থমথমে: স্বরূপ গড়াইয়ের খুনের প্রতিবাদে মিছিল বিজেপির। সোমবার নানুরের রামকৃষ্ণপুরে। নিজস্ব চিত্র
নানুরের বিজেপি কর্মীর মৃতদেহ নিয়ে সোমবার দিনভর তপ্ত রইল কলকাতা। নানুরে গুলিবিদ্ধ ওই বিজেপি কর্মী স্বরূপ গড়াইয়ের মৃত্যু হয় কলকাতার হাসপাতালে। মৃতের পরিজন এবং বিজেপি নেতৃত্ব তাঁর দেহ দলের রাজ্য দফতরে নিয়ে যেতে চাইলেও পুলিশ বাধা দেয়। যার জেরে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল (এনআরএস)-এ সারা দিন অশান্তি চলে। শেষ পর্যন্ত মৃতদেহ না নিয়েই হাসপাতাল ছাড়েন মৃতের পরিজন এবং বিজেপি নেতা-কর্মীরা। স্বরূপের দেহ নিয়ে দলের রাজ্য দফতরে যাওয়ার ছাড়পত্র পেতে আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছে বিজেপি। অন্য দিকে, তৃণমূলের বক্তব্য, পুলিশ-প্রশাসন মৃতদেহ ছেড়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু মৃত্যুর মতো মর্মান্তিক ঘটনা নিয়েও নোংরা রাজনীতি করতে চাইছে বলে বিষয়টি নিয়ে অযথা জলঘোলা করছে বিজেপি।
পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার রাতে দলের পতাকা টাঙানোকে কেন্দ্র করে নানুর থানার রামকৃষ্ণপুরে বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে ঝামেলা বাধে তৃণমূলের। তার জেরে স্থানীয় বিজেপি কর্মী, বছর পঁয়ত্রিশের স্বরূপকে গুলি করে খুনের চেষ্টা এবং তাঁর বাবা ভুবনেশ্বর গড়াইকে বাঁশ দিয়ে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ওই ঘটনায় নিহতের পরিবারের তরফে ১১ জনের নামে অভিযোগ হয়েছে। পুলিশ গ্রেফতার করেছে তিন জনকে।
স্বরূপকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে পার্ক সার্কাসের এক হাসপাতালে এনে ভর্তি করানো হয়। রবিবার রাতে সেখানেই মারা যান স্বরূপ। পরে এনআরএসে মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়। রাজ্য বিজেপির সহ সভাপতি বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘স্বরূপের স্ত্রী চায়না এবং আমরা স্বরূপের দেহ দলের রাজ্য দফতরে ঘুরিয়ে নানুরে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ বলে ময়নাতদন্তের পর তাদের অ্যাম্বুল্যান্সে দেহ নিয়ে সোজা নানুর যেতে হবে। দলের রাজ্য দফতরে যাওয়া যাবে না।’’ এই নিয়ে পুলিশের সঙ্গে তর্কাতর্কির পর স্বরূপের দেহ না নিয়েই ফিরে যান তাঁর স্ত্রী ও বিজেপি নেতারা। বিচার চাইতে এর পর কলকাতা হাইকোর্টে যাবে বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘এ রাজ্যে বিজেপি করলেই খুন হতে হচ্ছে। দেহও আটকে রাখা হচ্ছে। নিহত কর্মীর দেহ পেতে আন্দোলন করতে হচ্ছে!’’
বিজেপি-র যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে লালবাজারের এক কর্তা বলেন, ‘‘ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ। সেই সময় দিতেই হবে। তা ছাড়া, দেহ নিয়ে বিজেপি নেতারা কী করবেন, সে ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে কথাই বলতে চাননি!’’ তিনি জানান, নানুর থানার পুলিশ এখানে এসেছে। ওই দেহ নিয়ে কী হবে, তা তারাই ঠিক করবে।
অন্য দিকে, স্বরূপের খুনের প্রতিবাদে এ দিন বীরভূমের বিভিন্ন প্রান্তেও বিক্ষোভ দেখান বিজেপি নেতা-কর্মী-সমর্থেকরা। সিউড়িতে পুলিশ সুপারের দফতরের সামনে ধর্নায় বসেন তাঁরা।