ক্ষুব্ধ: কারখানার ভিতরে পাথর ছুড়ছেন শ্রমিকেরা। —নিজস্ব চিত্র।
প্রতিদিন ৬ টাকা করে মজুরি বাড়ানোর দাবি শ্রমিকদের। কিন্তু মানতে চাইছেন না মালিক-পক্ষ।
এই টানাপড়েনে দু’দিন ধরে অচলাবস্থা চলছিল রিষড়ার জয়শ্রী টেক্সটাইলসে। কাজ বন্ধ রেখে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন শ্রমিকেরা। বৃহস্পতিবার সেই বিক্ষোভ গড়াল অশান্তিতে। রেললাইনের পাথর নিয়ে শ্রমিক-পুলিশ খণ্ডযুদ্ধ, ইটের ঘায়ে কারখানার প্রশাসনিক ম্যানেজার রাকেশ পাণ্ডের মাথা ফাটা, নিরাপত্তারক্ষীদের ঘর ভাঙচুর— কিছুই বাদ গেল না। গোলমালে দুই পুলিশকর্মী এবং কয়েক জন শ্রমিক আহত হন। কারখানার ভিতর থেকে শূন্যে গুলিও চালানো হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি।
গোলমালের সব দায় কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিক ও সমাজবিরোধীদের উপরে চাপিয়েছেন। তাঁদের তরফে লিখিত বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, প্রচুর শ্রমিক এবং কিছু সমাজবিরোধী চেকপোস্ট গেটের সামনে জড়ো হয়েছিল। তারা কারখানার কিছু অফিসার এবং ম্যানেজমেন্ট স্টাফদের ঢুকতে বাধা দেয়। এক কর্তা সাফ জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না-হলে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নই নেই। পক্ষান্তরে, গৌরব গোস্বামী নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘‘দেড়শো টাকা রোজ পাই। দিনে মাত্র ৬ টাকা বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করছি। কর্তৃপক্ষ মুনাফা করলেও শ্রমিকদের হকের পাওনাটুকু দিচ্ছেন না।’’ সন্তোষ ঝা এবং দীপু ওঝা নামে আরও দুই শ্রমিক বলেন, ‘‘ইচ্ছাকৃত ভাবে কর্তৃপক্ষ অশান্তির পরিবেশ তৈরি করলেন। শূন্যে গুলি চালানো হল। শ্রমিকরা কি সমাজবিরোধী?’’
আরও পড়ুন:ধূপঝোরা তোলপাড়
পুলিশ গুলি চালায়নি দাবি করে পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘দু’জন পুলিশকর্মী সামান্য আহত হয়েছেন। কারখানার নিরাপত্তারক্ষীদের বিরুদ্ধে শূন্যে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠলেও প্রমাণ মেলেনি। শ্রমিকদের বিরুদ্ধে শ্রীরামপুর থানায় অভিযোগ হয়েছে।’’
রিষড়া স্টেশন লাগোয়া আদিত্য বিড়লা গোষ্ঠীর পোশাক তৈরির ওই কারখানায় প্রায় চার হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের দাবি, চুক্তি অনুযায়ী গত জানুয়ারি মাস থেকে তাঁদের দৈনিক মজুরি ৬ টাকা করে বাড়ানোর কথা ছিল। কিন্তু পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও ওই টাকা কর্তৃপক্ষ বাড়াচ্ছেন না। বর্ধিত টাকার জন্য শ্রমিকদের দ্বিগুণ কাজ করতে হবে, এমন নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এমন কোনও চুক্তির কথা কর্তৃপক্ষ আগেই নস্যাৎ করেছিলেন। এর মধ্যে কর্তৃপক্ষ ২০ জন শ্রমিককে সাসপেন্ড করেছেন, বৃহস্পতিবার এ কথা জানতে পেরেই আগুনে ঘি পড়ে।
কয়েকশো শ্রমিক এ দিন সকালে কারখানার মূল গেটের সামনে জড়ো হয়ে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন। ১০টা নাগাদ রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় নামে কারখানার অন্যতম শীর্ষকর্তা ঢুকতে গেলে শ্রমিকেরা তাঁর গাড়ি উল্টে ফেলার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। পুলিশ রঞ্জনবাবুকে উদ্ধার করে। এর পরে শ্রমিকেরা রেললাইনের পাথর তুলে কারখানার দিকে ছুড়তে থাকেন। পুলিশকেও পাল্টা পাথর ছুড়তে দেখা যায়। কারখানার ভিতর থেকেও শ্রমিকদের দিকে পাথর ছোড়া হয়। র্যাফ ও বাহিনী নিয়ে গিয়ে পুলিশকর্তারা পরিস্থিতি সামলান।