বেড়াতে গিয়ে খুন বাঙালি তরুণ-তরুণী

দমদমের ইটালগাছার বাড়িতে পাল পরিবারের একমাত্র ছেলের ফোন শেষ বার এসেছিল সেই ২২ অক্টোবর রাতে। ছেলে মাকে বলেছিলেন, পরের দিন কথা হবে। কিন্তু আর ফোন আসেনি। মঙ্গলবার বিকেলে মা যখন এ কথা বলছেন, তত ক্ষণে গোটা এলাকা জেনে গিয়েছে, ওই বাড়ির দিল্লিপ্রবাসী ছেলে আর কখনও পাড়ায় ফিরবেন না। দীপাবলির ছুটিতে হবু স্ত্রী-র সঙ্গে দেহরাদূন বেড়াতে গিয়ে ট্যাক্সিচালক ও তার তিন সঙ্গীর হাতে খুন হয়েছেন তিনি।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:১৪
Share:

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অভিজিৎ পালের মা। নিজস্ব চিত্র

দমদমের ইটালগাছার বাড়িতে পাল পরিবারের একমাত্র ছেলের ফোন শেষ বার এসেছিল সেই ২২ অক্টোবর রাতে। ছেলে মাকে বলেছিলেন, পরের দিন কথা হবে। কিন্তু আর ফোন আসেনি। মঙ্গলবার বিকেলে মা যখন এ কথা বলছেন, তত ক্ষণে গোটা এলাকা জেনে গিয়েছে, ওই বাড়ির দিল্লিপ্রবাসী ছেলে আর কখনও পাড়ায় ফিরবেন না। দীপাবলির ছুটিতে হবু স্ত্রী-র সঙ্গে দেহরাদূন বেড়াতে গিয়ে ট্যাক্সিচালক ও তার তিন সঙ্গীর হাতে খুন হয়েছেন তিনি। আদতে কল্যাণীর বাসিন্দা তাঁর বাঙালি বান্ধবীকে নিযার্তন করার পরে খুন করেছে দুষ্কৃতীরা। ঘটনার দিন কয়েক পরে তরুণের দেহ একটি খাদ থেকে উদ্ধার হলেও তা বাড়ির লোকের হাতে না-দিয়ে পুড়িয়ে ফেলেছে স্থানীয় পুলিশ। তরুণীর দেহ এখনও মেলেনি।

Advertisement

এই খুনের ঘটনায় ট্যাক্সিচালক রাজু দাসকে আগেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। মঙ্গলবার গ্রেফতার হয়েছে তার সঙ্গী আরও তিন জন। ধৃতরা খুনের কথা স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে উত্তরাখণ্ড পুলিশ।

বুধবার ছেলের কথা বলতে গিয়ে বারেবারেই ডুকরে উঠছিলেন সন্ধ্যা পাল। তিনি বলেন, “২২ তারিখ রাতে ফোন করল। বলল ঘুমোতে যাচ্ছি। কাল কথা হবে। সেই কাল আর এল না।”

Advertisement

কল্যাণীর দাস পরিবারের একমাত্র মেয়েটিও বাড়িতে শেষ বার ফোন করেছিলেন ২৩ অক্টোবর। মঙ্গলবার দেহরাদূনে থাকা আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাড়ির লোকজন জেনেছেন, একটি নদীর ধারে মিলেছে দুই মহিলার দেহ। তাদেরই এক জন কি বাড়ির মেয়েটা? এখন ফোনের অপেক্ষায় বসে সকলে।

আর্ট কলেজে পড়ার সময়েই রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরতা কল্যাণীর বাসিন্দা মৌমিতার সঙ্গে আলাপ হয় দমদমের অভিজিতের। পরবর্তী কালে তরুণীটি গুড়গাঁওয়ে একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার কাজ পেয়ে চলে যান। কাজ খুঁজতে সেখানে যান তরুণও। দু’জনেই দক্ষিণ দিল্লির একটি ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। দীপাবলির ছুটি কাটাতে ২১ অক্টোবর দিল্লি থেকেই দেহরাদুনে যান তাঁরা। ২৩ তারিখ একটি জিপ ভাড়া করে রওনা দেন উত্তরকাশীর উদ্দেশে। আর ওই জিপ-ই কাল হল।

ওঁদের বন্ধুরা জানাচ্ছেন, ২৩ অক্টোবর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পরে তাঁরা মনে করেছিলেন পাহাড়ে হয়তো মোবাইলের টাওয়ার পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু টানা বেশ কয়েক দিন খবর না-আসায় সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। ২৮ অক্টোবর দমদম থানায় এবং পরের দিন দিল্লির সাকেত থানায় মিসিং ডায়েরি করা হয়। তার ভিত্তিতে দিল্লি পুলিশ যোগাযোগ করে দেহরাদূন পুলিশের সঙ্গে। এক বন্ধুর অভিযোগ, “দেহরাদূন পুলিশ বরাবরই আমাদের সঙ্গে অসহযোগিতা করেছে। কোনও তথ্যই তারা দেয়নি।”

দিল্লি পুলিশ সূত্রে খবর, ওই তরুণের মোবাইলের কললিস্ট থেকে দেহরাদূনের গাড়ি চালক রাজু দাসের নম্বর মেলে। খবর পেয়ে দেহরাদূনের পুলিশ রাজুকে ধরে। গোড়ায় সে দাবি করে, এ রকম কাউকে সে চেনেই না। পরে আবার বলে, ফোনে কথা হলেও ওই তরুণ-তরুণীকে সে কোথাও নিয়ে যায়নি। এর পর রাজুকে ছেড়ে দেয় দেহরাদূনের পুলিশ।

দিল্লি পুলিশ কিন্তু হাল ছাড়েনি। তরুণটির মোবাইলের আইএমইআই নম্বর ধরে তারা খোঁজ শুরু করে। দেখা যায়, রাজুই সিম বদলে বদলে ওই মোবাইলটি ব্যবহার করছে। সেই খবর পেয়ে রাজুকে ফের ধরে দেহরাদূন পুলিশ। দিল্লি পুলিশ সূত্রের খবর, ১০ নভেম্বর অবশেষে রাজু স্বীকার করে, সে ওই তরুণ-তরুণীকে উত্তরকাশী নিয়ে যাচ্ছিল। পথে গুড্ডু, কুন্দন দাস এবং বাবলু নামে তিন বন্ধুকে গাড়িতে তোলে। তরুণী-তরুণী প্রথমে আপত্তি করলেও রাজু জানায়, ওরা তার বন্ধু। কাছের একটি গ্রামেই নেমে যাবে।

দিল্লি পুলিশের থেকে অভিজিতের বন্ধুরা জেনেছেন, রাজু জেরায় বলেছে, উত্তরকাশী থেকে কিছুটা দূরে এক অপেক্ষাকৃত নির্জন জায়গায় তারা চার জনে মিলে তরুণ-তরুণীকে গাড়ি থেকে নামায়। প্রথমে তরুণকে গাছের সঙ্গে বাঁধা হয়। তাঁর সামনেই তরুণীর উপর নির্যাতন চালানো হয়। পরে ওই তরুণের গলায় ফাঁস দিয়ে তাঁকে মেরে ১০০ ফুট নীচে খাদে ফেলে দেয়। তরুণীকে অন্য একটি জায়গায় নিয়ে গিয়ে ফের নির্যাতন চালানো হয়। এবং খুন করে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার কয়েক দিন পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তরুণের দেহ খাদ থেকে উদ্ধার করে। তিন দিন পরে পুলিশ তরুণের দেহ পুড়িয়ে ফেলে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement