Covid Vaccines

আজ ফের রাজ্যে প্রতিষেধক দান

স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো নয়, প্রতিটি প্রতিষেধক কেন্দ্রেই ১০০ শতাংশ গ্রাহকই যাতে প্রতিষেধক নেন, তাতেই জোর দেওয়া হচ্ছে।’’

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০২১ ০৪:৩৭
Share:

ছবি পিটিআই।

প্রথম দিনে কিছুটা জড়তা নিয়ে শুরু করলেও আজ, সোমবার কোভিশিল্ড প্রদান প্রক্রিয়া মসৃণ ভাবেই সম্পন্ন করতে চাইছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। সে কারণে আজই রাজ্যে প্রতিষেধক কেন্দ্রের সংখ্যা ২০৭টির থেকে বাড়াতে নারাজ দফতর।

Advertisement

স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো নয়, প্রতিটি প্রতিষেধক কেন্দ্রেই ১০০ শতাংশ গ্রাহকই যাতে প্রতিষেধক নেন, তাতেই জোর দেওয়া হচ্ছে।’’ শনিবার প্রথম দিনে ১৫ হাজার ৭০৭ জন (৭৫.৯ শতাংশ) জন প্রতিষেধক নিয়েছিলেন। কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ, সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ও নগর (আরবান) প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র মিলিয়ে মোট ২০টি কেন্দ্রে ৯২ শতাংশ গ্রাহক প্রতিষেধক নিয়েছিলেন। সেখানে আজ প্রতিটি জায়গাতেই ১০০ জন গ্রাহকের সকলেই যাতে ভ্যাকসিন পান, তাতেই জোর দিচ্ছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ২০৭টি কেন্দ্রে চলবে প্রতিষেধক প্রদান।

তবে প্রথম দিনের মতো রবিবারও দুপুর তিনটে পর্যন্ত কো-উইন অ্যাপ কাজ করেনি। ফলে আজ কো-উইন অ্যাপের বদলে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতেই প্রতিষেধক প্রদানের প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হবে। সূত্রের খবর, কয়েকটি জায়গায় কো-উইন অ্যাপ ব্যবহার করেই গ্রাহকদের নাম নথিভুক্ত করা গিয়েছে। তবে জেলা ও কলকাতার বেশিরভাগ জায়গাতেই কম্পিউটারে তালিকা তৈরি করে রবিবার ফোন করে গ্রাহকদের খবর দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, প্রথম দিনের প্রতিষেধক দেওয়ার গোটা পর্বে তেমন কোনও খামতি ধরা পড়েনি। শুধু কো-উইন অ্যাপ বিভ্রাটে হাতে-কলমে তালিকা তৈরি করায় অনেক জায়গাতেই অনেক গ্রাহক সময় মতো খবর পাননি। আবার টাইম স্লটও জানানো সম্ভব না হওয়ায় কোনও জায়গাতে এক সময়ে একসঙ্গে অনেক গ্রাহক হাজির হয়ে গিয়েছিলেন। ফলে একটা সময় ফাঁকাই থেকেছে গোটা কেন্দ্র ।

Advertisement

আরও পড়ুন: গরিবদের টিকা নিখরচায় কবে, সরব বিরোধীরা

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, আজ, সোমবার যে গ্রাহকদের তালিকা হয়েছে, তাঁদের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। পাশাপাশি দফতর থেকে একটি নির্দেশিকা জারি করে জানানো হয়েছে, কোভিশিল্ডের প্রতিটি ভায়ালের সদ্ব্যবহার করতে হবে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অনির্বাণ দলুই জানান, একটি ভায়াল থেকে ১০ ডোজ় হয়। কিন্তু কিছু ভায়ালে কিছুটা মাত্রা বেশি দেওয়া থাকে। কারণ ভায়াল থেকে সিরিঞ্জে তরল ভ্যাকসিন ভরার সময় বা প্রয়োগের কিছুটা নষ্ট হতে পারে। কিন্তু সেটা গুরুত্ব দিয়ে সতর্ক ভাবে কাজটি করলে কোনও কোনও ভায়াল থেকে ১১টি ডোজ় হতে পারে। অনির্বাণ বলেন, ‘‘এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে প্রতিটি কেন্দ্রে ভায়ালের সদ্ব্যবহার যাতে হয়, তার দিকেই জোর দিতে বলা হয়েছে।’’

শনিবার প্রতিষেধক নেওয়ার পরে অসুস্থ হয়ে এনআরএস হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন বিধানচন্দ্র রায় শিশু হাসপাতালের নার্স পিঙ্কি শূর। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রবিবার তাঁর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে তৈরি একটি দল পিঙ্কির চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছেন। বাকি যে ১৩ জনের মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছিল, তাঁরা সকলেই সুস্থ রয়েছেন। স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিনিধি দল তাঁদের প্রতি নজর রাখছে। ‘কো-উইন’ ঠিক মতো কাজ না করায় রবিবার কিছু জেলায় সমস্যা হয়েছে। এর পাশাপাশি জেলা প্রশাসনগুলি নিশ্চিত করতে চাইছে যাতে স্বাস্থ্যকর্মী ছাড়া অন্য কেউ প্রতিষেধক না-পান।

