গরমে নাকাল দার্জিলিঙের বাসিন্দারা। শুক্রবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় আচমকা বদলে গেল দার্জিলিঙের চেনা ছবি। শুক্রবার সকাল থেকে বিকেল অবধি তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছিল দার্জিলিং পাহাড়। এ দিন দার্জিলিঙের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছয় ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোলের শিক্ষক রঞ্জন রায়ের মতে, কয়েক দশকের মধ্যে জুলাই মাসে দার্জিলিঙে এমন গরম পড়েনি। গরম হাওয়ায় দিনভর নাকাল ছিল পাহাড়।
বর্ষায় কেন এমন প্রতিকূল আবহাওয়া? রঞ্জনবাবুর মতে, ‘‘মৌসুমি বায়ুর অক্ষরেখা দুর্বল হয়ে পড়েছে। নিম্নচাপও তেমন ঘনীভূত হচ্ছে না। দেদার গাছ কাটা হচ্ছে পাহাড় ও পাহাড়-লাগোয়া সমতলে। যত্রতত্র জল-জঙ্গল বুজিয়ে আবাসন মাথা তুলছে। উত্তরোত্তর বাড়ছে গ্লোবাল ওয়ার্মিং। এসব কারণেই পাহাড়ের চেনা ছবি বদলে যাচ্ছে!’’
হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটের কিউরেটর চন্দ্রনাথ দাস এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দার্জিলিঙের বাসিন্দা। তাঁর কথায়, ‘‘শিলিগুড়ি যাব বলে সকালে বেরোলাম। কোয়ার্টার থেকে অফিসের গেট অবধি পৌঁছতেই ঘেমে-নেয়ে গেলাম! বিকেলে পাহাড়ে ফিরে এসে দেখি, একই গরম! দার্জিলিংকে দার্জিলিং বলে মনেই হচ্ছে না!’’
এদিন গরমে অবস্থা এমন হয়ে ওঠে যে, দার্জিলিঙের হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী মণীশ প্রধান বা বিরাজ অগ্রবালের মতো অনেকে ওয়ারকুলার এবং ফ্যানের বরাত দিতে শিলিগুড়িতে যোগাযোগ করেন। হার্ডওয়ার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা প্রদ্যুম্ন সিংহ চহ্বাণ বলেন, ‘‘সিলিং ফ্যান, টেবিল ফ্যান বা এয়ারকুলারই শুধু নয়, এসির দরদামও করেছেন দার্জিলিং, কালিম্পঙের বহু দোকানদার, হোটেল মালিক!’’
ম্যালে হকার থেকে ক্রেতা বা পর্যটক— সকলকেই এদিন ঘামতে দেখা গিয়েছে। পাহাড়ে সকালে যে রোদ মিঠে লাগে, সেই রোদকেই সহ্য করা যাচ্ছে না বলে জানালেন ষাটোর্ধ্ব বিবিকা ছেত্রী। তাঁর কথায়, ‘‘অন্যদিন চা খাই। আজ আইসক্রিম খেলাম!’’ ম্যালেই বসেছিলেন অসমের ললিতা ডেকা, পরেশ ডেকা। জানালেন, দার্জিলিঙে এত গরম পড়বে, কল্পনাও করতে পারেননি।
বেশ কয়েক বছর ধরেই পালটে যাচ্ছে দার্জিলিঙের আবহাওয়া। এখন মোটের উপর প্রতি বছরই অল্পবিস্তর গরম সহ্য করতে হয় বাসিন্দাদের। তবে, এ বারের তাপমাত্রা মাত্রা ছাড়িয়েছে বলেই মনে করছেন পাহাড়বাসী।
এ দিন অবশ্য দুপুরবেলায় হালকা বৃষ্টি হওয়ার পরে খানিক স্বস্তি ফিরে এসেছে শৈল শহরে।