তছনছ: রবিবার রাতে ভাটপাড়ার রুস্তম গুমটির চটের বস্তার এই গুদামে আগুন লাগানো হয়েছিল বলে অভিযোগ। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়
ভোটের দিন সন্ত্রাস, গোলমালের সাক্ষী ছিল এলাকা। ভোট শেষ হওয়ার পরেও উত্তেজনা কমল না ভাটপাড়ায়। তৃণমূল-বিজেপির মুখোমুখি সংঘর্ষ না বাধলেও সোমবার দফায় দফায় বোমাবাজি হয়েছে। পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে চলে যেতে পারে, এই আশঙ্কায় সন্ধের দিকে ভাটপাড়া বিধানসভা কেন্দ্রের জগদ্দল থানা এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন।
রবিবার রাতে গোলমালের মধ্যে কঁাকিনাড়ায় গুলিবিদ্ধ হন র্যাফ কর্মী রাজু দে। তাঁকে সোমবার সকালে মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দুপুরে অস্ত্রোপচার হয়েছে। দু’ঘণ্টা ধরে চলা অস্ত্রোপচারে গুলি বার করা হয়েছে। চিকিৎসক রাজশ্রী বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, গুলি ডান দিকের চোয়ালের হাড় ভেদ করে ডান কানের নীচে আটকে ছিল। রোগীর পুরো স্বাভাবিক হতে তিন থেকে ছ’মাস সময় লাগবে।
রবিবার ও সোমবার পুলিশ দু’পক্ষের প্রায় ৪৫ জনকে গ্রেফতার করেছে। তারপরেও পরিস্থিতি সামাল দিতে কার্যত নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে পুলিশকে। সোমবার এক জায়গা থেকে বোমাবাজির খবর পেয়ে সেখানে হাজির হতে না হতেই অন্য জায়গা থেকে বোমার শব্দ ভেসে এসেছে। গোলমাল পাকানোর অভিযোগে সোমবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছে অর্জুন সিংহ ঘনিষ্ঠ সোহনপ্রসাদ চৌধুরীকে। তিনি ভাটপাড়া পুরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর।
এ দিন রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের কার্যালয়ে গিয়ে ভাটপাড়ার তৃণমূল প্রার্থী মদন মিত্র ৫টি বুথে ফের ভোট গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে এলাকায় দ্রুত শান্তি ফেরানোর আর্জিও জানান তিনি।
কমিশন সূত্রের খবর, ভোটের দিন গোলমালের পরে অর্জুনের বাড়ির সামনে এক সেকশন কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার সুপারিশ করেন বিশেষ পুলিশ পর্যবেক্ষক বিবেক দুবে। সোমবার কমিশন তা অনুমোদন করেছে।
সোমবার কার্যত বন্ধের চেহারা নেয় ভাটপাড়ার বিভিন্ন এলাকা। দোকানপাটের ঝাঁপ খোলেননি অনেকেই। পথঘাটে লোকজন কম। মোড়ে মোড়ে পুলিশ-কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়েও ঠেকানো যায়নি অশান্তি। তৃণমূল এবং বিজেপি একে অন্যের উপরে গোলমালের দায় চাপিয়েছে।
ভোটের দিন তৃণমূলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সোমবার সকাল ৭টা নাগাদ বিজেপির লোকজন কাঁকিনাড়া স্টেশনে অবরোধ করেন। সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে দুর্ভোগে পড়েন বহু যাত্রী। অনেকে সড়ক পথে গন্তব্যে পৌঁছনোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। কারণ, রাস্তাঘাটে যানবাহন ছিল খুবই কম। আড়াই ঘণ্টা পরে পুলিশ অবরোধ তোলে।
এরপরেই সেখান থেকে উঠে গিয়ে কিছু লোক পানপুর মোড়ে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে আটকে দেয়। মিনিট পনেরো পরে সেখান থেকেও তাদের তুলে দেয় পুলিশ। পরে জগদ্দল থানা ঘেরাও করে বিজেপি কর্মীরা। ভোটের দিন গোলমালে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রুস্তম গুমটি, বারুইপাড়া, ভাটপাড়া পুরসভার সামনের রাস্তায় শুরু হয়ে যায় বোমাবাজি। রুস্তম গুমটির একটি পাট গুদামে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। ঘোষপাড়া রোডে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরের দিকে ৮, ৯, ১৩, ১৪, এবং ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে নতুন করে বোমাবাজি শুরু হয়।
ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি (জোন ১) কে কান্নন বলেন, “নতুন নতুন এলাকায় গোলমাল শুরু হচ্ছে বলে সামাল দিতে সময় লাগছে। কারা, কোথা থেকে, কী ভাবে গোলমাল পাকাচ্ছে—তা আমরা খুঁজে বের করেছি। খুব তাড়াতাড়ি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসবে।” গোটা ঘটনায় একে অন্যর ঘাড়ে দায় চাপিয়েছে তৃণমূল ও বিজেপি। পুরপ্রধান সোমনাথ তালুকদার বলেন, “বিজেপির লোকেরা বোমাবাজি করেছে। আমাদের কর্মী-সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর করছে।” অর্জুন সিংহের পাল্টা দাবি, “তৃণমূল বাইরে থেকে লোক এনে আমাদের উপরে হামলা চালাচ্ছে।”