পর্যটন প্রসারে পুরানিদর্শনে নজর উত্তর দিনাজপুরে

উত্তর দিনাজপুরে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন থাকা এলাকায় পর্যটনের প্রসারে উদ্যোগী হল জেলা প্রশাসন।

Advertisement

মেহেদি হেদায়েতুল্লা

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৪৫
Share:

বেহাল: মুঘল আমলে তৈরি জামে মসজিদ। ইসলামপুরের কলতাহা এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

উত্তর দিনাজপুরে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন থাকা এলাকায় পর্যটনের প্রসারে উদ্যোগী হল জেলা প্রশাসন।

Advertisement

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, গত ৯ দিন ধরে রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহালয় অধিকারের একটি প্রতিনিধিদল জেলার তেমন কয়েকটি জায়গা পরিদর্শন করে। পর্যটনের প্রসারে জেলা প্রশাসনের তরফে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন থাকা কয়েকটি জায়গার কথা রাজ্য পর্যটন দফতরে পাঠানো হয়েছিল।

প্রতিনিধিদলের তরফে জানানো হয়েছে, ওই জায়গাগুলি পরিদর্শনের পাশাপাশি সেখানকার ইতিহাস সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এ নিয়ে একটি রিপোর্ট দফতরে জমা দেওয়া হবে। সেখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও পরিকাঠামো খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করতে উদ্যোগী হবে দফতর।

Advertisement

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, জেলায় এক দিকে যেমন কয়েকটি ঐতিহাসিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে, তেমনই রয়েছে পুরনো অনেক মন্দির-মসজিদ। সেগুলির নির্মাণশৈলী গবেষকদের আকর্ষণ করে। অনেক মন্দিরের বিগ্রহও খুবই বিরল শৈলীর পরিচয় ধরে রেখেছে। পর্যটকদের কাছে সে সব তুলে ধরার চেষ্টা করছে প্রশাসন।

প্রশাসন জানিয়‌েছে, প্রতিনিধিদলটি জেলার পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন থাকা জায়গাগুলির বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করার পাশাপাশি জেলার ৯টি ব্লকের দিঘি, মসজিদ, মন্দির, জমিদারবাড়ি এবং ইংরেজ আমলের ডাকবাংলো-সহ ৬১টি জায়গা ঘুরে দেখেন। সে সবের মধ্যে থেকে বাছাই করা জায়গাগুলিকে পর্যটন মানচিত্রে স্থান দেওয়া যায় কিনা তা দেখে ওই প্রতিনিধিদল।

জেলাবাসীর একাংশের অভিযোগ, জেলায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হচ্ছে অনেক পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন। জেলার কয়েকটি তেমন নিদর্শনকে ‘হেরিটেজ কমিশন’ সংস্কার করলেও, এখনও অনেকগুলি সংস্কারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের বক্তব্য, রাজ্য পর্যটন দফতরের তরফে জেলা প্রশাসনকে চিঠি পাঠিয়ে পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন থাকা জায়গাগুলিকে সংস্কার করার কথা বলা হয়েছিল। জেলায় তেমন কতগুলি জায়গা রয়েছে, তার তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়। জেলা প্রশাসন প্রতিটি ব্লক থেকে বাছাই করে কয়েকটি পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শনের ছবি, স্থান-সহ অন্য তথ্য পাঠায়। তার পরেই রাজ্য প্রত্নতত্ত্ব ও সংগ্রহালয়ের তরফে জেলায় আসে প্রতিনিধিদল।

প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ওই দলের সদস্যরা ২০ ডিসেম্বর জেলায় পৌঁছন। তাঁরা জেলার ৬১টি জায়গা পরিদর্শন করেন। ওই প্রতিনিধিদলের সঙ্গে ছিলেন জেলার ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করা বৃন্দাবন ঘোষও। তিনি জানান, জেলায় প্রচুর পুরনো মন্দির-মসজিদ রয়েছে। রয়েছে জমিদারবাড়ি, ইংরেজ আমলে তৈরি বাংলো, নীলকুঠি। রাজ্য হেরিটেজ কমিশন কয়েকটি জায়গা সংস্কার করলেও অনেকগুলি এখনও নজরের আড়ালে থেকে গিয়েছে।

তিনি জানান, সংস্কার করা হয়েছে এমন জায়গাগুলির মধ্যে অন্যতম রায়গঞ্জের পীরপুকুর মাজার, বিন্দোলের ভৈরবী মন্দির, মারনাই শিবমন্দির এবং করণদিঘির নীলকুটি। ইসলামপুরের চৌধুরী জমিদারবাড়িতে সংস্কারের অর্ধেক কাজ হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, পর্যটন দফতরের কাছে পাঠানো তালিকায় রয়েছে চোপড়ার হোসেন দিঘি, গান্ধার দিঘি, ইসলামপুরের কলতাহার মসজিদ এবং সোনাখোদা মসজিদ, গোয়ালপোখর ১ ব্লকের গোয়াগাঁও জমিদারবাড়ি, দেবীগঞ্জ ডাকবাংলো, গোয়ালপোখর ২ ব্লকের লালগঞ্জ কালীমন্দির এবং ভগত বাড়ি, করণদিঘির বাজারগাঁও দূর্গ, বাগিন্দার শিবমন্দির, রায়গঞ্জের বাহিন জমিদারবাড়ি, বালিয়া রাজবাড়ি, হেমতাবাদের মালন ডাকবাংলো ও হেমতাবাদ থানাঘর, কালিয়াগঞ্জের বালিয়া দুর্গা ও লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দির এবং তমছাড়ি মঠবাড়ি, ইটাহারের চূড়ামণ শিবমন্দির।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement