খাস নবান্নে চলছিল পনজি স্কিম।—ফাইল চিত্র।
সারদা-রোজভ্যালি কেলেঙ্কারির পরেও বহাল তবিয়তে পনজি স্কিম চলছিল এ রাজ্যে! যেখানে সেখানে নয়, খাস নবান্নে!
সূত্রের খবর এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে অভিযোগ জমা পড়ার পরে বন্ধ হয়েছে পনজি স্কিমের কারবার। তড়িঘড়ি নবান্ন থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দুই পুলিশ কর্মী-অফিসারকে।
কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের কর্মী উত্তম সামন্তের বিরুদ্ধে নবান্নে পনজি স্কিমটি চালানোর অভিযোগ ওঠে। বলা হয়, প্রথমে জনা ৩০ পুলিশ কর্মী নিয়ে স্কিম শুরু হলেও ক্রমে ক্রমে কয়েকশো কর্মী তাতে যোগ দেন। পুলিশ ও স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের কিছু অফিসার পর্যন্ত এই তহবিলে টাকা জমা করতেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁরা মাসে ৫০০ টাকা ৫-১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জমা রাখতেন বলে দাবি। শেষ পর্যন্ত এক লাখ টাকা জমালে মাসে ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত সুদ দেওয়া হচ্ছিল বলেও পুলিশ কর্মীদের একাংশ জানাচ্ছেন।
এহেন পনজি স্কিমের খবর মুখ্যমন্ত্রীর কানে পৌঁছতেই তিনি ক্ষুব্ধ হন বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। সচিবালয়ের ভিতরে পুলিশ কর্মীরা কী ভাবে এমন স্কিম চালাতে পারেন, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন তিনি। আর তার পরেই গত ডিসেম্বর থেকে টাকা জমা নেওয়া বন্ধ হয়ে যায়। অন্যত্র সরিয়ে দেওয়া হয়উত্তম এবং নবান্নের ‘বড়বাবু’ অর্নিবাণ নন্দকে। নবান্নের এক পুলিশ কর্তা একে ‘রুটিন বদলি’ আখ্যা দিলেও এর পিছনের মূল কারণ পনজি স্কিম বলেই অনেকের মত। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সরকার আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবছে বলেও জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন: রাজীবের বিরুদ্ধে প্রমাণ চাইল সুপ্রিম কোর্ট
এ দিকে, উত্তমকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দিতে শুরু করেছেন আমানতকারীরা। উত্তম বলেন, ‘‘তিন মাস ধরে টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছি। আরও আড়াই লক্ষ টাকা ফেরাতে হবে।’’ তিনি জানান, মেচেদা, কোলাঘাটে পান, ফুল আর মাছের আড়তে জমা পড়া টাকা খাটানো হত। তার থেকে যে ‘রিটার্ন’ আসত, তা আমানতকারীদের ফিরিয়ে দেওয়া হত। উত্তমের দাবি, ‘‘২০১৮-এর অগস্ট থেকে স্কিমটি চালাতাম। এর আগে যিনি চালাতেন, তিনি অবসর নেওয়ায় আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। গরিবের ছেলে বুঝতে পারিনি এ ভাবে মুশকিলে পড়ে যাব। সে সময় সহকর্মীরাই স্কিমটি চালাতে বলেছিলেন।’’ অনির্বাণবাবু অবশ্য এ নিয়ে মন্তব্য করেননি।
আরও পড়ুন: অ্যান্টি-ন্যাশনাল মানেই দোষের নয়: অমর্ত্য সেন
নবান্নের পনজি স্কিম বন্ধ হলেও নব মহাকরণ, ভবানী ভবন, স্পেশ্যাল ব্রাঞ্চের মতো অনেক জায়গাতেই এই কারবার চলছে বলে পুলিশের একাংশের দাবি। এক শীর্ষ পুলিশ কর্তার মন্তব্য, ‘‘নবান্নের বিষয়টি সামনে আসায় বন্ধ করা হয়েছে। অন্য কোথাও এমন খবর পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’