আমুল আদৌ বাংলায় নিজস্ব ডেয়ারি গড়বে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। প্রতীকী ছবি।
পশ্চিমবঙ্গে ডেয়ারি গড়তে পাঁচ বছর আগে আমুলকে ১৬.১৫ একর জমি দিয়েছিল রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগম। জমির দাম হিসেবে সাড়ে ২৯ কোটি টাকা মিটিয়ে দিয়েছে ওই সংস্থা। কিন্তু ধুলাগড়ি ফুডপার্কে সেই জমির মাত্র এক বিঘা দখল করে আছেন এক ব্যক্তি। পাঁচ বছরেও সরকার তাঁকে সরাতে পারেনি। তাই ঢাকঢোল পিটিয়ে আমুলের লগ্নির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হলেও সেখানে কাজ শুরু করতে পারছে না এই মুহূর্তে রাজ্যের সব চেয়ে বড় দুধ উৎপাদক সংস্থা। অবস্থা এমনই দাঁড়িয়েছে যে, আমুল আদৌ বাংলায় নিজস্ব ডেয়ারি গড়বে কি না, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
রাজ্যে আমুলের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক দীপক চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘‘আমি এ ব্যাপারে কথা বলার অধিকারী নই।’’ তবে সংস্থার সর্বোচ্চ স্তর থেকে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালের বিশ্ব বঙ্গ শিল্প সম্মেলনের মঞ্চ থেকে আমুলের ডেয়ারি গড়ার কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। এটা বাস্তব যে, পাঁচ বছরেও জমি থেকে দখলদারকে সরানো যায়নি। পাঁচ বছর অপেক্ষার পরে সংস্থার বিনিয়োগের অগ্রাধিকারও পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। তবে জমির জট ছাড়ানোর ব্যাপারে গুজরাতের সমবায় সংস্থাটি যে এখনও তৃণমূল সরকারের উপরে ভরসা রাখছে, সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন এক শীর্ষ কর্তা।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী অমিত মিত্রকে ফোন ও মেসেজ করা হয়েছিল। তিনি কিছু না-বললেও শিল্পোন্নয়ন নিগমের এক আধিকারিক নিজের পরিচয় গোপন রেখে বুধবার বলেন, ‘‘আমুলের সঙ্গে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। ওই জমিতে পাঁচিল দেওয়া ও জমি ভরাটের কাজ চলছে। জমিটির দখলদার মুখিয়া মল্লিক মারা গিয়েছেন। তাঁর পরিবারের ১১ জন দাবিদার। সেই জটই কাটছে না। দ্রুত মিটে যাবে বলেই আশা করছি। তবে বিকল্প জমিও খোঁজা হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: মিলল সায়, বিদেশ যাচ্ছেন মনোরঞ্জনা
শিল্প দফতরের খবর, ২০১৫-র শিল্প সম্মেলনে আমুলের বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেছিলেন অমিতবাবু। জমি দেওয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হয় ওই বছরের ৮ জানুয়ারি। সেই বছরের ফেব্রুয়ারিতে দখলের অনুমতি দেয় শিল্পোন্নয়ন নিগম। অগস্টে হয় চূড়ান্ত চুক্তি। সেই চুক্তি অনুযায়ী সাড়ে ২৯ কোটি টাকায় আমুল ১৬.১৫ একর জমি পেয়েছিল। প্রতিদিন ১০ লক্ষ লিটার দুধ তৈরির ডেয়ারি নির্মাণে ২২০ কোটি টাকা লগ্নি করার কথা জানিয়েছিল আমুল। পরে দুধের উৎপাদন প্রতিদিন ১৫ লক্ষ টন করার কথাও বলা হয় চুক্তিতে। সঙ্গে পনির, আইসক্রিম, দইয়ের নানা উপকরণ তৈরিরও প্রস্তাব ছিল। এখন রাজ্যে পাঁচটি স্থানে ফ্র্যাঞ্চাইজি দিয়ে দুধ ও দুধজাত পণ্য উৎপাদন করে আমুল। রোজ সাড়ে আট লক্ষ লিটার দুধ তৈরি করে তারা। ধুলাগড়িতেই প্রথম নিজস্ব ডেয়ারি গড়ার কথা ভেবেছে আমুল।
বাংলায় আমুল
• জয়রামবাটী, চণ্ডীতলা, ধনেখালি, সরিষা, শিলিগুড়িতে ফ্র্যাঞ্চাইজি মডেলে দুধ উৎপাদন করে।
• রাজ্যে রোজ ৮.৫ লক্ষ লিটার দুধ বিক্রি।
• রোজ গড়ে ১০০ টন দই, ১.৪ লিটার স্টেরিলাইজ়ড দুধ, ৩-৫ টন পনির বিক্রি। আইসক্রিম, মাখন, চিজ়ও বিক্রি হয়।
• আমুলের ৭০০০ কোটি টাকার ব্যবসার এক-তৃতীয়াংশ আসে বাংলা থেকে।
• ধুলাগড়িতে রোজ ১০ লক্ষ লিটার দুধ তৈরির নিজস্ব ডেয়ারির পরিকল্পনা আছে।
শিল্পোন্নয়ন নিগম সূত্রের খবর, আমুলের জমির মধ্যেই এক বিঘা জমি রয়েছে মুখিয়া মল্লিক এবং তার পরিবারের দখলে। তাঁরা কোনও ভাবেই জমি ছাড়তে রাজি নন। জট ছাড়াতে হাওড়ার জেলাশাসক কয়েক দফা চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত তাঁদের সরানো যায়নি। এর মধ্যেই প্রায় চার বছর কেটে গিয়েছে। শিল্পোন্নয়ন নিগম এ বার নিজেরাই ওই জট ছাড়াতে তৎপর হয়েছে। আমুলের এক প্রতিনিধি বলেন, ‘‘সরকার বলেছিল, আমরা যেন কাজ শুরু করে দিই। কিন্তু জমিতে দখলদার বসে থাকায় কাজে হাত দেওয়া হয়নি। বাংলায় বিনিয়োগ হবে কি না, সেই বিষয়ে বোর্ডে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।’’ আমুল বিহার ও অসমে দু’টি নতুন ডেয়ারির কথা ভাবছে বলে সংস্থা সূত্রের খবর।
কেন এক জন জবরদখলদারকে সরানো গেল না? শিল্পোন্নয়ন নিগমের এক কর্তা জানান, সরকার কাউকে জোর করে জমি থেকে তুলে দেওয়ার পক্ষপাতী নয়। সেই জন্যই সরানো যায়নি। ওই পরিবারের সঙ্গে ক্ষতিপূরণ বা অন্যত্র জমি দেওয়ার আলোচনা চলছে। আশা করা হচ্ছে, আমুলের জমির জট দ্রুত কেটে যাবে।