বাঘরোল সংরক্ষণে জোর। —ফাইল চিত্র।
তারা পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপ্রাণী। তার পরেও তারা বিপন্ন, অবহেলিত। মানুষের সঙ্গে সহাবস্থানের জন্য নানা কারণে মানুষের সঙ্গে তাদের নিত্য সংঘাত বাধে। এই প্রাণীটিকে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনাও হামেশাই ঘটে। সেই বাঘরোল বা মেছো বিড়াল নিয়ে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন এবং বিভিন্ন পরিবেশ সংগঠনের তরফে নানা অনুষ্ঠানও করা হয়। এ বার বাঘরোল নিয়ে একটি তথ্যচিত্র বানিয়েছেন হাওড়া জেলা যৌথ পরিবেশ মঞ্চের দুই সদস্য। উদ্দেশ্য, আরও বেশি বেশি মানুষের মধ্যে এই সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া। বাঘরোল সংরক্ষণ নিয়ে তাঁদের উৎসাহিত করা।
কৌশিক মুখোপাধ্যায় এবং শুভজিৎ মাইতির যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয়েছে এই তথ্যচিত্র। নাম ‘ফিশিং ক্যাট: দি প্রাইড অব বেঙ্গল’। ৬৮ মিনিটের ইংরেজি তথ্যচিত্রে বাঘরোলের সংরক্ষণ-সহ নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। ছবিতে কণ্ঠ দিয়েছেন অভিনেতা সব্যসাচী চক্রবর্তী। রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) দেবল রায় জানান, চলতি বছরের ১ এপ্রিল জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা)-র সঙ্গে মিলে বাঘরোল সমীক্ষার কাজ শুরু হয়েছে। তাঁর কথায়, “বাঘের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলে আতঙ্কে বাঘরোলকে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। কিন্তু আদতে মেছো বিড়াল একটি নিরীহ প্রাণী। তাই বিপন্ন এই রাজ্যপ্রাণীকে বাঁচাতে এমন তথ্যচিত্রের গুরুত্ব অপরিসীম।”
তথ্যচিত্রটির শুটিং হয়েছে হাওড়ার দেউলপুরে। ২০১৮ সালের শেষ দিকে এটি তৈরি শুরু হয়। শেষ হয় চলতি বছরের মার্চে। তথ্যচিত্রের পরিচালক কৌশিক মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাঘরোল জলাভূমিতে থাকে। আমরা তথ্যচিত্রটির মাধ্যমে একসঙ্গে অনেক মানুষের কাছে এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে চাইছি— জলাভূমি বাঁচান, বাঘরোল বাঁচান।” তথ্যচিত্রটির সঙ্গে যুক্ত বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘শের’। তাদের কর্তা জয়দীপ কুণ্ডুর মতে, ‘‘এই ধরনের তথ্যচিত্র পরিবেশ বা বন্যপ্রাণ রক্ষার পাশাপাশি সামাজিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।’’
প্রায় ১৫ বছর ধরে জলাভূমি সংরক্ষণ তথা মেছো বিড়াল সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করে চলেছেন ‘ফিশিং ক্যাট: দি প্রাইড অব বেঙ্গল’ তথ্যচিত্রের ফিল্ড ডিরেক্টর শুভজিৎ মাইতি। তিনি বলেন, “বাঘরোল যে রাজ্যপ্রাণী, তা রাজ্যের বেশির ভাগ মানুষই জানেন না। প্রাণীটিকে অনেকেই দেখেননি। তাই এই প্রাণীটিকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে চাইছি। যাতে মানুষ বাঘরোলকে ভালবেসে সংরক্ষণের তাগিদ অনুভব করেন।” তিনি আরও জানান, কোনও প্রাণীকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে তার বাসস্থানকে বাঁচিয়ে রাখতে হয়। মেছো বিড়াল থাকে জলাভূমিতে। কিন্তু হাওড়ায় জলাভূমিগুলি বুজিয়ে ফেলা হচ্ছে। সেই বিষয়টিও এই তথ্যচিত্রে তুলে ধরা হয়েছে।