কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জগৎপ্রকাশ নড্ডা। —ফাইল ছবি।
একশো দিনের কাজ কিংবা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা ঘিরে কেন্দ্র-রাজ্য জটিলতা কবে মিটবে, তা স্পষ্ট নয়। এখনও নিশ্চিত নয় বন্ধ থাকা কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ফের চালু হওয়াও। কিন্তু গত প্রায় এক বছর আটকে থাকা জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের বরাদ্দ ছেড়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে অন্তত এ বার সবুজ সঙ্কেত দিল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, সম্প্রতি এ বিষয়ে ছাড়পত্র দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জগৎপ্রকাশ নড্ডা।
রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, যে ব্র্যান্ডিং, বিশেষত রং-বিধির কারণে বরাদ্দ আটকে ছিল, তাতে অনড় অবস্থান ধরে না-রাখার বার্তা দিয়েছে কেন্দ্র। স্বাস্থ্য মন্ত্রকে এ বার মন্ত্রী বদল হয়েছে। মনসুখ মাণ্ডবীয়ের পরিবর্তে নড্ডা। নতুন মন্ত্রী ছাড়পত্র দেওয়ায় প্রশ্ন, একশো দিনের কাজ বা আবাস প্রকল্পেও আগামী দিনে কি একই ছবি দেখা যাবে? কারণ, গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকেও এ বার গিরিরাজ সিংহের জায়গায় মন্ত্রী হয়েছেন শিবরাজ সিংহ চৌহান। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরের প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “এটা দয়ার দান নয়, দিতে হতই। এটা আমাদের প্রাপ্য অর্থ। জনস্বার্থ এবং পরিষেবা আগে। সেখানে রং কোনও বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। সেটা ওদেরও বোঝা প্রয়োজন।”
স্বাস্থ্য মিশনে ব্র্যান্ডিং না মানার অভিযোগ উঠেছিল রাজ্যের বিরুদ্ধে। বন্ধ ছিল প্রকল্পের টাকা। প্রশাসনিক সূত্র জানাচ্ছে, সারা দেশে ‘আয়ুষ্মান ভারত-হেল্থ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার’ চলছে। রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা তার বদলে ব্যবহার করছে ‘সুস্বাস্থ্য কেন্দ্র’ নামটি। তা ছাড়া, ওই কেন্দ্রগুলির জন্য হলুদ-গেরুয়া রং প্রস্তাব করেছিল কেন্দ্র। কিন্তু এ রাজ্যে তা ছিল নীল-সাদা। গত বছর নভেম্বর নাগাদ স্বাস্থ্য মিশনের অধিকর্তা লিখিত ভাবে রাজ্যকে জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় দল জেলায়-জেলায় ঘুরে প্রকল্পের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছে। কিন্তু রং-বিধি মানা হয়নি। এখন মনে করা হচ্ছে, বিধিকে ঘিরে সেই অনড় অবস্থান থেকে খানিকটা সরে আসছে কেন্দ্র।
উল্লেখ্য, স্বাস্থ্য কেন্দ্রের রং বদলের কেন্দ্রীয় নির্দেশ এবং স্বাস্থ্য পরিষেবার বরাদ্দ আটকে রাখা নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বরাদ্দের ৪০% অংশীদার হয়েও কেন কেন্দ্রের রং-বিধি মানতে হবে, প্রশ্ন তুলেছিলেন তা নিয়েও।
মন্ত্রক সূত্রের খবর, সাধারণত বছরে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকে এই প্রকল্পে। যার মধ্যে ৬০% বা ১৮০০ কোটি টাকা দেয় কেন্দ্র এবং বাকি ৪০% বা ১২০০ কোটি টাকা রাজ্য। গত বছরের ২৩ জুলাই শেষ বার বরাদ্দ পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। এ নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে দফায়-দফায় আলোচনাও হয় রাজ্যের। বকেয়া নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকের পরে তৈরি কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয় কমিটিও এ নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিল লোকসভা ভোটের আগে। কিন্তু পরিস্থিতি তখন বদলায়নি। এ বার সেই ছবি ফের বদলাবে, প্রশাসনিক মহলের আশা।
অভিজ্ঞ আমলাদের একাংশের দাবি, স্বাস্থ্য মিশনের বরাদ্দে মা-শিশুর স্বাস্থ্য এবং জনস্বাস্থ্য পরিষেবার প্রায় পুরো কাজটাই হয়। প্রায় ৬০ হাজার আশাকর্মীকে সাত-আট হাজার টাকা করে মাসিক ভাতাও দেওয়া হয় ওই তহবিল থেকে। এই আবহে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ ফের চালু হলে রাজ্যের ভাঁড়ারের পক্ষে তা স্বাভাবিকভাবেই স্বস্তির।