অমিত-হত্যা

এ বার হয়তো বিচার পাবেন, আশায় পুতুল

এত দিন আড়ালেই ছিলেন। স্বামীর প্রতি অন্যায় হতে দেখে প্রথম সংবাদমাধ্যমের সামনে বেরিয়ে এসে তার প্রতিবাদও করলেন। মঙ্গলবার সকালে সিউড়ি আদালত চত্বরে আত্মপ্রকাশ করে অভিযুক্তদের একাংশের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের সরকার পক্ষের আর্জির বিরোধিতা করলেন দুবরাজপুর থানার নিহত সাব-ইনস্পেক্টর অমিত চক্রবর্তীর স্ত্রী পুতুল সরকার-চক্রবর্তী। অমিত-হত্যার শুনানিতে যোগ দিতে চেয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আর্জিও জমা করলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

সিউড়ি ও চুঁচুড়া শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৬ ০১:০০
Share:

সিউড়ি আদালত চত্বরে নিহতের স্ত্রী। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

এত দিন আড়ালেই ছিলেন। স্বামীর প্রতি অন্যায় হতে দেখে প্রথম সংবাদমাধ্যমের সামনে বেরিয়ে এসে তার প্রতিবাদও করলেন।

Advertisement

মঙ্গলবার সকালে সিউড়ি আদালত চত্বরে আত্মপ্রকাশ করে অভিযুক্তদের একাংশের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের সরকার পক্ষের আর্জির বিরোধিতা করলেন দুবরাজপুর থানার নিহত সাব-ইনস্পেক্টর অমিত চক্রবর্তীর স্ত্রী পুতুল সরকার-চক্রবর্তী। অমিত-হত্যার শুনানিতে যোগ দিতে চেয়ে আইনজীবীর মাধ্যমে আর্জিও জমা করলেন। শুনানি শুরু আগে পুতুলদেবী বললেন, ‘‘আমার স্বামী ডিউটি করতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। আর তিনি-ই বিচার পাবেন না? তাই মামলা প্রত্যাহারের বিরোধিতা করতে ছুটে এসেছি।’’

ঘটনা হল, গত ৫ জানুয়ারি বীরভূমের পিপি রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় সিউড়ি আদালতে ওই খুনে অভিযুক্ত এক তৃণমূল নেতা-সহ ৩৬ জনের নাম মামলা থেকে প্রত্যাহারের আর্জি জানিয়েছিলেন। প্রবল সমালোচনা হয়েছিল রাজ্য সরকারের ভূমিকার। স্তম্ভিত হন অমিতের পরিবার। ক্ষোভ চড়ায় পুলিশ মহলের একাংশেও। ওই আর্জির প্রেক্ষিতে এ দিন সিউড়ি আদালত ঠিক কী পদক্ষেপ করে, তা নিয়ে কৌতুহল ছিল অপরিসীম।

Advertisement

একরাশ উৎকণ্ঠা নিয়ে হাজির ছিলেন দুই মহিলাও। এক জন পুতুলদেবী, অপর জন তাঁর মা কবিতা সরকার। কবিতাদেবী বলেন, ‘‘যে দিন থেকেই শুনেছে জামাই খুনে অভিযুক্তদের নাম বাদ দেওয়ার কথা চলছে, তখন থেকেই কান্নাকাটি শুরু করেছে মেয়ে। তাই আজ ছুটে এসেছে। নায্য বিচার পেলে শান্তি পাব।’’ শেষ পর্যন্ত আগের আবেদন না নিয়ে পিপি না এগনোর সিদ্ধান্ত নেওয়ায় অনেকটাই স্বস্তিতে পুতুলদেবী। শুনানি শেষে বললেন, ‘‘যখন শুনেছিলাম ওঁর খুনে অভিযুক্তদের নাম বাদ দিতে চাইছেন পিপি, মন ভেঙে গিয়েছিল। এ বার মনে হচ্ছে বিচার পাব। তবে সময়ই বলবে, কতটা কী হয়।’’

পুতুলদেবী নিজেও পুলিশের কনস্টেবল পদে কর্মরত। বর্তমানে বালুঘাট কোর্টে কর্মরত পুতুলদেবী এ দিন দাবি করেন, ২০০৯ সালে প্রশিক্ষণের সময় অমিতের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘অমিত তখন সাব ইনস্পেক্টর পদে ট্রেনিং করছে। মারা যাওয়ার মাত্র কয়েক মাস আগে আমাদের রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়েছিল। কথা ছিল, সে বছর জুনেই অনুষ্ঠান করে বিয়ে হবে। কিন্তু সেই সুযোগ আর হয়নি।’’ অমিত জখম হয়ে দুর্গাপুরের মিশন হাসপাতালে ভর্তি থাকার সময়ে তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। মৃত্যুর পরে সংবাদমাধ্যম থেকেই এই মামলার গতিপ্রকৃতি সম্বন্ধে নজর রাখতেন বলে জানিয়েছেন।

চার বছর বয়সে বাবা-মায়ের মৃত্যুর পর থেকে অমিত ও তাঁর বোন অমিতাকে মানুষ করেছেন তাঁদের পিসিমা-পিসেমশাই। চুঁচুড়ার রথতলার এক চিলতে বাড়িতে থেকে পড়াশোনা শিখেই পুলিশের চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন অমিত। এ দিন বিকেলে অমিতের পিসিমা শেফালি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘অমিত যখন ব্যারাকপুরে ট্রেনিং করতে গিয়েছিল, সেই সময় জানিয়েছিল বালুরঘাটের বাসিন্দা পুতুল সরকার নামে এক পুলিশকর্মীর সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়েছে। এইটুকু ছাড়া অমিত আর ওঁর সম্বন্ধে কোনও দিন কিছু বলেনি।’’ তবে আপাতত অমিতের বিচার নিয়েই বেশি চিন্তিত তাঁরা। শেফালিদেবী বলছেন, ‘‘একমাত্র দোষীরা শাস্তি পেলেই অমিতের আত্মার শান্তি হবে। আমরা সে দিনের অপেক্ষাতেই আছি।’’ এ দিন সরকারি আইনজীবী আগের আর্জি প্রত্যাহার করে নেওয়ায় সেই আশায় দেখছেন তাঁরা। অমিতের বোন অমিতাদেবী বলেন, ‘‘দাদার খুনের অভিযুক্তদের নাম বাদ পড়বে শুনে ভেঙে পড়েছিলাম। এখন চিন্তা অনেকটাই দূর হল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement