তার পর সবাই স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ওই সুস্থ হওয়ার তালিকাতেই রয়েছেন কার্তিক বর্মণ, অমল সেনরা। অমল বলেন, “বাড়িতে কিছু জিনিস দরকার ছিল। তা জানতে পেরে এক প্রতিবেশী এগিয়ে নিত্যপণ্য কিনে নিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেন।” কার্তিক বলেন, “আমার অনেক প্রতিবেশীই রোজ খোঁজ নিচ্ছেন। আমরা কেমন আছি, কিছু প্রয়োজন কি না— জেনে যাচ্ছেন। তা দেখে শক্তি পেয়েছি।”
দিনহাটা মহকুমার অংশ ওই গ্রাম। অধিকাংশই কৃষিজীবী। সামান্য জমিতে চাষ করে তেমন আয় হয় না। তাই গ্রামের অনেক বাসিন্দাই ভিন্ রাজ্যে পাড়ি দিয়েছিলেন। কার্তিক, অমলরা সেই দলেরই। মহারাষ্ট্রের কাপড় কারখানায় কাজ করতেন তাঁরা। করোনার প্রকোপ শুরু হতেই লকডাউন ঘোষণা করা হয়। তাতেই আটকে পড়েন সবাই। মাস দুয়েক সেখানে কাটিয়ে জেলায় ফেরেন। ২০ মে তাঁদের কোয়রান্টিন সেন্টারে রাখা হয়। সেখানে পরীক্ষায় করোনা পজ়িটিভ ধরা পড়ে। পরে শিলিগুড়িতে চিকিৎসার শেষে ফের পরীক্ষায় নেগেটিভ হন তাঁরা। ৩ জুন করোনা জয়ীর সার্টিফিকেট নিয়ে বাড়ি ফেরেন ওঁরা। কার্তিক, অমলদের পড়শি মুকুল বর্মণ, নৃপেন সেন, দেবারু বর্মণরা এখন এক বাক্যে বলছেন, ‘‘ওঁরা তো অপরাধ করেননি। সুস্থ হয়েই বাড়ি ফিরেছেন। তাই ওঁদের পাশে থাকতেই হবে।”