প্রতীকী ছবি।
জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ডের শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে অমৃতসর যাওয়ার পরে পঞ্জাবের ভাতিন্ডা থেকে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন শহরের এক চিকিৎসক-সহ দুই মানবাধিকার কর্মী। পরে জানা যায়, মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে, এমন ‘গোয়েন্দা-তথ্যে’র ভিত্তিতে তাঁদের গ্রেফতার করেছে পঞ্জাব পুলিশ। দু’সপ্তাহ পরে গত শুক্রবার ভাতিন্ডা সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট (এসডিএম) আদালতের রায়ে মুক্তি পেয়েছেন দমদমের নাগেরবাজারের বাসিন্দা চিকিৎসক সুরেশ বাইন এবং বহরমপুরের বাসিন্দা এপিডিআর-এর কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রাহুল চক্রবর্তী।
এই ঘটনায় সুর চড়িয়েছে দুই রাজ্যের মানবাধিকার আন্দোলনের কর্মীরা। পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী এবং জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে কাছে অভিযোগ দায়ের করেছে দুই রাজ্যের কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন।
২০১২ সালে কোল ইন্ডিয়ার চিফ মেডিক্যাল অফিসার পদ থেকে অবসর নেন সুরেশবাবু। রবিবার পঞ্জাব থেকে এক বন্ধুর মোবাইল ফোনে তিনি আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘জালিয়ানওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ডের শতবর্ষ উপলক্ষে অমৃতসরে যাওয়ার কথা ছিল। গত ২৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে ভাতিন্ডা স্টেশনে ট্রেন থেকে নামার পরে লাজপত রাই নামে এক মানবাধিকার রক্ষা সংগঠনের কর্মীর গাড়িতে উঠেছিলাম।’’ তাঁর অভিযোগ, ‘‘হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে কয়েকজন আমাদের চোখে কাপড় বেঁধে একটি গাড়িতে তুলে নেয়। প্রথমে ভেবেছিলাম অপহরণ করা হয়েছে। আমাদের চণ্ডীগড়ে একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর জানানো হয়, পুলিশের সন্ত্রাসদমন শাখা আমাদের তুলে এনেছে।’’
রাহুলবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমরা কোথায় রয়েছি, তা কেউ জানতে পারেনি। রাতভর জেরায় আমাদের মুখ থেকে বলিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হয়, আমরা মাওবাদী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। পরের দিন কোতোয়ালি থানায় নিয়ে যাওয়া হয় আমাদের।’’ ওই দিনই ভাতিন্ডার এসডিএম আদালত তাঁদের ব্যক্তিগত বন্ডে তিন দিনের জামিন দেন। তাঁদের ফোন, ডেবিট কার্ড-সহ সমস্ত নথি পুলিশ নিয়ে নেয়। তিন দিন পরে আদালতে হাজিরা দিলে জামিনের মেয়াদ কয়েক দিন বাড়ানো হয়। শুক্রবার তাঁদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহার করে পুলিশ।
কোতোয়ালি থানার আধিকারিক গুরমিত সিং বলেন, ‘‘ওঁদের সঙ্গে মাওবাদীদের যোগাযোগ রয়েছে, বলে গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিল। তার ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয়েছিল। আদালত ওঁদের মুক্তি দিয়েছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘বিশেষ কারণে ওঁদের মোবাইল ফোন রেখে দেওয়া হয়েছে। দ্রুত সেগুলি ফেরত দেওয়া হবে।’’
সুরেশবাবু বলেন, ‘‘আমার স্ত্রী অসুস্থ। আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই সব ঘটনা যখন চলছে, তখন আমার সম্পর্কে তথ্য জানতে আমার বাড়ি গিয়েছিল পুলিশ। ফলে স্ত্রীর উদ্বেগ আরও বেড়ে গিয়েছে।’’