প্রতীকী ছবি।
একদা সিপিএমের ‘লাল দুর্গ’ খেজুরিতে তৃণমূলের আধিপত্য বিস্তার হয়েছিল ২০১১ সালে রাজ্যে রাজনৈতিক পালাবদলের পর।
২০০৭ সালে নন্দীগ্রামে জমি রক্ষা আন্দোলনের সময়ে পাশের এলাকা খেজুরি ছিল সিপিএমের দুর্ভেদ্য গড়। কিন্তু সেই গড়ের পতন শুরু হয় ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের জয়ে। রাজ্যে পালাবদলের পর খেজুরি পরিণত হয় তৃণমূলের দুর্গে। তালা পড়ে সিপিএমের অধিকাংশ পার্টি অফিসে। ক্রমশ পঞ্চায়েত, বিধানসভায় নিরঙ্কুশভাবে জেতা তৃণমূলের একচেটিয়া আধিপত্য চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গত বছর লোকসভা নির্বাচনের মুখে। খেজুরি বিধানসভার মধ্যে থাকা খেজুরি-১ ও ২ ব্লক ও ভগবানপুর-২ ব্লকের গড়বাড়ি-১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকায় মাথা তোলে পদ্ম। তার জেরে খেজুরি-২ ব্লকের বীরবন্দর ও খেজুরি-১ ব্লকের আলাইচক প্রভৃতি এলাকায় রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের সাথে সংঘাত বাধে গেরুয়া শিবিরের। লোকসভা ভোটের দিন কয়েক আগে প্রচারের সময় খেজুরির তৃণমূল বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডলের গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে বিজেপি সমর্থকদের বিরুদ্ধে। সেদিনই আবার খেজুরিতে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের কনভয়ে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ ওঠে।
তৃণমূল-বিজেপির এই সংঘাতের আবহে লোকসভা ভোটে কাঁথির তৃণমূল প্রার্থী শিশির অধিকারী জিতে যান। তবে আগের লোকসভা ভোটের তুলনায় তাঁর জয়ের ব্যবধান কমেছে। সিপিএমকে পিছনে ফেলে পূর্ব মেদিনীপুরে তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি। লোকসভা ভোটের ফলে খেজুরি বিধানসভা এলাকায় বিজেপির বাড়বাড়ন্ত প্রকাশ্যে আসে। যার পিছনে খেজুরিতে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল রয়েছে বলেই মতরাজনৈতির মহলের। যদিও এই তত্ত্ব উড়িয়ে জেলা ও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, সিপিএমের ভোট বিজেপিতে যাওয়ার কারণেই বিজেপির এই ভোট বৃদ্ধি। আর সাম্প্রতিক কালে নন্দীগ্রাম, খেজুরি, ভগবানপুরে রাজনৈতিক সংঘর্ষ নিয়ে তৃণমূলের দাবি, সিপিএমের লোকজন বিজেপিতে গিয়ে এলাকায় ফের সন্ত্রাসের আবহ তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে। গোলমালে উত্তপ্ত ভগবানপুর বিধানসভা এলাকার ভগবানপুর- ২ ব্লকের মুগেবড়িয়া, জুখিয়া, বোরজ, অর্জুননগর ও পটাশপুর-২ ব্লকের আড়গোয়াল, মথুরা এলাকা।
লোকসভা ভোটে রাজ্যে ১৮টি আসন পেয়ে জেলায় সংগঠন বাড়াতে তৎপর গেরুয়া শিবির। কিন্তু সম্প্রতি খড়গপুর-সহ তিনটি বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের বিপুল জয়ে জেলায় কিছুটা কোণঠাসা বিজেপি। তার উপর জেলায় বিভিন্ন গোলমাল এবং পাঁশকুড়া ও ময়নার বাকচায় দুই তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় স্থানীয় বিজেপি নেতা-সহ বেশ কিছু বিজেপি কর্মী পুলিশের জালে। এ ছাড়া বেশ কিছু কর্মীর খোঁজে আদালতের নির্দেশে হুলিয়াও জারি হয়েছে। ফলে জেলায় বিজেপি নেতা-কর্মীরা কিছুটা কোণঠাসা। আর এরই সুযোগ নিয়ে খেজুরি, ভগবানপুর বিধানসভার যে সব এলাকায় তৃণমূল কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছিল, সেখানে ফের সাংগঠনিকশক্তি পুনরুদ্ধারে ঝাঁপিয়েছে তারা। বিজেপির অভিযোগ, পুলিশ-প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে শাসক দল এলাকা দখলে নেমেছে। আর তাতেই খেজুরির বীরবন্দর, আলাইচক ও ভগবানপুর-২ ব্লকের মুগেবড়িয়া ও জুখিয়া প্রভৃতি এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।
বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অনুপ চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘লোকসভা ভোটে আমাদের সমর্থন বাড়ার পরেই খেজুরি, ভগবানপুর, পটাশপুর-সহ বিভিন্ন জায়গায় আমাদের কর্মী-সমর্থকদের মারধর ও বাড়ি ভাঙচুর করা হচ্ছে। নানা অভিযোগ এনে দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রায় ২০০টি মামলায় আড়াই হাজার জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অন্তত ৪০ জন কর্মী-সমর্থক ঘরছাড়া।’’ খেজুরির তৃণমূল বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডলের অবশ্য দাবি, ‘‘বিজেপির লোকজনই গোলমাল করছে। তবে বিজেপি ভুল বুঝিয়ে এবং প্রলোভন দিয়ে যাদের নিয়ে গিয়েছিল তারা আমাদের দিকে ফিরে আসছে। বিজেপির লোকজনের উপর আক্রমণের অভিযোগ ভিত্তিহীন।’’