আরও পড়ুন: প্রথম দিন কোভিড প্রতিষেধক নিয়ে বিতর্কে আরও এক জনপ্রতিনিধি

পুরুলিয়ায় রবিবারও ‘কো-উইন’ অ্যাপটি ঠিক ভাবে কাজ না-করায় স্বাস্থ্য দফতর থেকে আলাদা করে মেসেজ পাঠানো হচ্ছে। সঙ্গে স্বাস্থ্য কর্তাদের আশা, প্রথম দিন প্রতিষেধক নেওয়ার পরে কারও কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বলে সোমবার আরও গ্রাহক আসতে পারেন। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে আবার তালিকায় ১০০ জনের পরিবর্তে বাড়তি অন্তত ২০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করে রাখা হচ্ছে। যেমন মালদহে প্রথম দিন মাত্র ৫৪ শতাংশ টিকাকরণ হয়েছে। আজ, সোমবার সেখানে প্রতিটি কেন্দ্রে ১৩০ জনকে ডাকা হচ্ছে। জলপাইগুড়ি, উত্তর দিনাজপুরে প্রথম দিন যাঁরা আসেননি সোমবারের তালিকায় ফের তাঁদের নাম রাখা হচ্ছে। হুগলিতেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে আজ, সোমবার প্রতি কেন্দ্রে ১২০ জনের নাম তালিকায় রাখা হচ্ছে।

প্রথম দিন দার্জিলিং জেলার পাঁচটি কেন্দ্রে ৫০০ জনের মধ্যে ৪৯৮ জন টিকা নিয়েছেন। সাফল্য ধরে রাখতে তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁদের আলাদা করে ফোন করা হচ্ছে। ঝাড়গ্রামের ৪টি কেন্দ্রেই প্রথম দিনে ১০০ জনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। এই জেলা এ বার তাই কেন্দ্র পিছু ১২০ জনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে। কিন্তু কী উপায়ে জঙ্গলমহলের এই জেলা প্রথম দিনেই একশোয় একশো পেল? জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, যাঁরা কেন্দ্রে আসতে দোনোমোনো করছিলেন, তাঁদের গাড়ি পাঠিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। তা ছাড়া, দ্বিতীয় তালিকাও তৈরি ছিল। ফলে, কোথাও একজন টিকা না-নিলেও তক্ষুণি সেই শূন্যস্থান পূরণ করা গিয়েছে।

পূর্ব বর্ধমানের সাতটি কেন্দ্রেও শনিবার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। জেলার স্বাস্থ্য-কর্তাদের দাবি, প্রতিষেধক প্রাপকদের গত তিন দিন ধরে একাধিক বার ফোন করা হয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে সবাই আসছেন কি না, তা খোঁজ রাখা হয়েছে। শনিবার বিকেল ৪টে পর্যন্ত টিকাকরণের কথা থাকলেও সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত তা চালিয়ে যাওয়া হয়েছে।

সব জেলায় অবশ্য এই সাফল্যের ছবি নেই। নদিয়ায় যেমন প্রথম দিন লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪৯ শতাংশ পুরণ করা সম্ভব। পশ্চিম বর্ধমানেও প্রথম দিন ৬০০ জনের মধ্যে ৩২৬ জন প্রতিষেধক নিয়েছেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, এর কারণ হল ভয় বা আশঙ্কা। হাওড়ার সিএমওএইচ ভবানী দাস মানছেন, ‘‘কয়েকজনের মধ্যে ভীতি কাজ করেছে। তাঁদের আবার তারিখ দেওয়া হবে।’’

মেদিনীপুরে আবার অন্য সমস্যা। পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দীগ্রাম স্বাস্থ্য জেলা প্রথম দিনে ৫০ শতাংশের কিছু বেশি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে। কিন্তু আজ নন্দীগ্রামে সভা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। ফলে, ক’জন আসবেন সংশয় থাকছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুব্রতকুমার রায় বলেন, ‘‘অসুবিধা হলে পরে ডেকে প্রতিষেধক দেওয়া হবে।’’ পশ্চিম মেদিনীপুরে প্রতিষেধক কম পড়েছে। এই জেলায় স্বাস্থ্যকর্মী প্রায় ২৬ হাজার। আর কোভিশিল্ডের ডোজ়ও এসেছে ২৬ হাজার। কিন্তু প্রত্যেককে ২৮ দিনের ব্যবধানে দু’টি ডোজ় দিতেই হবে। ফলে, ঝুঁকি না নিয়ে আপাতত জেলার অর্ধেক অর্থাৎ ১৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীকে প্রতিষেধক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডল মানছেন, ‘‘প্রয়োজনীয় সংখ্যক প্রতিষেধক জেলায় আসেনি। ফলে, স্বাস্থ্যকর্মীদের সকলকে এখনই প্রতিষেধক দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement