মায়েরা হামেশাই বলে থাকেন, ছেলে দাঁতে আনাজ কাটে না। মেয়ে পাতে শাক দেখলেই নাক সিঁটকোয়। এ দেশে যখন এই হাল, বিদেশের বাজারে কিন্তু আনাজের চাহিদা বাড়ছে হইহই করে। তার একটা বড় অংশ রফতানি হচ্ছে এ রাজ্য থেকেই।
জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, ব্রিটেন, ডেনমার্ক, সুইৎজারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসের বাজারে নিয়মিত বাংলার আনাজ পাঠানো হচ্ছে। খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে সারা বছরই শাকের চাহিদা রয়েছে। পাট, পুঁই ও লাউ শাকের চাহিদা সবচেয়ে বেশি, দৈনিক গড়ে এক হাজার কিলোগ্রাম।’’
কিন্তু সমস্যা হল, বিদেশে বাজার থাকলেও তা পুরোমাত্রায় কাজে লাগাতে পারছে না রাজ্য। কীটনাশক ব্যবহারের কারণে বহু ক্ষেত্রেই রফতানি মার খাচ্ছে। যেমন উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামের বীরপাড়াকে এক সময় ‘শাকের পীঠস্থান’ বলা হতো। বছরভর হরেক রকম শাকের চাষ হত সেখানে। কিন্তু শাক চাষের যম ‘হোয়াইট ফ্লাই’। তার বাড়বাড়ন্তে বীরপাড়ার শাক এক রকম ব্রাত্য হয়ে পড়েছে বিদেশের বাজারে।
শাকের মতোই পাশ্চাত্যে বিপুল চাহিদা গন্ধরাজ, কাগজি লেবু আর কারিপাতার। কীটনাশক ব্যবহারের কারণে সে সবও পাঠানো যাচ্ছে না। এমনই একটি সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর অঙ্কুশ সাহা বলেন, ‘‘ইউরোপের অন্যতম প্রধান শর্ত, ওই সব ফসল যেখানে চাষ হয় সেই এলাকাকে কীটমুক্ত (পেস্ট ফ্রি জোন) ঘোষণা করতে হবে। তা না হওয়ায় অতিরিক্ত ফলন হওয়া সত্ত্বেও বিদেশের বাজার ধরা যাচ্ছে না।’’
একই ভাবে ১ জানুয়ারি থেকে করলা, চিচিঙ্গা, কাঁকরোল ও কচু শাক রফতানির উপর থেকে ইউরোপ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিলেও এ রাজ্যের সংস্থাগুলি হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। কেন? রফতানিকারীরা বলছেন, ইউরোপের সমস্ত শহরের স্থানীয় প্রশাসন ভীষণই খুঁতখুতে। ফসলের রং একটু ফ্যাকাসে হয়ে গেলেই মুখ ফিরিয়ে নেয়। একটা নির্ধারিত উষ্ণতায় (ভেপারাইজড হিট ট্রিটমেন্ট) কাঁচা আনাজের সংক্রমণ দূর করা আবশ্যিক। কিন্তু এ রাজ্যে তেমন প্ল্যান্ট নেই। সূত্রের খবর, প্ল্যান্ট বসাতে সম্প্রতি উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। গত ৬ এপ্রিল কৃষি মন্ত্রকের ডাকা বৈঠকে এ রাজ্যের রফতানিকারীদের বলা হয়েছে, শীঘ্রই কেন্দ্র এই ব্যাপারে নবান্নের কাছে প্রস্তাব পাঠাবে।